১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রোহিঙ্গাদের জন্য আরো তহবিল সংগ্রহে আইওএমের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

রোহিঙ্গাদের জন্য আরো তহবিল সংগ্রহে আইওএমের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন উৎস থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য আরো তহবিল সংগ্রহের জন্য আইওএমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যেহেতু (বাংলাদেশে) মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে গেছে, আইওএমের উচিত এই উদ্দেশ্যে আরো তহবিল সংগ্রহের জন্য নতুন অংশীদারদের খুঁজে বের করা।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গতকাল সকালে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থ্যার (আইওএম) মহাপরিচালক (ডিজি) অ্যামি পোপ তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো: নজরুল ইসলাম শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করতে আইওএমকে সহায়তা করার জন্যও বলেছেন। কারণ এখানে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা এবং কর্মসংস্থানসহ সমস্ত সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরে এ পর্যন্ত ৩০-৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। বৈঠকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আইওএম মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল ও উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত রয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন এখন তাদের এলাকায় সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। অ্যামি পোপ স্বাগতিক দেশের চাহিদা অনুযায়ী তাদের দক্ষতা বাড়াতে ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর অভিবাসীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়ার ওপর জোর দেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার অন্য দেশের কাউকে বোঝার জন্য পেশা ও ভাষার ওপর যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, দক্ষ জনসংখ্যা তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তারা সারা দেশে ১১২টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, অভিবাসন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন, কিন্তু দারিদ্র্য কমলে অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। সরকার প্রধান বলেন, তার সরকার অভিবাসীদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে, যার মধ্যে কোনো জামানত ছাড়াই ঋণ দেয়া রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আয়োজক ও উৎস দেশ উভয়েরই অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, যেহেতু তারা উভয় দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অভ্যন্তরীণভাবেও মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি এবং নদীভাঙন, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার কক্সবাজারের খুরুশকুলে ৪ হাজারের বেশি জলবায়ু উদ্বাস্তুকে বাড়ি দিয়েছে। তিনি বলেন, তার সরকার জলবায়ু সহিষ্ণু বাড়ি এবং বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য ভাসমান বাড়ি নির্মাণ করছে এবং গৃহহীনদের মধ্যে বিনামূল্যে বাড়ি দিয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।

উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে দেশের অর্থনীতি কতটা চাঙ্গা হবে এবং স্থানীয়রা কতটা উপকৃত হবে তা বিবেচনায় নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রথমে ভাবতে হবে ফলাফল কি হবে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে একটি প্রকল্প নেয়ার পরে জনগণ কতটা উপকৃত হবে। আমাদের দেশের উন্নয়ন এমনভাবে করতে হবে যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে এবং অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ বিনির্মাণে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কার্যক্রমের রূপরেখা সংক্রান্ত উপস্থাপনা অবলোকনকালে এ কথা বলেন।
রূপরেখা প্রত্যক্ষ করার পর, প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে এবং প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব কে এম সাখাওয়াত মুন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের কতটা উন্নয়ন হবে এবং মানুষ কতটা উপকৃত হবে তা আপনাদেরকে বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, দ্রুত কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বলে দেশবাসী এর সুফল পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা একটি লক্ষ্য নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তার সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার ছিল জনগণের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, গবেষণার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমরা সফলভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। তিনি বলেন, তার সরকার রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিল এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভের মধ্যদিয়ে সফলভাবে তা বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে রূপান্তর করা। আমরা সেই রূপকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।
এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

সঙ্কট সামাল দিতে শক্ত নেতৃত্ব প্রয়োজন : প্রধানমন্ত্রী
ভবিষ্যতে যেকোনো মহামারি পরিস্থিতি কার্যকরভাবে সামাল দেয়ার জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা এবং তাদের প্রতিশ্রুতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার গণভবন থেকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্যানেল ফর প্যান্ডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস এবং রেসপন্সের কো-চেয়ারম্যান ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কের সাথে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। জাগো নিউজ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্ধতিগত পরিবর্তনের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা এবং প্রতিশ্রুতি একান্তভাবে প্রয়োজন, যা ভবিষ্যতে মহামারি প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ এবং কার্যকরভাবে সামাল দেয়ার সক্ষমতা বাড়াতে পারে। তিনি বলেন, মহামারি প্রস্তুতি এবং পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্পর্কিত সংস্কারের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বৈশ্বিক সহযোগিতার ঐক্য তৈরি করে, জনস্বাস্থ্যে আস্থা স্থাপন এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবন বাঁচায়। শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যৎ মহামারির জটিলতাগুলো সঠিকভাবে সামাল দিয়ে আরো স্থিতিস্থাপক এবং উপযোগী বিশ্বের জন্য শক্তিশালী ও দৃঢ় নেতৃত্ব প্রয়োজন হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, জরাজীর্ণ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং আর্থিক সক্ষমতা শক্তিশালী করতে আমাদের অবশ্যই সম্মিলিত রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement