বেড়েছে সুদ ও ব্যবসাব্যয়
চাপে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ- আশরাফুল ইসলাম
- ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৮
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দুই বছরে বাকিতে পণ্য আমদানির সুযোগ দেয়া হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। এমনকি এলসি ডেফার্ড করারও সুযোগ দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা শিথিলের এ সুযোগে অনেকেই আত্মতৃপ্তিতে ছিলেন। কিন্তু বকেয়া আমদানির সুযোগই এখন কাল হয়েছে সুযোগ ভোগ করা ব্যবসায়ীদের। যখন এ সুযোগ দেয়া হয় তখন প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৮৫ টাকা। আর আজকে তা পরিশোধ করতে হচ্ছে ১২৫ টাকা মূল্যে। অর্থাৎ প্রতি ডলারে বাড়তি পরিশোধ করতে হচ্ছে ৪০ টাকা যা শতকরা হিসেবে প্রায় ৫০ শতাংশ। ডেফার্ড এলসির দায় পরিশোধে অনেকেরই এখন নাজেহাল অবস্থা। অনেকেই বাড়তি মূল্যে ডলার কিনে পরিশোধ করতে পারছেন না। শুধু ব্যবসায়ীদেরও ব্যয় বাড়েনি, বেড়েছে সুদ পরিশোধেরও ব্যয়। এতে চাপে পড়ে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। আইএমএফের শর্ত মোতাবেক রিজার্ভ সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। এখন এটা কমাতে দরকষাকষি করতে হচ্ছে সরকারকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দুই বছরে ব্যবসায়ীদের চাপে আমদানি দায় ও বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ছাড় দেয়া হয়েছিল। ছয় মাস করে বাড়াতে বাড়াতে দুই বছর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। অথচ ওই সময়ে অনেক ব্যবসায়ীই ভালো ব্যবসা করেছিলেন। বিশেষ করে ওষুধ শিল্পসহ বেশ কয়েকটি খাতে ভালো ব্যবসা হয়েছিল। কিন্তু ঢালাওভাবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ছাড় দেয়া হয়। এতে একদিকে পুঞ্জীভূত বৈদেশিক ঋণ বেড়ে যায়। অপরদিকে বেড়ে যায় বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারজনিত ক্ষতি। বাকিতে পণ্য আমদানির ব্যয় ও বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের ব্যয় পরিশোধ করতে হয় বৈদেশিক মুদ্রায়। স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে ডলার কিনে তা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২০ সালে প্রতি ডলার পেতে ব্যয় করতে হতো সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা। এতে ১০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে স্থানীয় মুদ্রা ব্যয় করতে হতো সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ডলার সঙ্কট বেড়ে যাওয়ায় ডলারের দাম বাড়তে বাড়তে এখন তা ১২৫ টাকা ক্ষেত্রবিশেষ তা আরো ব্যয় করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। আর ওই ১০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে এখন ব্যয় করতে হচ্ছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে আগে যেখানে ১০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো, এখন একই পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে ৪ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালে বকেয়া এলসির পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু যদিও ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলেছিল সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। সোনালী ব্যাংকের এমনও এলসি ছিল যা ২৫ বার পর্যন্ত ডেফার্ড করা হয়েছিল। একদিকে বকেয়া এলসির পরিমাণ বেড়ে যায়, অপর দিকে চলতি এলসির দায় পরিশোধ করতে হয়। সবমিলেই চাপে পড়ে যায় বৈদেশিক মুদ্রা। আর বাড়তি বৈদেশিক দেনা পরিশোধ করতে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স দিয়ে কুলানো যায়নি। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোকে টাকার বিপরীতে ডলার সরবরাহ করতে হয়। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজদু গত চার বছরের ব্যবধানে প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। মোট বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ এক সময় ৪৮ বিলিয়ন ডলার উঠেছিল। এখন তা কমে ২৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। যদিও আইএমএফের হিসেবে তা ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে।
বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পণ্য আমদানিতে এলসি খুলতে কড়াকড়ি করা হয়। বলা হয় শতভাগ মার্জিন দিয়েই এলসি খুলতে হবে। বিলাসজাত পণ্য আমদানি করা যাবে না। এভাবে এক সময় প্রতি মাসে পণ্য আমদানিতে যেখানে ব্যয় হতো প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার, এখন তা সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে। ব্যাংকগুলোও এলসি খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না। শুধু সরকারি বিশেষ কেনাকাটার ব্যয় পরিশোধে সরকারি ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সামান্য সহযোগিতা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঢালাওভাবে বৈদেশিক মুদ্রার দেনা পরিশোধে বকেয়া রাখার সুযোগ দেয়া না হলে একদিকে পুঞ্জীভূত বৈদেশিক ঋণ বাড়তো না, অপরদিকে মুদ্রার বিনিময় হারজনিত ক্ষতিও বাড়তো না। এখন অনেক ব্যবসায়ীই ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না।
বৈদেশিক মুদ্রার দেনা বেড়ে যাওয়ায় সুদ পরিশোধেও চাপ বেড়ে গেছে। অপরদিকে, খেলাপি ঋণ ও ঋণখেলাপির সংখ্যা দুটোই বেড়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে- ডেফার্ড এলসির (পণ্য আমদানিতে বাকিতে ঋণপত্র) টাকা ব্যবসায়ীরা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা