১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
রাজপথে মৃত্যুর হানা

ঈদের ছুটিতে সড়কে নিহত ২৫

-


ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, নোয়াখালী সদর, বেগমগঞ্জ, হাতিয়া, কবির হাট, নড়াইল, ঝালকাঠির কাঠালিয়া, সিলেট এবং চট্টগ্রামের পটিয়া ও সীতাকুণ্ডে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় ৫ মোটারসাইকেল আরোহীসহ আরো প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর গত ৯ এপ্রিল থেকে গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। ময়মনসিংহ-মুক্তাগাছা সড়কের ল্যাংড়াবাজারে গত মঙ্গলবার বেলা ১২টায় বাসের সাথে যাত্রীবাহী মাহেন্দ্র’র মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামের গার্মেন্টসকর্মী লুৎফর রহমান (৩০), তাঁর স্ত্রী শাহনাজ (২৫) ও শিশুপুত্র মাহিত (৪) নিহত হয়। শিশুপুত্র মোজাহিদ (৬) গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এরা ভালুকার মাস্টারবাড়ী থেকে ঈদের ছুুটিতে বাড়ি ফিরছিলেন।
এ ছাড়া গত মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে ত্রিশাল-বালিপাড়া সড়কে শালবন পরিবহনের একটি বাসের সাথে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ত্রিশাল উপজেলার কাজিরকান্দা গ্রামের নাসিমা বেগম (৩৫) ও জিহাদ মিয়া (২৪) নিহত হন। একই দিন ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দরিরামপুর সাইফুল কমিশনারের বাড়ির সামনে একটি যাত্রীবাহী পিকআপ ইউটার্ন নেয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসের সাথে ধাক্কায় নান্দাইল উপজেলার আপেল মিয়া (৩০) ও মারুফ হোসেন (১৮) নিহত হন। একই দিন ময়মনসিংহ-ফুলপুর সড়কের তারাকান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় আবুল বাশার (৬০) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। গত রোববার বিকেলে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুরে মাহেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে জ্যোতি আক্তার (৭) এক শিশু নিহত হয়।

নোয়াখালী অফিস জানায়, নোয়াখালী সদর , কবিরহাট, বেগমগঞ্জ ও হাতিয়া উপজেলায় পৃথক চারটি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয় বেশ কয়েকজন ।
জানা গেছে, গত বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে সদর উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের হেরেংহি রোডের মাথায় মান্নানগর-চর জব্বর সড়কে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত ও আহত হয়েছেন ট্রাকের এক সহকারী। নিহত ব্যক্তিরা হলেন সুবর্ণচরের চর জুবলী ইউনিয়নের মো: নেসার (৪৫), চর জব্বরের মো: সাবিক (২০)। আহত ব্যক্তি হলেন মধ্যম বা¹ার মো: আলী (৪০)। আহত ব্যক্তিদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ট্রাক দুটি জব্দ করেছে। অপরদিকে একই দিন বিকেল ৩টার দিকে কবিরহাট উপজেলার ভূঁইয়ারহাঁট বাজার এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানের চাপায় সাত বছর বয়সী মো: জোবায়ের হোসেন নামের এক শিশু নিহত হয়েছে। ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দার ক্ষুব্ধ হয়ে পিকআপ ভ্যানটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ চালককে আটক করছে। গত বুধবার ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়কের বেগমগঞ্জ উপজেলার মজুমদারহাট সংলগ্ন রাস্তা পারাপারের সময় ১০ নম্বর নরোত্তমপুর ইউনিয়নের পশ্চিম নরোত্তমপুর গ্রামের কেরামত আলী চকিদার বাড়ির মৃত মুজা মিয়ার ছেলে সিরাজ মিয়াকে (৭০) একটি মোটরসাইকেল চাপা দেয় । এ সময় ঘটনাস্থলে তিনি নিহত হন।
এদিকে জেলার হাতিয়া উপজেলায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় এক তরুণ নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী আরো পাঁচজন আহত হয়। নিহত মো: মাহেদুল আজম শিহাব (১৯) উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চর বিরবিরি গ্রামের মাইন উদ্দিনের ছেলে।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান,পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে নড়াইলে আলাদা দু’টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন পাঁচজন মোটরসাইকেল আরোহী।
জানা যায়, গত ঈদের দিন রাত ৮টার দিকে নড়াইল-ঢাকা মহাসড়কের ডৌয়তলা এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সুপারি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে দুজন নিহত হন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল আরোহী ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কুমোরপট্টি গ্রামের আসাদ মাতুব্বরের ছেলে আলসাফ মাতুব্বর (২২)। অপরজন পথচারী তরিকুল শেখ (৪৫)। তার বাড়ি নড়াইলের লক্ষীপাশা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামে।
এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন-মোটরসাইকেল আরোহী ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কুমোরপট্টি গ্রামের মোস্তাক সর্দার (২২) এবং একই জেলার নগরকান্দা থানার আইনপুর এলাকার মুস্তাকিন (২০)। আহত দুইজন নিহত আলসাফের বন্ধু। তিন বন্ধু মিলে মোটরসাইকেলযোগে ফরিদপুর থেকে নড়াইলে আসার পথে সদরের ডৌয়তলা এলাকায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় তাদের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী তরিকুল শেখ নিহত হন।

এদিকে, নড়াইল-ঢাকা মহাসড়কের ঘোষবাড়ি এলাকায় দু’টি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তপু ঘোষ (২৭) নিহত হয়েছেন। ঈদের তৃতীয় দিন গত ১৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তপু মুলদাইড় গ্রামের সঞ্জিত ঘোষের ছেলে। এ দুর্ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন-নড়াইলের মুলদাইড় গ্রামের সমীর ঘোষের ছেলে সঞ্জয় ঘোষ এবং যশোরের অভয়নগর থানার শংকরপাশা গ্রামের মাহবুব আলমের ছেলে আয়াদ ও তালতলা গ্রামের তানভির জিহাদ।
কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় বাসচাপায় এক হোটেল ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার ভোর রাতে ভাণ্ডারিয়া-কাঁঠালিয়া-বামনা-পাথরঘাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের বান্ধাঘাটা নামক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম আবু তালুকদার (৫০) তিনি উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কৈখালী গ্রামের মৃত্যু ইসমাইল হোসেন তালুকদারের ছেলে এবং স্থানীয় বান্ধাঘাটা বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী ছিল।
পটিয়া-চন্দনাইশ(চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ায় চলন্ত বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই আপন চাচাত ভাই ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। ঈদের পর দিন শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টায় মহাসড়কের পটিয়া মনসা বাদামতলা এলাকায় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহত মোটরসাইকেল আরোহীরা হলো চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার ইসমাইলের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন হৃদয় (২২) এবং মোহাম্মদ ফোরকানের ছেলে মো: ইমরান (১৬)।

সীতাকুণ্ডে নারী-শিশুসহ নিহত ২
এদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো তিনজন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বারো আউলিয়া ও ভাটিয়ারী ইউনিয়নের বানুর বাজার এলাকায় পৃথক দুটি দুর্ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাত সাড়ে ৮টার দিকে বারো আউলিয়া দরগার সামনে রাঙ্গামাটি থেকে আসা ঢাকামুখী একটি দ্রুতগতির প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে কার স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা আরো তিনটি কারের ওপর গিয়ে উল্টে পড়ে। এতে চারটি প্রাইভেট কারের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ সময় পাঁচজন পথচারী গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে শাহাদাত হোসেন (১৩) নামে এক শিশুকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় আহত তানজিদ (১৪) নিহত শাহাদাতের চাচাতো ভাই। অপর আহত এক নারী ও একজন পুরুষের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের আবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

সিলেটে নিহত ৪
সিলেট ব্যুরো জানায়, ঈদের ছুটিতে ফাঁকা সড়কেও ঘটছে প্রাণহানি। ঈদের পর দিন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে চারজনের। গত শুক্রবার রাতে সিলেট-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের শাহবাগ মুহিদপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- জকিগঞ্জের খলাছড়া ইউনিয়নের মাদারখাল গ্রামের সোবহান আলীর ছেলে এবং জকিগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র মিলন আহমদ (১৮), একই উপজেলার মাদারখাল গ্রামের আফতার আলীর ছেলে আদিল হোসাইন (২০), জমির আলীর ছেলে জাকারিয়া আহমদ (২১) ও বিয়ানীবাজার উপজেলার মিনারাই গ্রামের রাজু আহমদের ছেলে ও বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রিদওয়ান আহমদ ফুয়াদ (১৮)।
জানা গেছে, গত শুক্রবার তিন বন্ধু আদিল হোসাইন, জাকারিয়া আহমদ ও মিলন আহমদ এক সাথে মোটরসাইকেল নিয়ে ঈদ পরবর্তী বেড়াতে বের হয়েছিলেন। রাতে জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কের শাহবাগ মুহিদপুর এলাকায় বিপরীতমুখী আরেকটি মোটরসাইকেলের সাথে তাদের মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে গুরুতর আহত হয় আদিল হোসাইন, জাকারিয়া আহমদ ও মিলন আহমদ এবং অপর মোটরসাইকেলের আরোহী রিদওয়ান আহমদ ফুয়াদ। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আদিল হোসাইন ও জাকারিয়া আহমদকে মৃত ঘোষণা করেন। মিলন ও ফুয়াদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এমএজি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ওই রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিদওয়ান আহমদ ফুয়াদ মারা যায়। সর্বশেষ রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিলন আহমদও মারা যান।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জাবেদ মাসুদ জানান, ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement