গাজায় ১৪ হাজার শিশু হত্যা ইসরাইলের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
- ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধে বাইডেনকে ন্যান্সি পেলোসির চিঠি
- হামাসকে রাজি করাতে মিসর-কাতারের প্রতি বাইডেনের আহ্বান
- ১৯৬ ত্রাণকর্মীকে হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত চায় জাতিসঙ্ঘ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে হামলা চালিয়ে ১৪ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এটি মোট নিহতের ৪৪ শতাংশ। গত শুক্রবার ফিলিস্তিনের ৫ এপ্রিল বার্ষিক শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে ফিলিস্তিনিদের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এই তথ্য প্রকাশ করেছে। খবর : আলজাজিরা, রয়টার্স ও এএফপির।
অন্য দিকে হামাসের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিসরের আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার কায়রোতে যাচ্ছে হামাসের একটি প্রতিনিধিদল। এর আগে হামাসকে ইসরাইলের সাথে চুক্তিতে পৌঁছাতে রাজি করানোর জন্য মিসর ও কাতারের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
আলজাজিরা টেলিভিশনের পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) নির্বিচারে হামলার কারণে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় চার শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। নিখোঁজদের মোট সংখ্যার অন্তত ৭০ ভাগ নারী এবং শিশু। তাদের সংখ্যা অন্তত সাত হাজার। এ ছাড়া পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে ১১৭ জন শিশু নিহত এবং ৭২৪ জন আহত হয়েছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুসারে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আগ্রাসনের ফলে ফিলিস্তিনের আট লাখ ১৬ হাজারেরও বেশি শিশুর মানসিক নির্যাতন, ভয়ভীতি, উদ্বেগ, বিষণœতা এবং নিপীড়নের শিকার হওয়ায় তাদের এখন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের প্রয়োজন হচ্ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুমান করেছে, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি ফিলিস্তিনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা ২৪ লাখ ৩২ হাজারে দাঁড়াবে, যা মোট জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ। আদমশুমারি অনুসারে, গাজা উপত্যকায় প্রায় ৪৩ হাজার ৩৪৯ শিশু এতিম বা পিতা-মাতা ছাড়াই বসবাস করে। এই জাতীয় শিশুর সংখ্যা ২০২০ সালে ছিল ২৬ হাজার ৩৪৯।
এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬৫ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩৩ হাজার ১৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৫ হাজার ৮১৫ জন আহত হয়েছে।
বাইডেন-ব্লিঙ্কেনকে ন্যান্সির চিঠি : ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ অবিলম্বে বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিøঙ্কেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। বাইডেন-ব্লিøঙ্কেনের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়ে গত শুক্রবার চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন কংগ্রেসম্যান। ওই চিঠিতে সই করেছেন ডেমোক্র্যাট দলের বর্ষীয়ান রাজনীতিক পেলোসিও।
ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবিতে বাইডেন প্রশাসনের ওপর আগে থেকেই চাপ ছিল। এখন এতে পেলোসি যুক্ত হওয়ায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, এমন দৃষ্টিভঙ্গি ডেমোক্র্যাট দলের মূলধারায় বেশ জোরালো হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনের গাজায় গত সোমবার ইসরাইলি বিমান হামলায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাতজন সহায়তাকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় নিজস্ব তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। চিঠিতে ন্যান্সি পেলোসি ছাড়াও ডেমোক্র্যাট দলের আরো ৩৬ জন কংগ্রেসম্যান সই করেছেন। তাদের মধ্যে বারবারা লি, রাশিদা তালিব ও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ রয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ‘সহায়তাকর্মীদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা ও গাজার মানবিক পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের মনে হয়েছে, অস্ত্র হস্তান্তরে অনুমোদন দেয়াটা অযৌক্তিক হবে।’
মিসর-কাতারের প্রতি বাইডেনের আহ্বান : ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে ইসরাইলের সাথে চুক্তিতে পৌঁছাতে রাজি করানোর জন্য মিসর ও কাতারের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দু’পক্ষকে যুদ্ধবিরতি ও সমঝোতায় পৌঁছাতে কায়রোতে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গাজা উপত্যকায় সাময়িকভাবে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে এবং হামাসের হাতে আটক পণবন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনায় নেপথ্যে থেকে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার।
হোয়াইট হাউজের দেয়া তথ্য অনুসারে, এ সপ্তাহে কায়রোতে আলোচনা শুরুর কথা থাকলেও এতে সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস, মোসাদ প্রধান ডেভিড বার্নেয়া, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল থানি ও মিসরের গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেল যোগ দেবেন কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি।
ত্রাণকর্মীকে হত্যার তদন্ত দাবি : গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে গাজা উপত্যকায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন মোট ১৯৬ জন ত্রাণকর্মী। এই ত্রাণকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সম্প্রতি গাজার দেইর আল বালাহতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক খাদ্য সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিøউসিকে) গাড়িতে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে নিহত হন সাতজন ত্রাণকর্মী।
শুক্রবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনী এ-সংক্রান্ত বিবৃতি জারির কয়েক ঘণ্টা পর নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বলেন, ‘ইসরাইলের সরকার তাদের ভুল স্বীকার করেছে। এটা ইতিবাচক, তবে কে ভুল করেছে, তা মূল ব্যাপার নয়। মূল ব্যাপারটি হলো (ইসরাইলি বাহিনীর) রণকৌশল এবং পদ্ধতি; যে কারণে এ ধরনের ঘটনা গাজায় প্রতিদিন বারবার ঘটছে।’
‘গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ১৯৬ জন ত্রাণকর্মী। আমরা প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। আমরা জানতে চাই, কেন তাদের হত্যা করা হয়েছে।’
দুই সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত : গাজায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ বহরে হামলা ও সাত ত্রাণকর্মী নিহতের ঘটনায় ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনীর (আইডিএফ) দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত এবং তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে আইডিএফ। বরখাস্ত হওয়া দুই কর্মকর্তার মধ্যে একজন ব্রিগেডিয়ার এবং অপরজন মেজর পদমর্যাদার বলে জানা গেছে। তবে তাদের দু’জনের নাম প্রকাশ করেনি ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনী।
পরে তেল আবিবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইডিএফের মুখপাত্র অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘এটি খুবই গুরুতর একটি ঘটনা এবং এজন্য আমরা দায়ী। এটি ঘটা একেবারেই উচিত হয়নি এবং আমরা কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে আর এমন ঘটবে না।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা