সিয়ামের পুরস্কার আল্লাহর সন্তুষ্টি
- লিয়াকত আলী
- ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ২৭ তারিখ। আর মাত্র দুই বা তিন দিন পর এ মাস বিদায় নেবে। মাহে রমজানুল মোবারক মুমিন বান্দাদের সারা বছরের জীবনযাত্রায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী মাস। এ মাসে একজন মুসলমানকে নিজের সাধারণ জীবন যাত্রায় পরিবর্তন এনে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও আনুগত্যে এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনের ওপর বিশেষ জোর দিতে হয়। আল্লাহর ইবাদতে সাধনার সাথে কিছু বিধিনিষেধসহকারে পালন করতে হয় দিন রাতের কর্মসূচি। তারপর ফলস্বরূপ মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
এই সন্তুষ্টির একটি তাৎক্ষণিক আলামত ঈদুল ফিতরের পুরস্কার। এই ঈদকে বলা হয় ঈদুল ফিতর। এটি রোজার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার ঈদ। এর আগের দিন পর্যন্ত ছিল রোজার বিধিনিষেধ। শাওয়াল মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার মাধ্যমে সেই সব বিধিনিষেধের অবসান হয়। তবে এসব বিধিনিষেধ শাস্তি ছিল না। এই নিয়ম পদ্ধতি পালন ছিল সাফল্য লাভের ও উপকার লাভের জন্য। তাই এগুলো পালনে বরং আনন্দ বোধ করাই স্বাভাবিকতার দাবি। এই আনন্দই আসে ঈদের আকারে। তাই ঈদুল ফিতর নিয়ে আসে আনন্দ ও তৃপ্তির বার্তা। একই সাথে তা মুমিন বান্দাদের মধ্যে সৃষ্টি করে আধ্যাত্মিক সাফল্য ও উন্নতির অনুভূতি এবং অতীত মাসের কার্যকলাপ পর্যালোচনার সুযোগ। আল্লাহ তায়ালার তাওফিকে সেই বিশেষ ইবাদত সম্পন্ন করার সুযোগ হয়েছে, যা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ সন্তুষ্টি অর্জনের কারণ এবং ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এই ইবাদতটির মধ্যে রয়েছে আল্লাহ পাকের প্রতি দাসত্ব ও আনুগত্য প্রকাশের বেশ কয়েকটি দিক।
ইসলামের পাঁচ বুনিয়াদি ইবাদত বা স্তম্ভের অন্যতম রমজানের রোজা। এই পাঁচ রোকন বা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ইসলামের ইমারত। তাই প্রতিটি স্তম্ভেরই সুরক্ষা প্রয়োজন। তাহলেই ইসলামের ইমারত বা কাঠামো বহাল থাকবে। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হওয়ার পাশাপাশি রোজায় রয়েছে অনেক বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য। এগুলো নিয়ে মানুষ যদি সহজাত বুদ্ধিবৃত্তি ও বিবেকের সাথে চিন্তা করে, তাহলে তাতে সে নিজ জীবনের জন্য কয়েকটি উজ্জ্বল দিক দেখতে পাবে। উন্নত মানবীয় মূল্যবোধ চর্চার জন্য নিজের প্রবৃত্তির চাহিদা নিয়ন্ত্রণ ও নিজের চাহিদা-স্বার্থ উপেক্ষা করে আপন প্রভুর বিধান পালন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। রোজার মাধ্যমে মানুষ একদিকে আধ্যাত্মিক সদগুণাবলিতে সমৃদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে। অন্য দিকে অন্যদের দুঃখ-দুর্দশা নিজের অভিজ্ঞতায় এনে নিজের মধ্যে সমবেদনা ও সহানুভূতি জাগিয়ে তোলে।
রমজান মাস অতিবাহিত হতে থাকে। আর রোজাদার উন্নতি লাভ করতে থাকে। প্রথম দশকের পর দ্বিতীয় দশকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আরো নেয়ামত ও বরকত তার জন্য বরাদ্দ হয়। তার পর শুরু হয় তৃতীয় ও শেষ দশক। এতে সে আরো বিশেষত্ব লাভ করে। এই দশকে রোজাদাররা লাভ করে সেই বিশেষ রজনী, যা অসাধারণ রহমত ও বরকতের রজনী হিসেবে আখ্যায়িত। এই রজনীটির মর্যাদা হাজার মাস অর্থাৎ তিরিশ হাজার দিনের চেয়ে বেশি। কেননা এই রাতে আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীকে বিশেষ নৈকট্য দান করেন। ফেরেশতারা রুহুল কুদসের সাথে সারিবদ্ধভাবে পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং নূরানী চাদোয়ায় ঢেকে দেন। এটা লাইলাতুল কদর, যার কথা আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। এই বিশেষ নেয়ামতে ভূষিত হয় রোজাদার। সে তখন আপন প্রভুকে স্মরণ করে। তার নাম জপে। যেন সে মহান প্রভুর বিশেষ দরবারে হাজির হয়। তখন তার ইবাদত বন্দেগির গ্রহণযোগ্যতা অনেক গুণ বেড়ে যায়।
রমজান মাস একজন মুসলমানকে এই উপলব্ধি দান করে যে, এই পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা মানুষ হিসেবে তারই মতো। কিন্তু তাদেরকে অনাহারের কষ্ট ভোগ করতে হয়। এমন অনেক মানুষ রয়েছে, যাদের কাছে মানবীয় চাহিদাসমূহ পূরণের সামগ্রী নেই। রমজান আরো বলে দেয়, মানুষের উচিত তার চারপাশে বসবাসকারী ও স্বজাতির দুঃখ-কষ্ট অনুভব করা এবং তাদের প্রতি যথাসম্ভব সমবেদনা অনুভব করা। এ জন্য অভাবীদের সহায়তা ও ক্ষুধার্তকে আহার করানো রমজানের অত্যন্ত প্রিয় কাজগুলোর অন্তর্গত সাব্যস্ত করা হয়েছে। মানুষ যখন রোজা রেখে ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করে তখন সে নিশ্চয়ই অনুভব করতে পারে ক্ষুধা কী এবং অনাহারি মানুষদের প্রতি সমবেদনা কত উন্নত আচরণ। রোজা রেখে সে যখন প্রবৃত্তির বিভিন্ন চাহিদা পূরণ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে বাধ্য হয়, তখন সে নিজেকে সেই সব মন্দ কাজকর্ম থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ পায় যেগুলো উন্নত জীবন পদ্ধতির সাথে বেমানান ও নিন্দনীয়। এভাবে রমজান আসে মানুষকে সৎ, সজ্জন ও পবিত্র বানানোর কর্মসূচি নিয়ে। এই কর্মসূচি মানুষের জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। এতে রয়েছে মানুষের উন্নতি ও কল্যাণের পাশাপাশি মহান প্রভুর সন্তুষ্টি ও প্রীতি লাভের ব্যবস্থা। রমজানের সিয়াম পালনের প্রথম পুরস্কার ঈদুল ফিতরের আনন্দ এবং প্রকৃত পুরস্কার মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জন ও তার পক্ষ থেকে বিশেষ প্রতিদান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা