পুলিশের ফ্রি ইফতার শপ
- আমিনুল ইসলাম
- ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৫
বিকেল পৌনে ৬টা। রাজধানীর সোনারগাঁও ক্রসিং। বাইক রাইড শেয়ারিংয়ের চালক রোজাদার আফতাব উদ্দিন ব্যাগ থেকে হাফ লিটারের পানির বোতল নিয়ে এদিকে-সেদিক তাকাচ্ছিলেন। এমন সময় সেখানে হাজির হলো ব্যানার ঝুলানো পুলিশের একটি গাড়ি। ‘পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে ফ্রি ইফতার শপ। আয়োজনে তেজগাঁও থানা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’ সেই লেখা গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন তেজগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মোহসিন।
তার সাথে পুলিশের আরো কয়েকজন সদস্য। গাড়ির পেছনে থরে থরে সাজানো রয়েছে ইফতারের বাটি ও পানির বোতল। মুহূর্তেই আফতাব উদ্দিন তার বাইক থেকে নেমে পুলিশের গাড়ির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘আপনারা কি ইফতার দিবেন’। হ্যাঁ জবাব শুনতেই মুখে হাসি নিয়ে গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে গেলেন। অন্যদের আর বুঝতে বাকি রইল না, তারাও আফতাবের পেছনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর ওসি নিজের হাতে সবার মধ্যে ইফতার বণ্টন শুরু করলেন।
গত বুধবার বিকেলে সরেজমিন সোনারগাঁও ক্রসিংয়ের ব্র্যাক ব্যাংকের সামনে এমন দৃশ্য দেখা যায়। পুলিশ জানায় পুরো রমজানজুড়ে তেজগাঁও থানা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে এভাবে ইফতার বিতরণ করে আসছেন ওসি মোহসিন। কখনো নিজে উপস্থিত থাকতে না পারলেও থানার পক্ষ থেকে কোনো না কোনো অফিসার এই কার্যক্রম চালিয়ে যান।
এমন মহৎ উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মো: মোহসিন নয়া দিগন্তকে বলেন, শুরুটা হয়েছিল মহামারী করোনায়। তখন তিনি চট্টগ্রামের ডাবলমুরিং থানার ওসি। লকডাউনের কারণে সবকিছু ছিল বন্ধ। রমজান মাসে হাসপাতালে রোগীর স্বজনরা একটু খাবারের জন্য রাস্তায় বেরিয়ে এদিকে- সেদিক ছুটছিলেন। কারণ হাসপাতালে রোগীদের খাবার দিলেও স্বজনদের খাবার বাইরে থেকে খেতে হয়। কিন্তু সব কিছু বন্ধ থাকায় কোথাও খাবার পাচ্ছিলেন না। গভীর রাতেও তাদের খাবারের সন্ধানে ছুটতে দেখে প্রথমে নিজের টাকা দিয়ে ওই রোগীর স্বজনদের ইফতার ও সাহরির ব্যবস্থা শুরু করি। কয়েক দিনের মধ্যে খাবারের চাহিদা বাড়তে থাকে। রোগীর স্বজনদের পাশাপাশি বাইরের অনেকেই খাবারের জন্য লাইন দিতে থাকেন। অবশ্য এই দৃশ্য দেখে এলাকার বেশ কিছু মানুষ আমাদের মাধ্যমে খাবার কার্যক্রমে শরিক হতে আগ্রহী হন। সেই থেকে চলতে থাকে রমজান মাসে ফ্রি ইফতার বিতরণ। এরপর চুয়াডাঙ্গা মিরপুর মডেল থানা এবং বর্তমানে তেজগাঁও থানা এলাকায় চালাচ্ছেন ফ্রি ইফতার কার্যক্রম। যে এলাকায় এই কার্যক্রম চালিয়েছেন সেখানকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। এমনকি প্রথম দিকে নিজের পকেট থেকে খাবার কিনলেও পরবর্তীতে এলাকার অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত চার বছরে প্রায় এক লাখ লোকের মধ্যে বিতরণ করেছেন এই খাবার।
তিনি আরো বলেন, নানা কাজে অনেক সময় রাস্তায় ইফতারের সময় হয়ে যায়। ওই সব রোজাদারদের সামান্য একটু সহযোগিতা করাই আমাদের লক্ষ্য। বাসের যাত্রী, কেউ পথচারী, কেউ রাইডশেয়ারিংয়ের চালক। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ অনেকেই আসেন খাবার নিতে। খাবারগুলো যাতে সঠিকভাবে বিতরণ হয় তাই এটি ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে দেয়া।
খাবার নিয়ে আফতাব উদ্দিন বলেন, গরমে নষ্ট হওয়ার ভয়ে ব্যাগের ভেতর পানি ছাড়া কোনো খাবার রাখি না। বাইরে রেস্টুরেন্টে ইফতার করতে গেলে ২০০ টাকার নিচে হয় না। সামান্য আয়ে এত টাকা খরচ করলে সংসার চালাবো কিভাবে। তাই বেশির ভাগ সময় রাস্তায় পানি দিয়ে ইফতার সারেন রাইডশেয়ারিংয়ের অনেকে। তবে রাস্তার আশপাশে যদি কেউ ইফতার করেন তিনি বা তারা ডেকে নেন। তাই সেদিনও ইফতারের জন্য পানি বের করে এদিকে সেদিক তাকাচ্ছিলাম কেউ ডাক দেয় কি না। এমন সময় ওসি সাহেব এসে খাবারের প্যাকেট দিলেন। তার মহৎ কাজে দোয়া করতে হয় না। এমনিতেই চলে আসে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা