১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজায় ত্রাণ সংস্থার কাজ বন্ধ সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার শঙ্কা

-

- নিজেদের শর্তে অনড় হামাস
- ইসরাইলের সাথে অস্ত্রবাণিজ্য বন্ধে ব্রিটেনের প্রতি আহ্বান

ইসরাইলি বিমান হামলায় তাদের সাত কর্মী নিহত হওয়ার পর ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজায় কার্যক্রম স্থগিত করেছে ত্রাণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে)। এর পর থেকে বহু ফিলিস্তিনি হতভম্ব হয়ে ভাবছেন তাদের পরিবারগুলোকে কিভাবে খাওয়াবেন। আলজাজিরা ও রয়টার্স।
ডব্লিউসিকের সাথে কাজ করা আরেকটি মার্কিন ত্রাণ সংস্থা আনেরাও তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে, কারণ তাদের স্থানীয় কর্মী ও কর্মীদের পরিবারগুলো বাড়তে থাকা ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে। এই দুই ত্রাণ সংস্থা মিলে গাজায় প্রতি সপ্তাহে ২০ লাখ খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করত বলে বিবিসি জানিয়েছে। ইসরাইলে কঠোর অবরোধ, ত্রাণ প্রবেশে বাধা ও চলমান সহিংসতায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ১১ লাখ দুর্ভিক্ষের মুখে আছে বলে জাতিসঙ্ঘ সতর্ক করেছে। ডব্লিউসিকের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সাইপ্রাস থেকে গাজায় সমুদ্রপথে ত্রাণ আসার একটি করিডোরের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। আসন্ন দুর্ভিক্ষ এড়াতে গাজার উত্তরাংশে ত্রাণ প্রবেশের সুবিধার্থে গত মাসে এই করিডোরটি স্থাপনে ডব্লিউসিকে সহায়তা করেছিল।

সোমবার রাতে ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইসরাইলের নির্ধারিত একটি উপকূলীয় সড়কধরে ডব্লিউসিকের একটি গাড়িবহর দক্ষিণ দিকে যাওয়ার সময় বিমান হামলার শিকার হয়। এর কিছুক্ষণ আগে ডব্লিউসিকে একটি বার্জ থেকে শতাধিক টন খাদ্যসহায়তা নামিয়ে গাজার দিয়ের আল-বালাহ এলাকার একটি গুদামে রেখেছিল। এই বার্জটি ত্রাণবাহী চারটি জলযানের সাথে গাজার উপকূলে এসেছিল। কিন্তু ত্রাণকর্মীদের ওপর ইসরাইলের হামলার পর আরো ২৪০ টন খাদ্য ত্রাণসহ অপর জাহাজগুলো সাইপ্রাসে ফিরে যায়। নরওয়ের রিফিউজি কাউন্সিল সতর্ক করে বলেছে, ‘ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাথে যা হয়েছে তাতে পুরো ত্রাণ পদ্ধতিটিই হুমকির মুখে পড়েছে ও খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে।’
ডব্লিøউসিকে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করে বলেছে, ইসরাইলি বাহিনী ‘জেনে বুঝেই’ তাদের পরিষ্কার লোগো-সংবলিত গাড়িগুলোতে হামলা চালিয়েছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করেই তারা পথে বের হয়েছিল। যে সাতজন নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে ব্রিটিশ, পোলিশ, অস্ট্রেলীয়, ফিলিস্তিনি ও যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার একজন দ্বৈত নাগরিক আছেন।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি এই হামলার ঘটনাকে ‘গুরুতর ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন আর রাতের অন্ধকারে তারা ত্রাণবহরটি ‘শনাক্ত’ করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষা দিতে আরো বেশি কিছু করতে ‘তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ’ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ লক্ষ্যে সমন্বয়ের আরো উন্নয়ন ঘটাতে তারা অবিলম্বে নতুন একটি ‘মানবিক কমান্ড সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করছেন বলে জানিয়েছেন।

কিন্তু ত্রাণ গোষ্ঠীগুলো বলছে, এসব প্রতিশ্রুতি অর্থপূর্ণ কোনো পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাবে কি না তা নিশ্চিত নন তারা। তারা এও বলেছেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি হামলা এ পর্যন্ত ১৯৬ জন ফিলিস্তিনি ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছে। নরওয়ের রিফিউজি কাউন্সিলের মহাসচিব ও জাতিসঙ্ঘ মানবিক বিষয়ক সাবেক প্রধান জ্যান এগল্যান্ড বিবিসিকে বলেছেন, ‘গাজার মানুষের জন্য ডব্লিউসিকের কার্যক্রম বন্ধ মানে আরো দুর্ভিক্ষ, আরো মৃত শিশু আর চরম পুষ্টিহীনতার জন্য আরো বেশি মহামারী।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় পুষ্টিহীনতায় অন্তত ২৭ শিশুসহ ৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ত্রাণকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছে ইসরাইল : গাজায় ইসরাইলি হামলায় সাত ত্রাণকর্মীকে ‘পরিকল্পিতভাবে, গাড়িতে গাড়িতে’ যেয়ে হত্যা করা হয়েছিল। বুধবার রয়টার্সকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) প্রতিষ্ঠাতা সেলিব্রিটি শেফ জোসে আন্দ্রেস এই কথা বলেছেন। ভিডিও কলে কথা বলার সময় আন্দ্রেস বলেছিলেন, দাতব্য গোষ্ঠীটির ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সাথে পূর্ণ যোগাযোগ ছিল এবং সেনারা ত্রাণকর্মীদের গতিবিধি জানত। তাই এ ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মানতে নারাজ তিনি। এ বিষয়ে আন্দ্রেস বলেন, ‘এটি মোটেই দুর্ভাগ্যজনক কোনো ঘটনা ছিল না যে, তারা বলতে পারে, উফ! আমরা ভুল জায়গায় বোমা ফেলে দিয়েছি।’ তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের গাড়ি বহরের ছাদে খুবই রঙিন লোগো ছিল। আমরা কে এবং আমরা কী করি তা খুবই স্পষ্ট ছিল।’ আন্দ্রেস বলেন, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) আমাদের কর্মীদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত ছিল। মার্কিন সরকার এবং নিহত প্রতিটি ত্রাণকর্মীর দেশকে এই ঘটনার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ভিডিও কলে আন্দ্রেস বলছিলেন, ‘আইডিএফ নিয়ন্ত্রিত একটি দ্বন্দ্বহীন অঞ্চলে আমাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। তারা জানত ওই রাস্তায় আমাদের দলগুলো তিনটি গাড়ি নিয়ে চলাচল করছিল।’

সোমবার সমুদ্রপথে গাজায় আসা ১০০ টন খাদ্যের তদারকি করার সময় ত্রাণকর্মীদের গাড়িবহরে হামলা হলে তারা নিহত হন। এই ঘটনায় ‘গভীরভাবে দুঃখ’ প্রকাশ করেছিল ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। একে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে অভিহিত করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তবে এই হামলা ইচ্ছাকৃত নয়, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দ্রেস। তিনি বলেন, ত্রাণবাহী গাড়ির ওপর তিনবারের বেশি হামলা করা হতে পারে। ভিডিও সাক্ষাৎকারের সময় আত্মপক্ষ সমর্থনের ইসরাইলে দেয়া এমন ব্যাখ্যা আন্দ্রেস গ্রহণ করেছেন কি না জিজ্ঞাসা করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে, আমি স্পষ্টতই না বলব। এমনকি আমরা যদি ইসরাইল প্রতিরক্ষাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ না-ও করে থাকি তবুও কোনো গণতান্ত্রিক দেশ এবং কোনো সামরিক বাহিনীই বেসামরিক এবং মানবিক কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করতে পারে না।’
নিজেদের শর্তে অনড় হামাস : ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সাথে নতুন যুদ্ধবিরতি নিয়ে দখলদার ইসরাইলের আলোচনা চলছে। মিসরের রাজধানী কায়রোতে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর কাছে নিজেদের নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করে ইসরাইল। এখন তারা হামাসের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এর মধ্যে বুধবার জেরুসালেম দিবসের বক্তব্যে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য তারা যে শর্ত দিয়েছেন সেটিতে এখনো অনড় রয়েছেন। যুদ্ধবিরতি যদি হতে হয় তাহলে তাদের শর্ত অনুযায়ী হতে হবে। এ ব্যাপারে হানিয়া বলেছেন, আগ্রাসন বন্ধে যে আলোচনা চলছে ইহুদি দখলদাররা সেটি অব্যাহতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে। দখলদাররা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, তাদের আগ্রাসন চলবে। আর নেতানিয়াহু এবং তার সাথে যারা রয়েছে তাদের লক্ষ্য হলো যতদিন সম্ভব ক্ষমতায় থাকা। তিনি আরো বলেছেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি আমরা আমাদের স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরাইলের সব সেনা প্রত্যাহার করে নেয়া, গাজার সব মানুষকে তাদের বাড়িঘরে ফিরতে দেয়া, আমাদের মানুষের সব প্রয়োজনীয়তা মেটানো, গাজাকে পুনর্গঠন, অবরোধ তুলে নেয়া এবং বন্দিবিনিময় শর্তে অনড় রয়েছি।

ইসরাইলের সাথে অস্ত্রবাণিজ্য বন্ধে ব্রিটেনের প্রতি আহ্বান : ইসরাইলের সাথে অস্ত্রবাণিজ্য বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ব্রিটেন সরকারকে এক চিঠি দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তাদের মধ্যে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের সাবেক তিনজন বিচারপতিও রয়েছেন। চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইসরাইলে অস্ত্র পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে ব্রিটেন। গাজায় ‘সম্ভাব্য গণহত্যার ঝুঁকি’র প্রেক্ষাপটে দেশটিতে অবশ্যই অস্ত্র বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় সাত ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দলের চাপের মুখে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এরই মধ্যে তাকে ওই চিঠি পাঠানো হলো। প্রধানমন্ত্রী সুনাক গত মঙ্গলবার বলেছেন, অস্ত্রবাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের কাছে ‘খুব সতর্কতামূলক’ একটি ব্যবস্থা রয়েছে। সংবাদপত্র সানের সাথে কথা বলার সময় তিনি ইসরাইলি ওই হামলার ঘটনায় একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান। তবে ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। সুনাক আরো বলেন, ইসরাইলের ব্যাপারে ব্রিটেন ‘অব্যাহতভাবে এই পরিষ্কার’ অবস্থান বজায় রেখেছে যে, দেশটিকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে হবে।
ব্রিটেন সরকারকে দেয়া ১৭ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে সই করেছেন ৬০০ জনের বেশি আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। তাদের মধ্যে আছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক সভাপতি লেডি হ্যালেও। চিঠিতে বলা হয়, গণহত্যা সনদের সম্ভাব্য লঙ্ঘনসহ আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনজনিত জটিলতা ব্রিটেনকে এড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। চিঠিতে বিশিষ্টজনরা আরো বলেছেন, ইসরাইলের কাছে অস্ত্রশস্ত্র ও অস্ত্রব্যবস্থা (প্রতিরক্ষাব্যবস্থা) বিক্রি আন্তর্জাতিক আইন মানার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের বাধ্যবাধকতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষুণ্ণ করছে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরো রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি লর্ড সাম্পশন ও লর্ড উইলসন। আছেন আরো ৯ জন বিচারক ও ৬৯ জন কেসি।


আরো সংবাদ



premium cement
আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারের দাবি এক দিনে দেড় হাজার মার্কিনির সাজা মাফ করলেন বাইডেন ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই’ পাটখাতে সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে : পাট উপদেষ্টা তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবি : ৩ দিন সাগরে ভেসে ছিল শিশুটি বিএসএমএমইউ’র ভিসিকে অবরুদ্ধ করে স্নাতকোত্তর কোর্সে ঢোকার চেষ্টা ১৩ চিকিৎসকের অস্ট্রেলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশী শিক্ষক নিহত ডিজিটাল যুগে ইসলামিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও চ্যালেঞ্জ থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ও ফানুস নিষিদ্ধ রিজার্ভ বেড়ে এক হাজার ৯০০ কোটির ঘরে এবার শীত কম হবে, নাকি বেশি

সকল