১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাজস্ব প্রাপ্তির অনিশ্চয়তায় বড় বাজেট করছে না সরকার

আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা : ঘাটতি ২ লাখ ৫৫ হাজার কোটি
-

রাজস্ব প্রাপ্তির অনিশ্চিয়তায় আগামী অর্থবছরের জন্য একটি উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া থেকে আবারো পিছু হটছে সরকার। প্রথম দিকে মনে করা হয়েছিল আগামী অর্থবছরের জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। যার আকার আট লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, অর্থবছরের শেষ দিকে এসে দেখা গেলো বড় বাজেট তৈরি করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন সেই অর্থ সঙ্কুলান করা সম্ভব হবে না। কারণ এক দিকে, যেমন বিদেশী সহয়তা কমে গেছে, অন্য দিকে, দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে বাজেটের আকার বড় করতে হলে সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অর্থঋণ নেয়ার প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু আইএমএফ’র একটি কর্মসূচিতে থাকার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংকিং খাত থেকে অধিক হারে টাকা কর্জ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। ফলে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার শেষ পর্যন্ত আট লাখ কোটি টাকার গণ্ডির নিচেই রাখতে হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত যে হিসাব করেছে অর্থমন্ত্রণালয়- তাতে দেখা যায়, আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। যা কিনা চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মূল বাজেটের চেয়ে মাত্র ৪ দশমিক ৬ ভাগ বেশি। আবার সংশোধিত বাজেট থেকে এর আকার বাড়বে সাড়ে ১১ ভাগ। কিন্তু এর আগে বাজেটের আকার ১৪ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি করা হতো।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার রয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। গত মাসে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটের আকার কমানো হয়েছে মূল বাজেটের থেকে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৪৭ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।
এ দিকে,আগামী বাজেটে ঘাটতিই ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। জিডিপির অংশ হিসেবে এই ঘাটতির পরিমাণ ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
অন্য দিকে, আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ছিল সাত ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা। কিন্তু বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোড় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এডিপির আকার করা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ এবং ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হতে পারে। সম্পূর্ণ ভার্র্চুয়ালি অনুষ্ঠিতব্য এই সভাটি চলতি অর্থবছরের তৃতীয় সভা এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে মাহমুদ আলীর প্রথম সভা।
এ দিকে, আজকের সভা সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সভায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রাক্কলিত একটি আকার নির্ধারণ করা হবে। এটিই চূড়ান্ত আকার নয়। এর পর আগামী মে মাসের ৫ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আলোচনা করবেন। আর সেখানেই আগামী অর্থবছরের বাজেটের প্রকৃত আকার নির্ধারণ করা হবে এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আরো কিছু সংযোজন ও বিয়োজন করা হবে।
জানা গেছে, সভার আলোচ্য সূচির মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের অগ্রগতি এবং বিশ্ব ও জাতীয় অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে সূচিত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো (এমটিএমএফ) পর্যালোচনা এবং দ্বিতীয় বিষয় ছিল চলতি অর্থবছরসহ মধ্যমেয়াদি(২০২৪-২৫ হতে ২০২৬-২৭) সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর (এমটিএমএফ) সূচকগুলোর প্রক্ষেপণের ওপর আলোচনা ও অনুমোদন।
জানা গেছে, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার আগামী অর্থবছরে বাজেট ও দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরবেন। এর সাথে দেশের মুদ্রাবাজারসহ আরো অন্য কিছু বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আর দেশের সার্বিক রাজস্ব পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাহমাতুল মোমিনিন। দেশে রফতানি বাণিজ্য বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে পারেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ব সচিব তপন কান্তি ঘোষ। সকাল ১০ টাকায় শুরু হয়ে সভাটি দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলতে পারে।
সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক টিটু, কৃষিমন্ত্রী ডা: দিপু মনি এবং পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুস সালাম উপস্থিত থাকতে পারেন।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩) মাত্র ২৬ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নের এ হার আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ কম। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ২৭ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের করা পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে মোট সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৩) ৮৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা (বাস্তবায়ন হার ১১%) এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৩) ১ লাখ ৯ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে (বাস্তবায়ন হার ১৫%)।


আরো সংবাদ



premium cement