মেয়েটা মরেনি ওকে মেরে ফেলা হয়েছে
ঢাবি ছাত্রী আদ্রিতার মা- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৩
‘আমার মেয়ে মরেনি, ওকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। ওকে বাধ্য করা হয়েছে আত্মহত্যা করতে। বাবা ও সৎ মা মিলে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। গত ১১ বছর ধরে মেয়েটির সাথে আমাকে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি, এমনকি কথাও বলতে দেয়া হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদ্রিতা বিনতে মোশাররফের (২১) মা নেদারল্যান্ড প্রবাসী নুরানী ইসলাম এসব কথা বলেছেন। তিনি তার সাবেক স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেনের বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ করেছেন। আদ্রিতার মা বলেছেন, তিনি ড. মোশাররফের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে তিনি তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করছেন।
রাজধানীর ফুলার রোডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কোয়ার্টারে আদ্রিতা বিনতে মোশাররফ (২১) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। আদ্রিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। গত রোববার ভোরে দক্ষিণ ফুলার রোডের ১৯ নম্বর ভবনের তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ খবর পেয়েছে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিলে চিকিৎসক সকাল সাড়ে ৭টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আদ্রিতা গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। শাহবাগ থানার ওসি পরিবারের বরাত দিয়ে আদ্রিতার আত্মহত্যার কথাই বলেছেন গণমাধ্যমকে।
এ দিকে, গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে আদ্রিতা তার বাবা-মায়ের সাথে ফুলার রোডের ওই বাসায় থাকতেন। কিন্তু গতকাল নেদারল্যান্ড থেকে নুরানী ইসলাম বলেছেন, আদ্রিতা তার মেয়ে। আদ্রিতা ওই বাসায় তার বাবা ও সৎমায়ের সাথে থাকত। আদ্রিতা আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে বাধ্য করা হয়েছে আত্মহত্যা করতে। এ জন্য দায়ী হচ্ছেন আদ্রিতার বাবা মোশাররফ ও সৎ মা।
নুরানী ইসলাম বলেন, ২০০২ এর ফেব্রুয়ারিতে আদ্রিতার বাবার সাথে তার বিয়ে হয়। ওই বছরেরই ডিসেম্বরের ২২ তারিখে আদ্রিতার জন্ম হয়। বিয়ের পর বছরখানেক তারা ভালোই ছিলেন। এরপর ড. মোশাররফ নুরানীকে বলে দেন যাতে তার আত্মীয়স্বজন কেউ তাদের বাসায় না আসেন। তখন তারা মুহসীন হলের তৃতীয় তলায় থাকতেন। নুরানীর বাবা-মা অনেক সময় তাদের বাসায় আসলেও তাদেরকে অপমান করে বের করে দেয়া হতো। এরপর থেকে তারাও ওই বাসায় আসা বন্ধ করে দেন। কিন্তু মেয়েকে তারা মানিয়ে চলার জন্য বলেন। কিছু দিন পরে আদ্রিতার মা নুরানীকে ইনকাম করে পড়াশুনা চালানোর জন্য বলেন ড. মোশাররফ। এরপর অনেক কষ্টে তিনি ইনকাম করে তা দিয়ে নিজে এবং মেয়েকে চালাতেন। মেয়ে সন্তান বলে ড. মোশাররফ ও তার পরিবার শুরু থেকেই আদ্রিতাকে পছন্দ করতেন না। নুরানী তখন তার মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে নিজে পড়াশুনাও করতেন আর চাকরিও করতেন। ২০১৩ সালে নিজের চেষ্টায় তিনি জার্মানি চলে যান। তার চিন্তা ছিল তিনি স্বামী ও সন্তানকে ওখানে নিয়ে যাবেন। জার্মানি যাওয়ার পর থেকে মেয়ের সাথে আর কথা বলতে দেন না ড. মোশাররফ। এমনকি, দেশে ফিরে ওই বাসায় গেলে তাকে মারধর করে পুলিশকে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকসহ অনেকের সাথেই কথা বলেন। কিন্তু কেউ তাকে কোনো সহায়তা করেননি। এমনকি সন্তানের সাথে কথা বলতেও দেননি। মহসিন হলের বাসায় থাকতে আদ্রিতাকে গিফট পাঠানো যেত। কিন্তু ফুলার রোডের বাসায় যাওয়ার পর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। তিনি বলেন, আদ্রিতা প্রায়ই তার ঘনিষ্ঠজনকে বলত ‘আমি মাকে খুব মিস করি। কিন্তু মায়ের সাথে কথা বলতে দেন না বাবা।’
এ দিকে এসব বিষয়ে জানার জন্য ড. মোশাররফের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা