বুয়েটের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে অ্যাকশনের হুমকি
- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
- ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
- আমরা সব ধরনের ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে : বুয়েট শিক্ষার্থীরা
- ছাত্র শিক্ষকরা চাইলে আবার ছাত্র রাজনীতি শুরু হবে : ভিসি
- বুযেটে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে : সেতু মন্ত্রী
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের প্রতিবাদে গতকাল বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেছেন আমরা সব ধরনের ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেব না। এ দিকে গতকাল সকালে এক প্রতিবাদী সমাবেশ থেকে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাব্বির হলের সিট ফিরিয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়েছে ছাত্রলীগ। দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে আরো উত্তাল ও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বুয়েট। এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বুয়েটে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। পরিস্থিতি সম্পর্কে বুয়েটের ভিসি প্রফেসর সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, ছাত্র-শিক্ষকরা চাইলে বুয়েটে আবার ছাত্ররাজনীতি শুরু হবে।
সরেজমিন জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তারা সব ধরনের ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আবার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি যে, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সব ধরনের ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে পাঁচজন সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফ করেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা তাদের নাম প্রকাশ করেননি। শিক্ষার্থীরা বলেন, হিজবুত তাহরির ও অন্যান্য আরো যেসব নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে, আমরা সেগুলোরও বিরুদ্ধে। তারা আরো বলেন, বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত থাকলে আমরা বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও তাদের বহিষ্কারের দাবি জানাই। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘জীবনের ক্ষতি করে’ এমন সব ধরনের ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে তারা শপথ নিচ্ছেন।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেবো না। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বুয়েটের ২০তম ব্যাচের মোট শিক্ষার্থী এক হাজার ২১৫ জন। তাদের মধ্যে এক হাজার ২১৩ জনই আজ অনুষ্ঠিত ফাইনাল পরীক্ষায় বসেননি। এর অর্থ এটাই যে প্রায় সব শিক্ষার্থীই আমাদের দাবির সাথে সহমত।
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রতিবাদ এবং বুয়েট শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির বহিষ্কারের দাবিতে গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে রাব্বির হলের সিট বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম ছাত্রলীগের : এদিকে আজ সকালে এক প্রতিবাদী সমাবেশ থেকে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাব্বির হলের সিট ফিরিয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের একটি ইউনিটের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, আমাদের এক ভাই স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। এ কারণে তার আবাসিক হলের সিট বাতিল করা হয়েছে। আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার সিট ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই।
তিনি বলেন, দাবি না মানলে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলছেন, আমরাও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করব এবং কোনো ছাড় দেয়া হবে না। কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি ‘অসাংবিধানিক, শিক্ষা পরিপন্থী ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন’ বলেও অভিহিত করেন।
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার দাবির পাশাপাশি কর্মসূচি থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান। তবে ছাত্রলীগের এই পাল্টা কর্মসূচির মধ্যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি।
বুয়েট নিয়ে অ্যাকশনে যেতে পারে সরকার : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বুয়েটের ঘটনায় তদন্ত চলছে। আমরা খতিয়ে দেখছি। সেখানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার নামে বুয়েটকে একটা অপরাজনীতি-জঙ্গিবাদের কারখানায় পরিণত করা হবে, এটা যাতে না হয় আমরা তদন্ত করে দেখছি। এ রকম কিছু পাওয়া গেলে সরকারকে অ্যাকশনে যেতে হবে।
গতকাল রোববার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দলীয় নেতাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বুয়েটে সেদিন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। আর আমি রাজনীতি করি বলে বুয়েটে যেতে পারব না এটা কোন ধরনের আইন? কোন ধরনের নিয়ম?
আন্দোলন সরকার, পুলিশ পর্যবেক্ষণ করছে : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, বুয়েটে আন্দোলনের নামে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের তৎপরতা আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার নামে বুয়েটকে জঙ্গিবাদ, অপরাজনীতির কারখানায় পরিণত করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। সেই রকম হলে সরকারকে অ্যাকশনে যেতে হবে।
ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারে আলটিমেটাম : ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপরও গত বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান। প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এ আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তারা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা রাব্বিকে বহিষ্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আলটিমেটাম দেন। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েকটি দাবিও তুলে ধরেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা