চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ক্যামেরা ভাঙচুর
- চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
- ৩০ মার্চ ২০২৪, ০৩:০১
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ইউপি মেম্বার আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে টিসিবির পণ্য (চাল ও তেল) আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় তিন সাংবাদিক। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার হওয়া তিন সাংবাদিক হলেন মাইটিভি ও স্থানীয় দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর প্রতিনিধি মিঠুন মাহমুদ (৩২), দৈনিক খোলা কাগজের প্রতিনিধি মো: আজিজুর রহমান ডাবলু (৩৩) ও গ্রামের কাগজের প্রতিনিধি মো: তুহিনুজ্জামান তুহিন (৩০)। এ ঘটনায় রাত সাড়ে ৯টায় মিঠুন মাহমুদ বাদি হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনকে আসামি করে জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রশিদ ভুয়া নামে কার্ড তৈরি করে টিসিবির পণ্য আত্মসাৎ করেছেন বলে খবর পান সাংবাদিকরা। বিকেলে সরেজমিন সংবাদ সংগ্রহ করতে যান সাংবাদিক মিঠুন মাহমুদ, আজিজুর রহমান ডাবুল ও তুহিনুজ্জামান তুহিন। এসময় ওই মেম্বারের বাড়ির রান্নাঘরে টিসিবির দুই বস্তা চাল ও বেশ কয়েক বোতল তেল পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ইউপি মেম্বার আব্দুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি গালাগালি শুরু করে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। পরে তার নেতৃত্বে তার ভাই তরিকুল ইসলাম তরি, আব্দুর রশিদের ছেলে আমির হামজা অঙ্কন, মৃত মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে মো: হাসিবুর রহমান সুমনসহ অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জন সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। তারা সংবাদ সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত ক্যামেরা, মাইক্রোফোন বুম ও মোবাইল ভাঙচুর করে।
স্থানীয়রা জানান, ইউপি মেম্বার আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের রেকর্ড রয়েছে। গর্ভকালীন ভাতার কার্ড করে দেয়ার নাম করে ভুক্তভোগী অনেক নারীর কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে কার্ডবাণিজ্য করেছেন। তার কাছে নাগরিক সেবা নিতে গেলে তিনি টাকা দাবি করেন।
হামলার শিকার সাংবাদিক মিঠুন মাহমুদ বলেন, গোপনে খবর পাই মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও মৃত ফকির চাঁদের ছেলে আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন ধরে কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে অন্য মানুষের ভুয়া নাম ব্যবহার করে কার্ড তৈরি করে টিসিবির পণ্য আত্মসাৎ করছেন। তিনি সম্প্রতি বেশ কয়েক জনের টিসিবির পণ্য তুলে বাড়ি নিয়ে গেছেন। এমন সংবাদ পেয়ে আমরা তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়েছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মেম্বার আব্দুর রশিদের স্ত্রী বলেন, তার স্বামী টিসিবির পণ্য তুলে এনে রান্নাঘরে রেখেছেন। আমরা রান্নাঘরে গিয়ে টিসিবির দুই বস্তা চাল আর বেশ কয়েক বোতল তেল দেখতে পাই। এক পর্যায়ে তার নেতৃত্বে ৭-৮ জন আমাদের ওপর হামলা চালায় ও সংবাদ সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত ক্যামেরা, বুম, মাইক্রোফোন মোবাইল ভাঙচুর করে।
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, টিসিবির ডিলারদের কাছ থেকে অনেকজন তেল ও ডাল নিলেও চাল নেয়নি। আমি সেখান থেকে দুই বস্তা চাল কিনে এনেছিলাম এলাকার গরিব মানুষকে দেয়ার জন্য।
মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, ঘটনাটি তিনি এখনো শোনেননি। তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম জাবীদ হাসান বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখব, যদি মামলা নেয়ার মতো হয়, তাহলে মামলা রেকর্ড করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা মমতাজ বলেন, আমি বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। এ বিষয়ে আমি খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
এদিকে, ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জীবননগর প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম আর বাবু বলেন, যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়ে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, মোবাইল ভাঙচুর করেছে, লাঞ্ছিত করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
এ ঘটনায় প্রশাসনিকভাবে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
জীবননগর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি জাহিদ বাবু বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে সাংবাদিকের ওপর হামলা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা