বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু দূষণে
বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য বিশ্বব্যাংকের- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশ উদ্বেগজনক মাত্রার দূষণ এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। যা তুলনামূলক বেশি ক্ষতি করছে দরিদ্র, পাঁচ বছরের কম শিশু, বয়স্ক এবং নারীদের। দেশে বছরে দূষণে অকালে মারা যান ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষ বলে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, বায়ুদূষণের কারণে বছরে ৫.২ বিলিয়ন দিন অসুস্থতায় অতিবাহিত হয়। এসব পরিবেশগত কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির ১৭.৬ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ঘরের এবং বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যা ৫৫ শতাংশ অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী এবং যা ২০১৯ সালের জিডিপির ৮.৩২ শতাংশের সমপরিমাণ।
রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে গতকাল এই রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মশালায় এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রেন্টমেন্ট অ্যানালাইসিস’ (সিইএ) নামে এ রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ এবং ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং এই রিপোর্টের সহ-প্রণেতা আনা লুইসা গোমেজ লিমা। পরে একটি মুক্ত আলোচনা হয়।
প্রকাশিত এ রিপোর্ট অনুযায়ী বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন এবং সীসাদূষণ বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি অকাল মৃত্যুর কারণ। সীসা বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। এর ফলে বছরে প্রাক্কলিত আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২ কোটি পয়েন্ট। গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। যা নারী ও শিশুদের বেশি ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য ও অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির গুণগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সময় মতো এবং জরুবি হস্তক্ষেপ, উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) এবং সীসাদূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রতি বছর ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকাল মৃত্যু ঠেকাতে পারে। সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ, রান্নায় সবুজ জ্বালানি ব্যবহার এবং শিল্প-কারখানা থেকে দূষণ বোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ বায়ুদূষণ কমাতে পারে। পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার জন্য সুশাসন জোরদার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে এই রিপোর্টে পরিবেশগত অগ্রাধিকারসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে, বিভিন্ন পদক্ষেপের মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ, পরিবেশ নীতি পদ্ধতিগুলোর বৈচিত্র্যকরণ ও জোরদারকরণ, সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদারকরণ এবং সবুজ অর্থায়নের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ এর পরিবেশকে রক্ষা করতে পারে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই ব্যাপারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন প্রতিঘাত মোকাবেলায় পদক্ষেপ ও প্রকল্প চলমান আছে। তিনি বলেন, বিশ^ব্যাংকের এই প্রতিবেদনের সাথে আমার কোনো দ্বিমত নেই। তাদের এই প্রতিবেদন আমাদেরকে পরিকল্পনা প্রপ্রণ করতে সহায়তা করবে। আজ থেকে ছয় বছর আগে বিশ^ব্যাংক এমন প্রতিবেদন করেছিল।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের জন্য পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবেলা একই সাথে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার। আমরা পৃথিবীর নানা দেশে দেখেছি যে, পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে তা টেকসই হতে পারে না। তিনি বলেন, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করতে পারবে না। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
বিশ্বব্যাংকের আনা লুইসা গোমেজ লিমা বলেন, সময় মতো এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণের ধারা পাল্টে ফেলতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষা জোরদারে পদক্ষেপ এবং রান্নায় সবুজ জ্বালানির জন্য বিনিয়োগ ও অন্যান্য প্রণোদনা, সবুজ অর্থায়ন বাড়ানো, কার্যকর কার্বন মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং সচেতনতা বাড়ানো দূষণ কমাতে পারে এবং এর ফলে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জন হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা