সিয়ামের পূর্ণতা পাপাচার বর্জনে
- লিয়াকত আলী
- ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
মাহে রমজানুল মোবারকের আজ ১৬ তারিখ। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার ও কামাচার পরিহার করার নাম সিয়াম। এটাই সাধারণ অর্থ। কোনো মুসলমান যদি শুধু এতটুকু পালন করে তবুও তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সিয়ামের তাৎপর্যের পরিপন্থী। শুধু দৈহিক চাহিদা পূরণ থেকে সংযমী হলে সিয়াম পালনের উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয় না। সিয়ামের পূর্ণতার জন্য পানাহার ও কামাচার বর্জনের পাশাপাশি পাপাচার থেকেও বিরত থাকতে হয়। এটাও সিয়ামের দাবি।
এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহুর বরাতে একটি হাদিস সঙ্কলন করেছেন ইমাম তিরমিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রোজা রেখে যে ব্যক্তি মিথ্যাচার ও অন্যায় আচরণ পরিহার করলো না , তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ এমন রোজা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নয়। সুতরাং পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনার পূর্ণাঙ্গ সুফল পেতে হলে অন্যায় কার্যকলাপ থেকেও বিরত থাকতে হবে। হাদিসটির আলোকে রোজার জন্য পানাহারের সাথে গুনাহের কাজগুলো বর্জনের গুরুত্ব পরিষ্কার হয়। পাপাচার বর্জন করতে না পারলে রোজা রাখা অর্থহীন হয়ে যায়।
কিন্তু যার পক্ষে পাপাচার বর্জন সম্ভব হয় না, কিংবা যে ব্যক্তি রোজা রেখেও অন্যায় কাজ করে, তাকে কী পরামর্শ দেয়া যায়? তার রোজার পরিণতি কী হবে? যেমন গিবত বা পরচর্চা একটি পাপাচার। কুরআন মাজিদে এটাকে মরা ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমতুল্য বলা হয়েছে। কোনো রোজাদার যদি গিবতের পাপে লিপ্ত হয় , তা হলে তার রোজা নষ্ট হয়ে যাবে কি? প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ফকিহ আধ্যাত্মিক সাধক হজরত সুফিয়ান সওরী রহমাতুল্লাহি আলাইহির অভিমত ছিল গিবতের কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যায়। তেমনি ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার অমর গ্রন্থ এহয়াউল উলুমে প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হজরত মুজাহিদ ও হজরত ইবনে সীরীনের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, গিবত রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ। এসব মনীষী প্রথমত হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণিত হাদিস দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন। দ্বিতীয়ত, তারা যুক্তি দেন, পানাহার মৌলিকভাবে হালাল। অথচ রোজার কারণে তা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মিথ্যাচার , গিবত ইত্যাদি কখনোই বৈধ নয়। রোজায় এসবের কদর্যতা আরো বেড়ে যায়। রোজা রেখে এগুলোতে লিপ্ত হওয়া আরো গুরুতর অন্যায়। সুতরাং মৌলিকভাবে হালাল ও বৈধ পানাহার যদি রোজা নষ্টের কারণ হয়, তা হলে যেসব কাজ কোনো অবস্থাতেই বৈধ নয়, তাতে লিপ্ত হওয়ার কারণে রোজা নষ্ট হওয়া খুবই যুক্তিসঙ্গত। অন্যান্য মণীষী এ যুক্তির গুরুত্ব স্বীকার করেও আইনের ক্ষেত্রে সাবধানী মন্তব্য করার মূলনীতি আনুসারে বলতে চান, অন্যায় কর্ম ও পাপাচারের কারণে সিয়াম সাধনার সুফল কমে যায়। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু রোজা নষ্ট হয়ে যাওয়ার রায় দেয়া সমীচীন হবে না।
হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ ব্যাপারে একটি দার্শনিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন । তিনি বলেন, রোজার একটি কাঠামোগত স্বরূপ রয়েছে। তেমনি রয়েছে একটি উদ্দেশ্যগত স্বরূপ । সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার ও কামাচার বর্জন রোজার কাঠামোগত স্বরূপ। সেই অনুযায়ী রোজায় পানাহার যদিও লঘু অন্যায়, কিন্তু তা কাঠামোগত স্বরূপের পরিপন্থী। আর পাপাচার যদিও গুরুতর অন্যায়। কিন্তু তা রোজার কাঠামোগত স্বরূপের পরিপন্থী নয়। রোজার উদ্দেশ্যগত স্বরূপ হলো পানাহারের পাশাপাশি পাপাচার বর্জন করা। সুতরাং গুনাহের কাজ রোজার উদ্দেশ্যগত স্বরূপের খেলাপ। আর অন্যায় কাজ ও আচরণের কারণে রোজার উল্লেখযোগ্য সুফল থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে। উল্লেখযোগ্য বলা হলো এ কারণে যে, এ ধরনের রোজাও অর্থহীন নয়। কেয়ামতের দিন তাকে এ মর্মে প্রশ্ন করা হবে না যে, সে কেনো রোজা রাখেনি। বরং প্রশ্ন করা হবে, রোজা কেন ত্রুটিপূর্ণ করে রেখেছে। অতএব এমন বিভ্রান্তিতে পড়া যাবে না যে, যে ব্যক্তি পাপাচার বর্জনে অক্ষম, তার রোজা রাখা অনর্থক। শরিয়তের অন্যান্য ইবাদতের বেলায়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য। পাপাচার ছাড়তে না পারলেও রোজা রেখে যেতে হবে। কেন না এতেও আল্লাহর হুকুম নামমাত্র হলেও পালন করা হবে। আর শরিয়তের প্রতিটি ইবাদতের রয়েছে বিশেষ কল্যাণ ও প্রভাব। এভাবে রোজা রাখতে রাখতে একসময় তার মধ্যে পাপাচার বর্জনের প্রেরণা জাগতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা