২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মুদ্রানীতির কারণে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে সরকারের ঋণ

বছর শেষে সুদব্যয় লাখ কোটি টাকা ছাড়ার আশঙ্কা
-

সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আর সুদব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে সরকারের ঋণ। আর বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকারের ঋণের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকলে বছর শেষে এ সুদব্যয় লাখ কোটি টাকা ছেড়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হয়েছে। আর সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্যই হলো বাজারে টাকার প্রবাহ কমিয়ে আনা। আর টাকার প্রবাহ কমানোর প্রধান উপায় হচ্ছে নীতি সুদহার বাড়ানো। ইতোমধ্যে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এতে বেড়ে গেছে ব্যাংক ঋণের সুদহার। আর ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় কম সুদে সরকার আর ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক খাত থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিতেও সুদহার ডাবল ডিজিট অতিক্রম করেছে। যেমন- গত ২৯ জানুয়ারি ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে চার হাজার ৯৮ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়। এতে সুদ গুনতে হয় ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর একই দিনে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ৪১৩ কোটি টাকা ঋণ নিতে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ সুদ গুনতে হচ্ছে। আর ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের মাধ্যমে ঋণ নিতে পরিশোধ করতে হয় ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। যেখানে গত বছরের জানুয়ারিতে সব ধরনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ১০ শতাংশের মধ্যে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাজেটের আকার বড় হচ্ছে। বাড়ছে সরকারের ব্যয়। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে ঘাটতি বাজেট। আর এ ঘাটতি মেটাতে নিতে হচ্ছে দেশী-বিদেশী ঋণ। এতে প্রতি বছরই ঋণ বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে ঋণের সুদ। আবার এ সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে ঋণ নিয়ে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জন্য প্রস্তাবিত পরিচালন বাজেটের বেশির ভাগ অর্থাৎ ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয় সুদ পরিশোধে, যা গত অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৮০ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সরকারের রাজস্ব ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু যে হারে ব্যয় বাড়ছে সেই হারে আয় বাড়ছে না। এতে বাজেট ঘাটতি বাড়ছে। আর বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতাও বাড়ছে। উচ্চ সুদে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পাশাপাশি ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে সুদব্যয়। এটি অব্যাহত থাকলে সামনে সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা ও সুদ পরিশোধেই বাজেটের সমুদয় অর্থ ব্যয় করতে হবে। সঙ্কুচিত হয়ে যাবে উন্নয়ন বাজেট।

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার সামগ্রিক বাজেটের মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছিল চার লাখ ৮৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা; যা চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ছিল চার লাখ ১৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এ অনুন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে শুধু ঋণের সুদেই ব্যয় হবে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা; যা একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৯ শতাংশ। অনুন্নয়ন বাজেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন পরিশোধে ৮০ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা, শতকরা হিসাবে ১৬.৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা ও ঋণের সুদ মিলে ব্যয় হবে এক লাখ ৭৪ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা; যা গত অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৫৪ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। এক বছরে এ দুই খাতে বেড়েছে ২০ হাজার ৯৩ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা জানান, প্রতি বছরই সরকার বাজেটের আকার বাড়াচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আয় বাড়াতে পারছে না। এ কারণে ঋণ নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে বাজেট বাস্তবায়নে। ঋণ নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সুদব্যয়। যেমন- গত সাত অর্থবছরের ব্যবধানে সুদব্যয় বেড়েছে শতভাগের বেশি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে সুদব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। এ হিসেবে সাত অর্থবছরের বছরের ব্যবধানে তা বেড়েছে ৬১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসেবে ১৮৫ ভাগ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতে টাকার সঙ্কট চলছে। প্রায় প্রতিদিনই কিছু কিছু ব্যাংক ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে চলছে। যেমন- গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছে ২০ হাজার ৬২ কোটি টাকা। ৩০ জানুয়ারি ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছে ২০ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। আর ৩১ জানুয়ারি ব্যাংক থেকে ধার নেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলোর তহবিল অবস্থাই খারাপ, এ মুহূর্তে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সরকারের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় না হলে আর সরকারের ব্যয় ঠিক থাকলে ব্যাংক থেকে বেশি হারে ঋণ নিতে হবে। আর এ ঋণ নিতে সরকারের বেশিমাত্রায় সুদ ব্যয় বেড়ে যাবে। আর এটি অব্যাহত থাকলে বছর শেষে সুদব্যয় লাখ কোটি টাকা ছেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
‘ট্রাম্পের সাথে অভিন্ন ক্ষেত্র খুঁজে পাবেন অধ্যাপক ইউনূস’ তাজিকিস্তানকে হারাল বাংলাদেশ ছাত্র-জনতা বুকের রক্ত দিয়ে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে : মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি ফেরতের দাবি জানালেন আলাল টানা দুই ওভারে ২ উইকেট শিকার তাসকিনের ‘প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন’ আমতলীতে কুকুরের কামড়ে ২৭ জন হাসপাতালে গুমের সাথে জড়িতরা রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না : প্রেস সচিব আরো ৯ দেশকে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার দিচ্ছে চীন জামায়াত দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চায় : সেলিম উদ্দিন কেউ বলতে পারবে না ১০ টাকার দুর্নীতি করেছি : মাসুদ সাঈদী

সকল