২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চালের দাম কমাতে কাজে আসছে না কোনো উদ্যোগই

দাম বেড়েছে ছোলা-ডাল-গরুর গোশতের
-


চলতি মৌসুমে দেশে রেকর্ড পরিমাণে আমন ধান উৎপাদন হয়েছে। বাজারে সরবরাহেও কোনো ঘাটতি নেই। তবুও রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে চালের দাম। দাম কমাতে বাজার মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদফতর। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও কমছে না চালের দাম। এর সাথে বেড়েছে রোজায় বহুল ব্যবহৃত ছোলা-ডাল ও গরুর গোশতের দাম। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরু (মিনিকেট) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৪ টাকা দরে। যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে সর্বোচ্চ ৬ টাকা বেড়েছে। মাঝারি (বিআর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়া কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ৫ দশমিক ৩৮, মাঝারি চাল প্রায় ৩ এবং মোট চালের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে মিনিকেট প্রতি বস্তা ছিল তিন হাজার ৬০০ টাকা। এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা দরে। মোটা চাল ব্রি-২৮ গত সপ্তাহে মানভেদে বস্তাপ্রতি বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা। বস্তায় ৫০ বা ১০০ টাকা কমলে সেটা খুচরা বাজারে কমবে না। পাইকার যদি আমার কাছে ৬৬ টাকা কেজি বিক্রি করেন, তাহলে তার মিলগেটে কেনা ৬৪ টাকা কেজি। তখন ৬৮ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি করব।

রমজানকে সামনে রেখে অস্থির হয়ে উঠেছে ছোলার বাজার। গত বছর প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, যা এক মাস আগেও একই দাম দেখা গেছে। ওই ছোলা এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় উঠেছে। একইভাবে প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ১০ টাকা বেড়ে ছোট দানার মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের মুগ ডালের কেজি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১৫০ টাকার মধ্যে ছিল। একইভাবে অ্যাংকর ডালের দামও বেড়েছে।
গত মাসে ৫৯৫ টাকা কেজিতে গরুর গোশত বিক্রি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন রাজধানীর শাহজানপুরের মাংস বিক্রেতা খলিল মিয়া। তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের কারণে ভোক্তা অধিদফতর থেকে গোশতের দাম সহনশীল পর্যায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। ফলে দাম ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে আসায় নি¤œআয়ের অনেকেই মাংস কেনেন। কিন্তু হুট করে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় আবার নি¤œ ও মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে গরুর মাংস। তবে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে মুরগির বাজার।
গত সপ্তাহে গরুর গোশত ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে গরুর কলিজা ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে ৭২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ব্রয়লার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে লেয়ারের দাম। গত সপ্তাহ এবং এ সপ্তাহেও ২৮০ টাকা দরেই লেয়ার বিক্রি হচ্ছে। কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সোনালী মুরগি এবং কেজিপ্রতি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কক মুরগি।
সরকার নির্ধারিত দামকে উপেক্ষা করে বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪৫ টাকা করা হয়েছে। একই সাথে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম ১০ টাকা এবং চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটের আটার দাম এখন ৬৫ টাকা। ময়দার দাম বেড়েছে হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। চিনির দামেও একই ধরনের অস্থিরতা। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ১৪৮ টাকা মূল্য থাকলেও বিক্রেতারা সেটা খুলে বিক্রি করছেন ১৫০-১৬০ টাকায়।
সবজির বাজারঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় ও প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষিরা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁয়াজের ফুলকি প্রতি মুঠো ২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, সাধারণ শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আর বিচিওয়ালা লাল শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাল আলু প্রতি কেজি ৭০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০ থেকে ১২০ টাকা ও ব্রুকলি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২১০ ও দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকা।
বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ। বাজারগুলোতে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, এক কেজি শিং মাছ (চাষের, আকার ভেদে) ৩০০ থেকে ৫০০, রুই মাছের দাম বেড়ে (আকার ভেদে) ৩৩০ থেকে ৫৫০, মাগুর মাছ ৫০০ থেকে ৭০০, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩৫০, পাঙাস ১৮০ থেকে ২০০, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০, বোয়াল মাছ ৪০০ থেকে ৬০০, কাতল ৩৩০ থেকে ৪৫০, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০, তেলাপিয়া ২২০, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০, মলা ৫০০, বাতাসি টেংরা ৯০০, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০, কাচকি মাছ ৪০০, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০, রুপচাঁদা ৮০০, বাইম মাছ ৬০০ থেকে ৮০০, সোল মাছ ৪০০ থেকে ৬০০, আড়ই মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ এবং কাইকলা মাছ ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement