এবারো আ’লীগের সাথেই নির্বাচনে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি!
কী হবে তা এখনো কেউ জানে না : জি এম কাদের- কাওসার আজম
- ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন গণনা চলছে। আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শেখ হাসিনা বা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ বেশির ভাগ দল। তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে রয়েছে মাঠের বিরোধী দলগুলো। এক দিন হরতাল ও তিন দিন অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর মাঝখানে দুই দিন বিরতি দিয়ে আজ থেকে ফের দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি রয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর। অন্য দিকে সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন করার জন্য ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শান্তি সমাবেশের নামে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টায় ক্ষমতাসীনরা। পাশাপাশি উভয় দল ও জোটের নেতারা কূটনৈতিক মিশনেও তৎপর রয়েছেন। নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজপথ গরম থাকলেও নীরব ভূমিকায় গত দুই মেয়াদে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। রাজপথে কর্মসূচি নেই; ঘরোয়া বৈঠক এবং কূটনীতিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে শীর্ষনেতাদের। কিন্তু আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক জাতীয় পার্টির অবস্থান কী তা এখনো অন্ধকারে। দলটির চিফ পেট্রোন ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এরই মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে মত দিয়ে দিয়েছেন। পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সরকারের সমালোচনা করে এলেও তা কমিটির কো-চেয়ারম্যানদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সাথেই নির্বাচনে যেতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থেকে নির্বাচনে অংশ নেয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। তখন দলটি ২৭টি আসন পায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপি-জামায়াতবিহীন নির্বাচন বর্জন করেছিলেন জাপার তৎকালীন চেয়ারম্যান এরশাদ। কিন্তু তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলের একাংশ নির্বাচনে অংশ নেয়। আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনী সমঝোতায় ৩৪টি আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আভির্ভূত হয় দলটি। বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন এরশাদ। বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের আওয়ামী লীগের সাথে জোট বেঁধে নির্বাচন করার বিষয়ে ততটা আগ্রহী না হলেও রওশনপন্থীরা এবারো নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে সক্রিয়। এরই মধ্যে রওশন এরশাদ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের সমর্থন এবং তাতে অংশগ্রহণের কথা বলেছেন জোরেশোরে। কথিত আছে জি এম কাদেরের সাথে থাকা দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কো-চেয়ারম্যানদের এক দু’জন বাদে সবাই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। এ ছাড়া দলের প্রেসিডিয়ামসহ বর্তমান সংসদ সদস্যদের অধিকাংশই নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে রওশনপন্থীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। গত বৃহস্পতিবার চলতি একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশনের শেষে দলটির ১৬ জন এমপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেছেন।
দলটির এক নেতা নাম না প্রকাশে বলেই ফেললেন, কোনোভাবে যদি আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিতই হয়, সেখানে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে না যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জি এম কাদেরের সাথে এখন যাদের ঘনিষ্ঠভাবে দেখা যাচ্ছে তাদের বেশির ভাগই রওশন ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। দলের ভাঙন ঠেকাতে জি এম কাদেরকে নির্বাচনে যাওয়ার চাপ রয়েছে।
গত বুধবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মাশরুর মওলার রাজধানীর গুলশানের বাসভবনে নৈশভোজে অংশ নেন ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। এতে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু হাইকমিশনের পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সাইমন পেইজ অংশ নেন।
ওই দিন জাপা চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মাশরুর মওলা একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক জানতে চেয়েছিলেন জাপা আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে কি না? জবাবে জি এম কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচন নিয়ে দলের নেতাদের নিজস্ব প্রস্তুতি ও ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের ভাঙন দেখা দেবে। তাই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে।
অবশ্য এর দুই দিন পর গত শুক্রবার জাতীয় পার্টি থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সাথে বৈঠকে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে বলে গণমাধ্যমে যে যে বক্তব্য প্রকাশ হয়েছে, তা সঠিক নয়। যদিও এ বিষয়ে মাশরুর মওলার সাথে কথা বলা যায়নি।
তবে দলটির অন্যতম কো-চেয়ারম্যান এবং ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা সংবিধানের আলোকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। তবে চাই যেন সব দল এতে অংশ নেয়। অমীমাংসিত কোনো কিছু থাকলে সংলাপ বা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টির একটি অংশ মনে করে এবারের নির্বাচন অনেকটা ২০১৪ সালের স্টাইলেই অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি-জামায়াত অংশ নেবে না। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো বিরোধী দলের আসনে বসবে জাতীয় পার্টি। এ জন্য সারা দেশের বিভিন্ন আসনের জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। জাতীয় পার্টির নেতা না হয়েও এমনকি অন্য দলের একাধিক ব্যক্তি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে লাঙ্গল কাঁধে তুলে এমপি হয়েছেন। এবারো এমপি হতে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।
এ দিকে গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে নিজের লেখা দু’টি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, নির্বাচন যদি সঠিকভাবে হয় তবেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথেই আছি। কী হবে তা এখনো কেউ জানে না, যদি নির্বাচন হয় তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঘোষণা না দিয়ে চলে যাবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথেই আছি। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচন যদি সঠিকভাবে হয় তবেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো। যদি আমরা মনে করি সঠিকভাবে নির্বাচন হচ্ছে না, তখন আমরা ঘোষণা দিয়েই নির্বাচন বর্জন করব। ঘোষণাটা আমাদের তরফ থেকেই আসতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথেই আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত হবে না, প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়া হবে। গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণা দেয়া হবে, এ কারণে আমরা নির্বাচন করছি বা করছি না।
জি এম কাদের বলেন, দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের লোক, আমরাই বানিয়েছি। তারা কোনো ভুল করলে অবশ্যই আমরা বলব। কথা বললেই শাস্তি পেতে হবে? সে জন্য আইন করা হবে? আমি ভুল বলতে পারি কিন্তু আমার বলার অধিকার তো আছে। আমরা যেন কথা বলতে না পারি সে জন্য আইন করা হচ্ছে। সরকার হচ্ছে কেয়ারটেকারের মতো, ভুল করলে পরিবর্তন করতে চাইব না? বাংলাদেশের মানুষের এই অধিকার এখন আর নেই। গণতন্ত্র না থাকলে কোনো প্রকল্প গণমুখী হয় না তার প্রমাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বিবিসির দেয়া তথ্যে জানা গেছে, চার হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প, বছরে আয় করছে একশ’ কোটি টাকা। ১৫ বছর হচ্ছে এটির লাইফ। এটি কি বাস্তবসম্মত হলো? তা হলে আবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পের জন্য চুক্তি কেন? আসলে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নামে দুর্নীতির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। যেখানে বেশি দুর্র্নীতি করা যায় সেই প্রকল্প দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন হয়।
তিনি বলেন, যেসব দেশে একনায়কতন্ত্র থাকে সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, স্থিতিশীল সরকার থাকলে অনেক উন্নয়ন হয়। এক সরকার বেশি দিন থাকলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ঢেকে রাখতে পারে না। সরকার বা সরকারপ্রধান পরিবর্তন হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যদি অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় তাকেই স্থিতিশীলতা বলা যায়। স্বৈরশাসনে কখনোই স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। একটি সরকার বেশি দিন থাকাও অস্বাভাবিক ব্যাপার। একটি সরকার বেশি দিন থাকলে অস্থিতিশীলতার বীজ বড় হতেই থাকে। সরকার পরিবর্তন হলে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়, এসব কারণেই বিদেশী বিনিয়োগ আসে না। স্বাভাবিক নিয়মে সরকার পরিবর্তন হবে কিন্তু সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না, এটিই হচ্ছে স্থিতিশীলতা।
জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরীফা কাদের এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ, সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো: মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, গ্রন্থ দু’টির ওপর মূল আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সিনিয়র সাংবাদিক সফিকুল করিম সাবু, শাহজালাল ফিরোজ, বইয়ের প্রকাশক আবুল বাশার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা