২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আন্দোলনের মহাযাত্রায় কী করতে চায় বিএনপি

-

আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে এক দফা দাবিতে শেষ ধাপের আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের মহাযাত্রা শুরু হবে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে যে, মহাযাত্রার কর্মসূচিতে কী থাকছে।

জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে ঘিরে আবির্ভূত হবে মহাযাত্রার কর্মসূচি, যার মূল লক্ষ্য থাকবে তফসিল ঘোষণা ঠেকানো। সেজন্য ২৮ নভেম্বরের পর তিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত টানা কঠোর কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য বিএনপির। এর অংশ হিসেবে তফসিলের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই এই কর্মসূচি শুরু করতে চায় দলটি। এ সময় ঢাকার পাশাপাশি সমগ্র দেশজুড়েও আন্দোলন চলবে। তবে রাজধানীর ওপর থাকবে আন্দোলনের মূল ফোকাস। নভেম্বরের শুরুতে এমনকি মহাসমাবেশের পরের দিন থেকেও শুরু হতে পারে মহাযাত্রার ওই কর্মসূচি, যা ঘেরাও দিয়ে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভবনমুখী ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে।

বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের এই পর্যায়ে ঘেরাও ছাড়াও বিক্ষোভ, অবরোধ এমনকি হরতালের কর্মসূচিও আসতে পারে। একেবারে শেষ পর্যায়ে দেশজুড়ে চলতে পারে লাগাতার অবরোধের কর্মসূচি। নেতাকর্মীরা যে যেখানে থাকবেন, সেখান থেকে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।

এ দিকে বিএনপির চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের সঙ্গে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যও। ছাত্র জোটের চূড়ান্ত লক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় ছাত্র সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের, যদিও দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে এক দফার আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও শরিকরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত বুধবার ঢাকায় জনসমাবেশ করে বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ওই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে মহাযাত্রা শুরু হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাবো না। অনেক বাধা আসবে, বিপত্তি আসবে। সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছুটে যেতে হবে।

২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালিত হবে। এ লক্ষ্যে বিএনপির শরিকরাও প্রস্তুতি শুরু করেছে। জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ নেবেন। এই কর্মসূচি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে চাই। সরকারের কাছে মহাসমাবেশের বার্তা হবে- অবিলম্বে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে তারা একটা কার্যকরী রাজনৈতিক উদ্যোগ নেবে। তারপরও সরকারের যদি বোধোদয় না হয়, পরের দিন থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজপথে নেমে আসবে। স্বীকৃত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যে ফর্মগুলো রয়েছে যেখানে অবস্থান, বিক্ষোভ, ঘেরাও, অবরোধ এমনকি হরতাল পর্যন্ত আছে- পর্যায়ক্রমে সেগুলো আমরা অ্যাপ্লাই করব। তবে আমরা কখন কোনটাতে যাব- সেটা নির্ভর করবে সরকার ও প্রশাসনের আচরণের ওপর। আমাদের লক্ষ্য, শেষ পর্যন্ত পুরো আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখা। আমরা সরকারের উসকানি, সহিংসতা এড়িয়ে কর্মসূচি করতে চায়- যেন লক্ষ লক্ষ মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সরকার যদি দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্দোলনকে নিঃশেষ করতে চায়, তাহলে সে চিন্তা হবে খুবই হটকারী এবং তা সরকার ও সরকারি দলের জন্য বুমেরাং হতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে সহিংসতার পুরো দায়-দায়িত্ব তাদেরকেই বহন করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, আমরা মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা আশা করছি, এরপরের কর্মসূচির আগেই সরকারের বোধদয় হবে, তারা পদত্যাগ করবেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন, দেশকে সঙ্কটের হাত থেকে উদ্ধার করবেন। এটা আমরাই শুধু চাই না, আন্তর্জাতিক বিশ্ব চায়, যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে তারা সবাই চায়। যদি সরকারের বোধহয় না হয়, তাহলে আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি চলবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা বিএনপির চলমান আন্দোলনে সহায়ক হলেও নেতাকর্মীদের রাজপথে থেকেই কর্মসূচি সফল করতে হবে। এখান থেকে দলটির পিছু হটা কিংবা ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। যদিও বিএনপির চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন শুরু হলে ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে যেমন তাদেরকে মাঠে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতার, মামলা, নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতি অতিক্রম করেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং তা সফল করা বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা। বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাবেন এবং মাঠে থেকে আন্দোলন সফল করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement