অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের ৩টি ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিট খারিজ
সব মামলার বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৯ জুন ২০২৩, ০০:২৪
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের তিনটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে করা দুটি রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি সহিদুল করিম এবং বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ধারা তিনটি হলো- ২০০১ সালের আইনের ৯, ১৩ এবং ১৪।
এ রায়ের ফলে ২০১২ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে দেশের বিভিন্ন দেওয়ানি আদালতে বিচারাধীন বা অনিষ্পন্ন সব মোকদ্দমা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এসব মোকদ্দমা বাতিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতের কোনো আদেশের প্রয়োজন পড়বে না। অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে সব মামলা এখন থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে। আর ট্রাইব্যুনালে মামলা চলা অবস্থায় অথবা সম্পত্তির মালিককে সম্পত্তি ফিরিয়ে (অর্পণ) দেয়ার আগ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক সে সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। আইনের বিধান অনুযায়ী ইজারাও দিতে পারবেন বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী এবং অ্যাডভোকেট মো: ওমর ফারুক। ভূমি সচিবের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
খুলনার শ্যামল কুমার সিংহ রায় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ এর ধারা ১৩ এবং ১৪ চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে রিট দায়ের করেন। অন্য দিকে চট্টগ্রামের মো: মশিউর রহমান বেগও একই সালে রিট আবেদন করেন।
রিটে ধারা ৯, ১৩ এবং ১৪ চ্যালেঞ্জ করেন। তারা উভয়ই তাদের দাবি করা সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১-এর তফসিল (ক) ভুক্ত হওয়া অবৈধ বলে তা বাতিলের আবেদন করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে মামলা দুটিতে রুল জারি করেন আদালত। পরবর্তীতে রুলের শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রুল খারিজ করে রায় ঘোষণা করলেন আদালত।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ এর তিনটি ধারা ৯, ১৩ ও ১৪ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। দুটি রিটের এইসব ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছিল। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ রুলটি ডিসচার্জ (খারিজ) করে দিয়েছেন। এর ফলে যে রিটের মাধ্যমে তারা তিনটি ধারাকে সংবিধান পরিপন্থী দাবি করেছিল সেটি কিন্তু এখন সংবিধান পরিপন্থী নয়। বরং আইনটি যথাযথভাবে করা হয়েছে। কারণ জেলা প্রশাসকের যদি এই প্রত্যর্পণ সম্পত্তি লিজ দেয়ার ক্ষমতা না থাকে তাহলে সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাবে। কাজেই এটা সরকারের স্বার্থে জনগণের স্বার্থেই করা হয়েছে।
শুনানিতে মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, সম্পত্তির অধিকার একটি মৌলিক অধিকার এবং তা সংবিধান কর্তৃক নিশ্চয়তাকৃত। সুতরাং রাষ্ট্র বা সরকারের কোনো কর্মকর্তা বা কোনো কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করতে পারবে না। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট সব সময়ই মৌলিক অধিকারের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ এর ধারা ৯, ১৩ এবং ১৪ ধারা অনুযায়ী আবেদনকারীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। সুতরাং আইনের উক্ত ৩টি ধারা বাতিলযোগ্য।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, রিট আবেদনকারীদের বর্তমান মামলা ২টি করার কোনো আইনগত কারণ নেই। কারণ বর্ণিত সম্পত্তি ২টি অর্পিত সম্পত্তি। তারা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১-এর অধীন ট্রাইব্যুনালে মামলা করে তাদের প্রতিকার পেতে পারেন। ইতোমধ্যে তারা দুজনেই ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। সেখানে আইনের ২৫ ধারা অনুসারে ভূমি সম্পর্কিত যেকোনো প্রতিকার পেতে পারেন। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ তাদের জন্য ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এক বিশেষ প্রতিকারের ব্যবস্থা করেছে। ফলে আইনের ধারা ১৩ অনুসারে দেওয়ানি মামলা অ্যাবেইটমেন্ট হলে তাদের কোনো ক্ষতির কারণ নেই।
তিনি আরো বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১-এর ‘ক’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি ইজারা প্রদানে জেলা প্রশাসককে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, না হলে ওই সম্পত্তি নষ্ট, ধ্বংস এবং বেহাত হওয়ার এবং সরকারের রাজস্ব হানির আশঙ্কা রয়েছে। ওই আইনের অধীন প্রতিকারের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তারা কৌশলে আইন চ্যালেঞ্জ করে রিট মামলা দুটি দায়ের করেন।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, বর্ণিত সম্পত্তি ২টি অর্পিত সম্পত্তি। সুতরাং ‘ক’ তফসিলভুক্ত হওয়া আইনত হয়েছে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ অনুযায়ী তাদের প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল দিতে পারে, কিন্তু তারা সম্পত্তির অধিকার বলবৎকরণের জন্য কৌশলে জুডিশিয়াল রিভিউর অধীন আইন চ্যালেঞ্জ করছেন। সুতরাং মামলা ২টি খারিজযোগ্য। ধারা ১৩ অনুসারে দেওয়ানি মামলা অ্যাবেটমেন্ট হলে তাদের কোনো ক্ষতির কারণ নেই। কারণ সব প্রতিকার ট্রাইব্যুনালই দিতে পারে।
২০০১ সালে প্রণীত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০১২ সালের কার্যকর হওয়ার পর সরকার ওই বছর ৮ এপ্রিল অর্পিত সম্পত্তি তফসিলভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে।