মূল্যস্ফীতির চাপে পড়বে মানুষ বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন পণ্যের ওপর নতুন করে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে আমদানি শুল্ক। আবার কয়েক বছর ধরে কিছু পণ্যের কর রেয়াত দেয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ বাজেট পাস হলে আগামীতে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী, শিল্প উদ্যোক্তা। তারা বলেছেন এমনিতেই ডলার সঙ্কট চলছে। আগে যেসব পণ্য আমদানিতে প্রতি ডলারের জন্য ব্যয় হতো ৮০ টাকা, তা এখন ১১০ টাকা উঠে গেছে। এর ওপর জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আগেই বাড়ানো হয়েছে। সবমিলে এমনিতেই ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, এর ওপর বর্ধিত করের বোঝা চাপানোর ফলে প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামই বেড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ আরো বেড়ে যাবে। বাড়বে জনভোগান্তি।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বাজেটের এক নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করার মতো কোনো পদক্ষেপ নেই। এটি বিশাল অঙ্কের একটি ঘাটতি বাজেট। সরকার যদি গত বছরের মতো বাজেট বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নয় তাহলে মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টানতে পারবে না।
জ্বালানি খাতের কথা উল্লেখ করে গোলাম রহমান বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে অব্যবস্থাপনা, অপব্যয়, অপচয় এসব দূর করতে হবে। কোনো ক্রমেই মূল্যবৃদ্ধি করা যাবে না। যেসব কারণে জ্বালানি খাত দেউলিয়া হচ্ছে, সেসব কারণ থেকে সরকার যেন সরে আসে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনা না করলে আগামীতে জমি ও ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে। কেননা বাজেটে জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় উৎসে আয়কর বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্ট, পাথর, টাইলস, লিফট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, কেবল, কিচেনওয়্যারসহ কমপক্ষে ১০-১২টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই পুরো চাপ গিয়ে পড়বে ফ্ল্যাটের ক্রেতার ওপর। তাই এসব পণ্যের দাম সহনশীল না রাখলে আবাসন শিল্পে সঙ্কট তৈরি হবে।
রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, রিহ্যাব জাতীয় বাজেট উপলক্ষে আবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন হয়নি। বিশেষ করে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ, ফ্ল্যাটের সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থা চাঙ্গা করতে পুরনো ফ্ল্যাটে নিবন্ধন ব্যয় কমানো, বিশেষ তহবিল গঠনসহ কোনো দাবির প্রতিফলন হয়নি। উদীয়মান এই খাতে নানা রকম কর আরোপ ও সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে দেশের আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নানাভাবেই পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। শুধু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। শিল্পের গ্যাসের দাম এক লাফে প্রায় ২০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছিল জ্বালানি তেলের দাম। সেই সাথে বেড়েছিল বিদ্যুতের দাম। এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। যার প্রভাব ইতোমধ্যে ভোক্তার ওপর পড়েছে। এখন নতুন করে কর বাড়ানোর ফলে আবারো পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। যার প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপরই পড়বে।
বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, খেজুরের আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এতে খেজুরের দাম বেড়ে যাবে। শিক্ষার্থীসহ সবধরনের মানুষের অতি প্রয়োজনীয় কলম উৎপাদনে কর অব্যাহতি ছিল। এখন তা তুলে দেয়ায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসানো হয়েছে। প্লাস্টিকের তৈরি থালা, বাটি ও অন্যান্য পণ্যে বর্তমানে ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যের ওপর ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মোবাইলের ওপর আড়াই শতাংশ ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডারের আমদানি কর ছাড় তুলে দেয়া হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন পণ্যের ওপর নতুন করে কর বসানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে করের পরিধি। আবার তুলে দেয়া হয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে আসা কর রেয়াত সুবিধা। এসব কারণে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দামই আরেক দফা বেড়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছে।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন গতকাল প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমদানিযোগ্য ২৩৪টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক এবং ১৫১টি পণ্যের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে স্থানীয় শিল্প সঙ্কটে পড়বে। এই মুহূর্তে আমাদের ডলারের সঙ্কট আছে। এই সঙ্কটের সময় বিদেশী পণ্য আনতে চাই কি চাই না? আমার মনে হয়, এটা সময় নয়। এই মুহূর্তে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিয়েই আমাদের এগোতে হবে। আমরা একটা কথা বারবার বলেছিলাম, ডলার সঙ্কটের কারণে আমরা বিদেশী অনেক পণ্যই আনতে পারিনি। আমদানি বিকল্প পণ্য দেশে যত বেশি উৎপাদন করতে পারব, তত বেশি আমদানির ওপর চাপ কমবে। তাই স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া এবং এসব পণ্যের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহযোগিতা দেয়া, এটা করা হলে আগামী দুই বছর পর দেখা যেত অনেক পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীন বলেন, বাজেটে খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপরে খুব বেশি প্রভাব পড়ে না। এটা মূলত আমদানি-রফতানিকারকদের ওপরে পড়ে। কোনো পণ্যের দাম খুব বেশি বেড়ে গেলে এসআরও জারি করে শুল্ক কমিয়ে দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে। তেমনি দাম কমে গেলে আমদানি বন্ধ করে দাম বাড়ানোর সুযোগও আছে। ফলে বাজেট হলেই যে এতে সাধারণ মানুষের ওপর খুব প্রভাব পড়বে এমনটি মনে করেন না এই ব্যবসায়ী।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা