ঢাকা শহরেই ডেঙ্গু বাড়ছে বেশি
সর্বত্র মশার ওষুধ দেয় না- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
ঢাকা শহরেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ছাড়াও এই শহরের এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে বছরের বেশির ভাগ দিন নানা জায়গায় পানি জমে থাকে। এসব স্থানে ওষুধ না দেয়ায় খুব সহজেই ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা ডিম ছাড়ে এবং নিয়মিত এক জায়গা থেকেই বংশ বৃদ্ধি করছে। ঢাকার এমন অনেক জায়গায় পানি জমে থাকলেও চলাচলের জন্য রাস্তা না থাকায় নির্বিঘেœ মশারা ডিম ছেড়ে বংশ বৃদ্ধি করতে পারছে। অন্য দিকে নির্মাণাধীন কোনো ভবনেই মশার ওষুধ দেয়া হয় না। সিটি করপোরেশনের মশকনিধন অভিযানের কর্মীরা সেখানে যান না। নির্মাণাধীন ভবনে মাসের পর মাস পানি জমে থাকে। সেখানকার পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে সহজেই এবং বাচ্চা ফুটে বড় হয়ে এরাই আবার ডিম পাড়ে। ভবন নির্মাণের সাথে যুক্তরাও সেখানকার জমে থাকা পানি পরিষ্কার করে না।
ঢাকা শহরের মশা নিয়ন্ত্রণে পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকায় রয়েছে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘ঢাকা মশক নিবারণী দফতর’; কিন্তু সেই দফতরের মশা মারার সক্ষমতা নেই। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সংস্থাটি। এই দফতরের চার পাশেই মশার প্রজনস্থল গড়ে উঠেছে। মশক নিবারণী দফতরের কর্মীরা বলছেন, ‘এই দফতরের মশা মারার কর্মীরা সিটি করপোরেশনের মশা মারার কাজে খাটছেন। তারা বসে থাকছেন না, কাজ করছেন।’ ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাশে বাস করেন আব্দুল খালেক। তিনি বলেছেন, ‘এরা কোনো কাজ করে না। খালি খালি এদের বেতন দেয়া হয়। এই দফতরটি তুলে দেয়া উচিত।’
অন্য দিকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ডেঙ্গু রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন। রোগীর চাপে রাজধানীর কোনো সরকারি হাসপাতালেই বেড ফাঁকা নেই। বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হলেও সিট পাওয়া যাচ্ছে। রোগীরা সেখানে যাচ্ছে; কিন্তু চিকিৎসা করতে গিয়ে খরচ করতে হচ্ছে প্রচুর টাকা।
গতকাল বুধবার সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯২৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের সবাই ঢাকার ৫৪ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এবং দেশের অন্যত্র হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে গতকাল বুধবার তিন হাজার ৩৮০ জন চিকিৎসাধীন আছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে মারা গেছেন ১২০ জন। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর রেকর্ড নেই। অপর দিকে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৫ জন মারা গেছেন। তবে কেবল অক্টোবর মাসেই ৬৫ জন মারা গেছেন এই রোগে।
রাজধানীতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই শত শত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এ ভাইরাসে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বহু নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার। দেখা গেছে, একই পরিবারের সবাই একসাথে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। সবার চিকিৎসা করতে গিয়ে পকেট খালি করে দিয়ে সম্পদ বিক্রিও করতে হচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও সরকারি হাসপাতালে এখন আর ডেঙ্গু রোগীদের জায়গা হচ্ছে না। কোনো কোনো হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তিও করা হয় না অতিরিক্ত বেড নেই বলে। শুধু চিকিৎসা পাওয়ার জন্য রোগীরা ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিতে রাজি হচ্ছেন। নগরীর মুগদা হাসপাতালে ফ্লোরিং করে অনেক রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীদের ফ্লোরিং করে চিকিৎসা দিতে পারলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মশারির ব্যবস্থা করতে পারছে না। ফলে এই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের থেকে জীবাণু নিয়ে হাসপাতালের অন্যান্য রোগীর কামড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তা ছাড়া এখান থেকে মশা লোকালয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা