স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী নামানোর পরামর্শ সিপিডির
- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
মহামারী করোনাভাইরাস রোধে আসন্ন লকডাউনে শিল্পকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের চলাচলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও আর্মড ফোর্স, সরকারের এজেন্সিগুলোকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নামানোর দাবি জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
গতকাল সোমবার সিপিডি আয়োজিত ‘কোভিড অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ: কিভাবে সামলাবো’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এ দাবি জানান গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, আমরা জানি ইতোমধ্যেই সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সুতরাং এর আলোকে এখন স্বাস্থ্যবিধিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কলকারখানায়, বাজারে স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে মাস্ক পরা সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, এ জন্য (স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে) আর্মড ফোর্স, সরকারের এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করতে হবে। সরকারের যেসব এজেন্সি রয়েছে, সেখানে লোকবল কম। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে অন্যান্য এজেন্সি থেকে লোকবল নেয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, প্রয়োজনবোধে সেনাবাহিনী ও আর্মড ফোর্সকে ব্যবহার করা যেতে পারে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। শিল্পকারখানা হোক, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হোক, এমনকি সাধারণ মানুষের চলাচলেও এনফোর্সমেন্টের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এটা এনফোর্সমেন্ট না হলে জারিমানা, এমনকি সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলে প্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার মতো ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা এই কর্মকর্তাদের দেয়া যেতে পারে।
আলোচনা শেষে সারসংক্ষেপ তুলে ধরে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আলোচনায় সুপারিশগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলোÑ স্বাস্থ্যবিধি, চিকিৎসা এবং অন্যান্য সহায়তা।
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে অনেকে বলেছেন জনসম্পৃক্ততা বড়ানোর জন্য। মাস্ক পরা এবং মাস্ক আরো বেশি পরিমাণে বিতরণ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম না হাওয়ার বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ এসেছে।’
ওয়েবিনারে বলা হয়, গত বছরের লকডাউন সাধারণ মানুষের আর্থিক পরিস্থিতি ও জীবিকার ওপর ঋণাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। এ সঙ্কট এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। বর্তমানের সংক্রমণ হার কমানোর জন্য কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভারসাম্য বজায় রাখাও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সূচনা বক্তব্যে মন্তব্য করেন, গত বছর থেকে এই বছর সংক্রমণের হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরে আমরা দেখেছিলাম লকডাউন বেশ ঢিলেঢালাভাবে হয়েছিল। তিনি উৎপাদন প্রক্রিয়া চলমান রাখা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
‘আমাদের করোনাভাইরাস নিয়েই বাঁচতে শিখতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন মো: শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি। তিনি টিকা প্রস্তুতকরণে দেশের ভেতরের সম্ভাবনার কথা চিন্তা করতে বলেছেন। বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবেলা সক্ষমতার কথা উল্লেখ করে তিনি সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে এর আগেও কোভিডের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রচেষ্টা থাকলেও তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হয়নি বলে মতামত দেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক ড আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী, বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান মনে করেন, লকডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরা অনেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য গণপরিবহন ব্যবহার করবেন, যা সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মন্তব্য করেন, লকডাউনের অর্থনৈতিক একটি প্রভাব রয়েছে; কিন্তু এটি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে বাধা দেবে। তিনি আরো বলেন, জীবন ও জীবিকার মধ্যে এখন জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়ার সময় এসেছে এবং এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড এ এস এম আলমগির; আইইডিসিআর উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন, ল্যাবএইড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ এম শামীম, বাংলাদেশ গার্মেন্টশ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) মহাসচিব ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সেক্রেটারি ফারুক আহমেদ।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খানসহ সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, গবেষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ অনেকে সংলাপে অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা