শেষ বিকেলের আক্ষেপ
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ৪৩০ ও ৪৭/৩ (২০ ওভার) উইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ২৫৯ (৯৬.১ ওভার)- জসিম উদ্দিন রানা চট্টগ্রাম থেকে
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:২৮
১৯৮৩ সালে এমন ধস দেখেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেবার অ্যান্টিগায় প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারতের বিপক্ষে তুলেছিল ৫৫০ রান। ৫ উইকেটে করেছিল ৫৪১ রান। ক্লাইভ লয়েডের দল পরের পাঁচ উইকেট হারায় ৯ রানে। ওই ইনিংসে চার ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছিলেন। বাকি ছয় ব্যাটসম্যান করেছিলেন ২৯ রান। কিন্তু রান বিবেচনায় ওই ধসের সাথে এবারের উইকেট হারানোর তুলনা চলে না। চট্টগ্রাম টেস্টেও তৃতীয় দিনে ২৩ বলের ব্যবধানে ৬ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৫৯ রানে।
চট্টগ্রাম টেস্ট নিশ্চিত স্মরণীয় হয়ে থাকবে মেহেদী হাসান মিরাজের। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির পর বল হাতে ৪ উইকেট। তার সাথে অন্য দুই স্পিনার নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে তৃতীয় দিনেও ছড়ি ঘুরাল বাংলাদেশ। কিন্তু আক্ষেপ হয়ে থাকল শেষ বিকেল। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে আত্মসমর্পণ করে এলেন টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাদমান ইসলাম। দিন শেষে হাতে ৭ উইকেট এবং ২১৮ রানে এগিয়ে থাকার পরও থেকে গেল শেষ বিকেলের আক্ষেপ।
সফরকারীদের শেষ ব্যাটসম্যানদেরই যেন অনুসরণ করলেন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তিন বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর এই অঘটনটি ঘটান রাকিম কর্নওয়াল। ক্যারিবিয়ান এ স্পিনার নিজের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে এলবিডব্লির ফাঁদে ফেলেন তামিমকে (০)। লাইনে না খেলে আড়াআড়ি ব্যাট ধরে ডিফেন্স করেন তামিম। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। মাঝে এক বল পর স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শান্ত। এরপর ১৪.১ ওভারে দলীয় ৩৩ রানে গ্যাব্রিয়েলের বলে সিলভাকে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ৭ রানে বিদায় হন ওপেনার সাদমান। দিনের বাকি সময়টা আর কোনো অঘটন ঘটতে দেননি অধিনায়ক মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহীম। দিনশেষে তারা অপরাজিত আছেন যথাক্রমে ৩১ ও ১০ রানে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব এই ম্যাচে আর মাঠে নামতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়। ফলে লিড বাড়ানোর বড় দায়িত্ব মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম, লিটন দাস ও মিরাজের ওপর। ২৮ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন কর্নওয়েল ও ১৩ রানে এক উইকেট গ্যাব্রিয়েলের।
এর আগে তৃতীয় দিনের শুরুতে তাইজুলের প্রথম বলেই সিøপে ক্যাচ দিয়ে বিদেয় হন দ্বিতীয় দিনে ১৭ রান থাকা বোনার। অব স্ট্যাম্পের কিছুটা বাইরেই বল ফেলেন তাইজুল। বলটি একটু বেশিই বাঁক নেয়। বোনার ব্যাট চালালে সেটি কানায় লেগে দ্বিতীয় সিøপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর তালুবন্দী হয়। ওই ওভারের চতুর্থ বলে আরো একটি উইকেটের মালিক হতে পারতেন তাইজুল। বোনারের জায়গায় আসা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মায়ার্সও একই কায়দায় সিøপে ক্যাচ দেন। কিন্তু বলটি উইকেটকিপার লিটনের গ্লাভসে হালকা লাগলে কিছুটা দিক পরিবর্তন হয়। তাতেই সিøপে দাঁড়ানো শান্ত ডজ খেয়ে বলটি তালুবন্দী করতে পারেননি।
দলীয় ৪০.৫ ওভারে এবং নাঈম হাসানের চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে বোকা বনে যান অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট। তার ঘূর্ণিতে ব্র্যাথওয়েট মনে করেছিলেন বলটি অফ স্ট্যাস্পের বাইরে চলে যাবে। ব্যাট উঁচিয়ে ধরলে বলটি আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। যাওয়ার আগে দলের হয়ে ১১১ বলে ১২টি চারের সাহায্যে ৭৬ রান করে যান।
তৃতীয় দিনে বল করতে এসে শুরুর ওভারেই উইকেট পান চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের বাতিঘর মেহেদী হাসান মিরাজ। নিজের ওভারের শেষ বলে এলবিডব্লিউ করেন আগ্রাসী মায়ার্সকে। ডেলিভারিটি ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে প্যাডে আঘাত হানে। একটু চিন্তিতই ছিলেন মায়ার্স। রিভিউ না নিয়ে ভুলই করেছেন। স্লো মোশনে দেখা গেছে বলটি ব্যাটে লেগেছে। ততক্ষণে আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না ৬৫ বলে ৭ চারে ৪০ রানা করা কাইল মায়ার্সের।
এরপরই চোখ রাঙানি দিচ্ছিলেন জার্মেইন ব্লাকউড ও জসুয়া ডি সিলভা। কিন্তু শেষ ছয় রানে পাঁচ উইকেট হারাতেই ২৫৯ রানে থামে সফরকারীরা। তখন ১৭১ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। ব্লাকউড করেন ৬৮, সিলভার ব্যাট থেকে আসে ৪২ রানের ইনিংস। তারা যোগ করেন ৯৯ রান। বাংলাদেশের হয়ে মেহেদি মিরাজ নিয়েছেন ৪ উইকেট। এ ছাড়া তাইজুল, নাঈম ও মোস্তাফিজ দু’টি করে উইকেট পেয়েছেন।
তৃতীয় দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৪৩০/১০ ও ৪৭/৩ (২০ ওভার) মুমিনুল ৩১*, মুশফিক ১০*, কর্নওয়েল ২/২৮, গ্যাব্রিয়েল ১/১৩)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৫৯/১০ (ওভার ৯৬.১) (ব্র্যাথওয়েট ৭৬, বোনার ১৭, মায়ার্স ৪০, ব্লাকউড ৬৮, সিলভা ৪২, মিরাজ ৪/৫৮, মোস্তাফিজ ২/১৪৬, নাইম ২/৫৪, তাইজুল ২/৮৪)।