০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

করোনায় গ্রামে ফেরা মানুষের জন্য বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন

সিপিডি, অক্সফাম ও ইইউর সংলাপ
-

কৃষিঋণ বিতরণে বর্গাচাষি এবং ত্রাণ বিতরণে করোনার কারণে গ্রামে ফেরা মানুষের জন্য বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। করোনা মোকাবেলায় ত্রাণ কর্মসূচির কার্যকারিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বরাদ্দ নির্ধারণের জন্য একটি সূচকের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার, জনসংখ্যা, বেকারত্বের হার ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে বহুমাত্রিক মাপকাঠি নির্ধারণ করতে হবে। ত্রাণ সেবা সংক্রান্ত প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া সুবিধাভোগী নির্বাচনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য বাস্তবায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রচার-প্রচারণার পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণসহ ত্রাণ কর্মসূচি কার্যকর করতে আরো পদক্ষেপের প্রয়োজন আছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আয়োজিত ‘করোনা ও আমফান মোকাবেলায় ত্রাণ কর্মসূচি এবং কৃষি প্রণোদনা : সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে এ কথা বলা হয়। ডাক দিয়ে যাই, পিরোজপুর ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই সংলাপটি গতকাল রোববার আয়োজন করা হয়।
সংলাপে বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ‘আমফানের’ মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় কৃষি পুনর্বাসন/প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারি সহায়তার অধিকতর কার্যকর ব্যবহার এবং অপচয় রোধে সার ও বীজের বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে এবং স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা, ফসল উৎপাদনের বিন্যাস অনুযায়ী বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। ইউনিয়ন/উপজেলাভিত্তিক একটি তথ্যভাণ্ডার (ডাটাবেজ) তৈরি করতে হবে, যেখানে কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদনের যাবতীয় তথ্য নিয়মিতভাবে সংগৃহীত হতে থাকবে। এতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সাহায্য দেয়া ও যোগ্য ব্যক্তি চিহ্নিত করা সহজতর হবে। সরকারি কৃষি প্রণোদনাগুলো যেন দুর্যোগে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে পৌঁছায় তা নিশ্চিতে জিও-এনজিও সমন্বয় বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষকের তালিকা হালনাগাদ করে নতুনভাবে কৃষিকার্ড বিতরণের উদ্যোগ নিতে হবে। নিবিড় তদারকির ভিত্তিতে কৃষকের জন্য জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কৃষি সহায়তাগুলো সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য মাঠ পর্যায়ে বরাদ্দকৃত সরকারি চাকরির নিরিখে কৃষি কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। কৃষিঋণ বিতরণে বর্গা চাষি এবং ত্রাণ বিতরণে গ্রামে ফেরা মানুষের জন্য বিশেষ উদ্যোগের প্রয়োজন আছে।
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ও মোস্তফা আমির সাব্বিহ সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। উপস্থাপনায় বলা হয়, করোনা ও আমফান মোকাবেলায় ত্রাণ এবং কৃষি পুনর্বাসন/প্রণোদনা কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ পরিলক্ষিত হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২,৫০০ টাকা মানবিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য এমন ৪,০০০ জনের একটি তালিকা জাতীয় পর্যায়ে পাঠানো হয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে প্রেরণকৃত তালিকার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ এই সহায়তা পেয়েছেন। যারা তালিকাভুক্ত কিন্তু এখনো সহায়তা পাননি তাদের সবার কাছে দ্রুত নগদ সহায়তা পৌঁছানোর উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এই দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সাথে সম্মিলিত প্রচেষ্টার কথা বলেন। সংলাপে আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আলোচনাকে উৎসাহব্যাঞ্জক, তথ্যভিত্তিক ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে মনে করেন। তিনি মন্তব্য করেন যে জনগোষ্ঠীভিত্তিক এর চেয়ে দারিদ্র্যভিত্তিক ও বিপন্নতাভিত্তিক ত্রাণ তৎপরতা অনেক বেশি কার্যকর হয়। এই কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে আরো তথ্য-উপাত্ত ও প্রশাসনিক সমন্বয় প্রয়োজন। যোগ্য মানুষের কাছে সহয়তা পৌঁছে দিতে প্রচার-প্রচারণার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকারের এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে যথাযথ সহযোগিতা দেয়ার উদ্দেশ্যে সিপিডি, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশের ১৩টি জেলায় ‘গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকারসহ বেসরকারি পর্যায়ের অন্যান্য সব সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অংশগ্রহণ ও সক্রিয় অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের সক্ষমতা সৃষ্টির চেষ্টা করা। এই সংলাপটি এ প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement