০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

গার্মেন্ট পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন নতুন প্রস্তুতি : সিপিডি

-

সঙ্কট মোকাবেলায় বড় কারখানাসহ বেশির ভাগ তৈরী পোশাক কারখানার কোনো আর্থিক ব্যাকআপ ও পরিকল্পনা নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের তৈরি পোশাক খাতের সহনশীলতা বাড়ানো ও দ্রুত পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে নতুন ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন।
গতকাল ‘কোভিড-১৯ বিবেচনায় পোশাক খাতে দুর্বলতা, সহনশীলতা ও পুনরুদ্ধার : জরিপের ফলাফল’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব অভিমত তুলে ধরেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। গবেষণায় ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ছোট, মাঝারি ও বড় ৬১০টি পোশাক কারখানার ওপর জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যবহির্ভূত পোশাক কারখানাও রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিডের প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের প্রণোদনা ঋণ প্রাপ্তির জটিলতার কারণে বেশির ভাগ ছোট কারখানাগুলো ঋণের জন্য আবেদন করেনি। ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার আবেদন প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। দেখা যায়, ৯০ শতাংশ বড় কারখানার বিপরীতে মাত্র ৪০ শতাংশ ছোট কারখানা ঋণের জন্য আবেদন করেছে। অন্য দিকে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কারখানাগুলো অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ও ব্যাংকের আমানতের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল। সদস্য নয় এমন কারখানাগুলোকে অবিলম্বে অ্যাসোসিয়েশনের সদ্যস্যভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার প্রক্রিয়াটিকে কম্প­ায়েন্সের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করতে হবে।
মূল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কোভিড পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখন আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আগের দামে এখন আর তৈরী পোশাক বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। এর বিপরীতে পোশাক খাতের ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ, সহনশীলতা ও পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। বেশির ভাগ কারখানার সহনশীলতার মান গড়পড়তার নিচে। কারখানাগুলোর মূল শক্তি হচ্ছে এদের মধ্যে সমন্বয় ও সচেতনতা। কিন্তু শিল্পের মূল চালিকাগুলো সচল রাখা ও বিকল্প উৎসের ঘাটতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ খাতের দুর্বলতা বিকাশমান। ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বড় ধরনের পার্থক্য থাকলেও এ ক্ষেত্রে বড় ও ছোট কারখানাগুলোর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। একই সাথে পোশাক কারখানাগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনা খুব নিম্নমানের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাক খাতের ভবিষ্যতের বিকাশের জন্য ভ্যালু চেইনের বিভিন্ন বিভাগে আরো বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) বিবেচনা করা উচিত। খুব কমসংখ্যক ক্রেতার নির্ভরতা শুধু ছোট শিল্পের ক্ষেত্রেই নয়, বড় আকারের উদ্যোগের জন্যও একটি বড় দুর্বলতা।
সংলাপে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য শিরীণ আখতার বলেন, কোভিডের সময়কালে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করলেও পোশাকশিল্প আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এ সময়ে আমরা অনুধাবন করেছি, আপদকালীন সময়ের জন্য আমাদের সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা সবার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে কি নাÑ তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সুশাসনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যারা কাজ হারিয়েছেন বা যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্যগত বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া শ্রমিকরা যেন ন্যূনতম মজুরি পান সেটিও দেখা দরকার। শ্রমিকরা কখন কোভিডের টিকা পাবেনÑ সে বিষয়েও এখনই আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন।
ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বেশির ভাগ শ্রমিকের পর্যাপ্ত কাগজ না থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। বিজিএমইএর পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটিকে আরো সহজ করতে হবে।
শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষার অপর্যাপ্ততা কথা উল্লেখ করে ‘বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি সভা’র প্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকিকে কতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তা সর্বাগ্রে ভেবে দেখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শ্রমিকদের জন্য একটি সামাজিক সুরক্ষা বীমা থাকা দরকার, যেখানে মালিক, শ্রমিক, সরকার, ক্রেতা ও উন্নয়ন অংশীদাররা অংশ নেবে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement