২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩০, ১৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

‘যাবজ্জীবন অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড’ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ শুনানি শুরু

আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রচলিত আইনের পরিপন্থী : খন্দকার মাহবুব
-

যাবজ্জীবন অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড এ সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চে গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানি শুরু করেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। তিনি আদালতে ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন নজির উপস্থাপন করে দেখান যে ওখানে আমৃত্যু কারাদণ্ড আদালত কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। অতএব, আমৃত্যু কারাদণ্ডের যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওটা আমাদের আইনের পরিপন্থী। তাই ওই রায়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন আরো বলেন, যাবজ্জীবন সাজার একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকতে হবে। আমাদের আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হিসেবে ৩০ বছর বলা আছে; যা রেয়াত পাওয়ার পর সাড়ে ২২ বছর হয়। উন্নত বিশ্বেও সাজার মেয়াদ বলে দেয়া হয়। সেখানে প্যারোল ব্যবস্থাও রয়েছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে সে ব্যবস্থা নেই। তাই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হিসেবে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হলে কারাগারগুলো বৃদ্ধাশ্রম হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে সারা দেশের কারাগারে পাঁচ হাজার ৫৩৭ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন। এ সংক্রান্ত রায় নিষ্পত্তি না হওয়ায় তারা ও তাদের পরিবার বুঝতে পারছেন না কত দিন কারাগারে কাটাতে হবে।
খন্দকার মাহবুব হোসেনের সাথে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ ছাড়াও অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান উপস্থিত ছিলেন। শুনানি অসমাপ্ত থাকায় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময়ের আবেদন জানান। এ অবস্থায় আগামী ১৬ মে বৃহস্পতিবার শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
এর আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড একটি মামলায় আপিল বিভাগের এমন রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ নিষ্পত্তির জন্য চারজন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ। তারা হলেনÑ সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, আইনজীবী আবদুর রেজাক খান ও মনসুরুল হক চৌধুরী। এর মধ্যে গতকাল অ্যাডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরীকে পরিবর্তন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিনকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করেন আদালত।
সাভারে ২০০১ সালে জামান নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় নি¤œ আদালত ও হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামি আতাউর রহমানের সাজা কমিয়ে আপিল বিভাগ যাবজ্জীবন সাজা দেন। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ সাভারের জামান হত্যা মামলায় দুই আসামির আপিলের রায় প্রদানের সময় বলেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ ৩০ বছর নয়, বরং আমৃত্যু কারাদণ্ড। স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে।
রায়ের সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এর প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, এটা যেন মূল রায়ে না থাকে। যদি থাকে, তাহলে সব মামলার আসামিদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে দেখাবেন ৩০ বছর না। যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড। বিশেষ করে আদালত যদি এ মর্মে আদেশ দেন যে আমৃত্যুই থাকতে হবে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন জবাবে বলেছিলেন, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৭ ধারায় যাবজ্জীবন দণ্ডের অর্থ হলো সর্বোচ্চ ৩০ বছর কারাদণ্ড। কারাগারে রেয়াত পেলে দণ্ড আরো কমে আসে। কিন্তু আমৃত্যু সাজা হলে রেয়াত খাটবে না। তিনি বলেন, যদি আমৃত্যুই হয়ে থাকে, তাহলে তাদের রেয়াতের কি হবে?
এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন আতাউর।


আরো সংবাদ



premium cement