২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ শাবান ১৪৪৬
`

বাংলাদেশের হারে পাকিস্তানও বাদ

-

স্বাগতিক পাকিস্তান অনেক আশা নিয়ে তাকিয়েছিল বাংলাদেশের দিকে। সকল পাকিস্তানীর সাপোর্টও পেয়েছে। কিন্তু দর্শকরা তো উৎসাহ দিতে পারে, পক্ষে গলা ফাটাতে পারে, গ্যালারিতে গগন বিদারী আওয়াজ দিতে পারে। কিন্তু মাঠে গিয়ে তো আর খেলে দিতে পারে না। টাইগাররা জয়ী হলে নানা সমীকরণে পাকিস্তানিদেরও একটা সুযোগ থাকতো। কিউইদের কাছে হারে শান্ত বাহিনীর সাথে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় হলো বাবর-রিজওয়ানদের দলও। ভারত ও নিউজিল্যান্ড দুই ম্যাচ জিতে উঠে গেছেন সেমিফাইনালে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচটি হয়ে গেল প্রীতি ম্যাচ। গতকাল প্রথমে ব্যাট করে শান্তর ৭৭ রানের সুবাদে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে রাচিন রাভিন্দ্রার সেঞ্চুরি (১১২) ও টম ল্যাথামের হাফ সেঞ্চুরিতে (৫৫) ২৩ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জয়ী হয়ে সেমিফাইনালে নাম লেখায় নিউজিল্যান্ড।
রাওয়ালপিন্ডিতে পুরনো সুখস্মৃতি কিংবা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ দেখায় জয়, কোনো কিছুই যেন টাইগারদের আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়া দিতে পারেনি। এমন পিচেও ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। চিরায়ত ব্যর্থতার প্রর্দশনীতে পারেনি বড় সংগ্রহ গড়তে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগের আসরে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। এবার সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সেই পুরনো ব্যাটিং বিপর্যয়! ম্যাচ শেষে ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং ব্যর্থতাকেই দুষলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বোলাররা প্রথম দিকে কার্যকর থাকলেও শেষে ছিলেন নিষ্প্রভ।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খারাপ হয়নি বাংলাদেশের। ৮ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪৫ রান করেছিল টাইগাররা। তবে উদ্বোধনী জুটিটাকে বেশি দূর টেনে নিয়ে যেতে পারেনি টাইগাররা। নবম ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই তানজিদ হাসান তামিমকে ফিরিয়েছেন মিচেল ব্রেসওয়েল।
পাওয়ারপ্লের পর দ্বাদশ ওভারে বড় শট খেলতে গিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ ক্যাচ দেন ৩০ মিটার সার্কেলের মধ্যে। তবে মিরাজের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেটে ধীরগতিতে খেলে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন শান্ত এবং তৌহিদ হৃদয়। তবে হৃদয় হতাশ করেছেন বেশ। রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রথম ২০ বলে একটিও বাউন্ডারি মারতে পারেননি বাংলাদেশের সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যাটার। অবশ্য মারার চেষ্টাও করেননি। চাপে পড়ে ২৪তম বলে বাউন্ডারির চেষ্টায় ডাউন দ্য উইকেটে এসে বড় শট খেলতে যান। তবে এবার সঙ্গ দেয়নি ভাগ্য। কাভারে উইলিয়ামসনের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হৃদয়। তাতে ১০০ পেরোনোর আগেই বাংলাদেশের তিন ব্যাটার সাজঘরে।

মেহেদি হাসান মিরাজ ও হৃদয়ের উইকেট হারানোর পর বড় দায়িত্ব ছিল দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের উপর। কিন্তু অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করতে পারেননি দুজনের কেউই। চাপের মুহূর্তে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন দু’জনই। গত ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়া মুশফিক গতকাল আউট হয়েছেন ২ রানে। ব্রেসওয়েলের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন। সৌম্য সরকারের বদলি হিসেবে দলে আসা মাহমুদুল্লাহও বা কী করলেন! ১৪ বলে ৪ রান করে তিনিও ব্রেসওয়েলের শিকার।
ষষ্ঠ উইকেটে ৪৫ রানের জুটি গড়েন শান্ত-জাকের আলী। এই জুটি এগিয়েছে কচ্ছপের গতিতে। সেট হয়েও হাত খুলে খেলতে পারেননি শান্ত। শেষ পর্যন্ত ৭৭ রানে থামে তার ধীরগতির ইনিংস। ৯ চারে ৭৭ রান করেছেন অধিনায়ক। অনেক দিন পর তার ব্যাট কথা বলেছে। আট নম্বরে নেমে রিশাদ হোসেন রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে ২৫ বলে ২৬ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। অষ্টম উইকেটে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটি গড়ে কোনোরকম লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন জাকের। ভারতের পর এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও রানের দেখা পেয়েছেন জাকের। চাপের মাঝে ৪৯তম ওভারে রান আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ৫৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস। আর তাতেই ২৩৬ রান করতে সক্ষম হয় টাইগাররা। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপ একাই ধ্বসিয়ে দিয়েছেন কিউই পেসার মাইকেল ব্রেসওয়েল। ১০ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন। ও‘রোর্ক দুটি, হেনরি, জেমিসন একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

জবাবে ব্যাট করতে নামলে প্রথম ওভারের শেষ বলে কিউই ওপেনার উইল ইয়ংকে (০) বিদায় করেন তাসকিন। ৩.৩ ওভানে নাহিদ রানা অভিষেক উইকেটের শিকার কেইন উইলিয়মসন (৫)। ৬টি চার মারা ডেভন কনওয়েকে (৩০) ফেরান মোস্তাফিজ। ১২তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারি অন সাইডে খেলে রানের জন্য ছোটার চেষ্টা করেন রাচিন। দ্রুত বল ধরলেও সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভাঙতে পারেননি তানজিদ। ২৫ রানে বেঁচে গেলেন রাচিন রাভিন্দ্রা।
সেখান থেকে দারুণ সেঞ্চুরিতে রাঙালেন রাচিন। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজের প্রথম ম্যাচেই তিন অঙ্কের দেখা পেলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৯৫ বলে মাইলফলক পূর্ণ করেন। সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। ৩৮তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম বলে মিড অনে সহজ ক্যাচ ছাড়েন মাহমুদুল্লাহ। ১০৫ রানে জীবন পেলেন। এর আগে ৯৩ রানে মিরাজের বলে ক্যাচ নিতে পারেননি নাহিদ রানা। অবশেষে রিশাদের বলে ছক্কার চেষ্টায় ওয়াইড লং অনে বদলি ফিল্ডার ইমনের হাতে ক্যাচ দেন রাচিন রাভিন্দ্রা। ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১০৫ বলে ১১২ রান করেন তিনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ সেঞ্চুরির এবার ফিফটির দেখা পেলেন টম ল্যাথাম (৫০)। ৩ চারে ৭১ বলে মাইলফলক স্পর্শ করেন বাঁহাতি কিপার-ব্যাটসম্যান। সবশেষ তিন ম্যাচে ল্যাথামের এটি তৃতীয় পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস। সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে ২৬তম ফিফটি তার। পরে ৫৫ রানে তাকে রান আউট করেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ পর্যন্ত ৪৬.১ ওভারে ২৪০ রান করে ৫ উইকেটে সেমিতে জিতল কিউইরা। ফিলিপস ২১ ও ব্রেসওয়েল ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন। রিশাদ, তাসকিন, নাহিদ, মোস্তাফিজ একটি করে উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ইনিংস : ৫০ ওভারে ২৩৬/৯ (তামিম ২৪, শান্ত ৭৭, মিরাজ ১৩, হৃদয় ৭, মুশফিক ২, মাহমুদুল্লাহ ৪, জাকের ৪৫, রিশাদ ২৬, তাসকিন ১০, মোস্তাফিজ ৩*, নাহিদ ০*; হেনরি ১/৫৭, জেমিসন ১/৪৮, ব্রেসওয়েল ৪/২৬, ও’রোর্ক ২/৪৮)।
নিউজিল্যান্ড ইনিংস : ইয়ং ০, কনওয়ে ৩০, উইলিয়ামসন ৫, রাচিন ১১২, লাথাম ৫৫, ফিলিপস ২১*, ব্রেসওয়েল ১১*, মোস্তাফিজ ১/৪২, রিশাদ ১/৫৮, তাসকিন ১/২৮, নাহিদ রানা ১/৪৩)।
ফল : নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ব্রেসওয়েল।


আরো সংবাদ



premium cement