২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`

নতুন দল নিয়ে কাটছে না অনিশ্চয়তা

পদ নিয়ে মতবিরোধ : চূড়ান্ত হয়নি না
-

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় থাকা নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে কাটছে না অনিশ্চয়তা। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কথা থাকলেও বেশকিছু বিষয়ে সব পক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় তারিখ পরিবর্তনের সম্ভাবনাও রয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের আয়োজন সামনে রেখে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক নেতার সমন্বয়ে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত বুধবার নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তারা প্রস্তুতি কমিটির সভাও করেছেন। নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলামের ব্যাপারে কোনো আপত্তি না থাকলেও সদস্যসচিবসহ বাকি পদগুলোর ক্ষেত্রে রয়েছে বিরোধ। এ ছাড়াও ট্রান্সপারেন্সি এবং প্রোপার সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট করে যেন প্রকৃত নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন করা হয় সেই দিকেও জোর দিচ্ছে নাগরিক কমিটির একটি অংশ।

মূলত কমিটি গঠন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, বামপন্থী সাবেক ছাত্রনেতা ও অ্যাক্টিভিস্ট এবং শিবিরের সাবেক নেতা ও ইসলামিস্টদের তিনটি অংশে ভাগ হয়েছেন নাগরিক কমিটির নেতারা। তারা সবাই দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে নিজ নিজ পছন্দের ব্যক্তিকে বসাতে চান। গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির অংশটি নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসাইন, বামপন্থী অংশটি সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অনিক রায় এবং অপর অংশটি ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদকে চান। তবে ছাত্রশক্তির অপর একটি অংশ আখতারের সাথে বিরোধ থাকায় নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারীকে এই পদে চান। নাগরিক কমিটির বিভিন্ন সূত্রে সমঝোতা চেষ্টার অংশ হিসেবে শীর্ষ চার পদের বদলে ছয়টি পদ সৃষ্টি করে সব পক্ষকে রেখে ‘ইনক্লুসিভ’ কমিটি করার গুঞ্জন শোনা গেলেও এখনো (শনিবার রাত পর্যন্ত) কোনো ধরনের সমঝোতা হয়নি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সমঝোতার বিষয়ে নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, যেকোনো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তই অঙ্কুরে নানাবিধ অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়। স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় নাগরিক কমিটিতেও তা হচ্ছে। এটা খারাপ চোখে দেখার কিছু নেই। আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গণতন্ত্র ফেরাতে হলে সবারই এ রকম দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে। নতুন বাংলাদেশের তরুণরা সেই চ্যালেঞ্জগুলোই নেভিগেট করছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় নাগরিক কমিটিতে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই প্রোপার প্রসেস এবং ট্রান্সপারেন্সির অভাব আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা যেন নতুন পার্টিতে না থাকে, সে জন্য নতুন রাজনৈতিক দলের গঠনপ্রক্রিয়া এবং নেতৃত্ব নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠন থেকে আসা প্রতিনিধি, সাবেক পরিষদ, কওমি-হেফাজত অংশ, সাবেক শিবির ইত্যাদি সবাই মিলে প্রশ্ন তুলেছি। তিনি বলেন, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্মের যারা সাহসিকতার সাথে অংশগ্রহণ করেছিল, কোনো কোটারি প্রক্রিয়ায় তাদেরকে বাদ না দিয়ে সবাইকে সাথে নিয়ে এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা উচিত বলে আমরা মনে করি। দুঃখজনকভাবে, বর্তমানে যেভাবে এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব গঠন হচ্ছে তা গণতান্ত্রিক এবং ইনক্লুসিভ হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কে কোন পদে আছে সে সংক্রান্ত আলোচনা অবান্তর। বরং যোগ্য যে কেউ যেন তার পছন্দের পদে যেতে পারে এবং এই যোগ্যতার পরিমাপক কী সেটি নিয়েই আমরা আলোচনা করে আসছি। এই সমস্যাটা সমাধান করাই এখন আমাদের প্রধান ও মূল লক্ষ্য। নাগরিক কমিটির সবাইকে সাথে নিয়ে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা উচিত। অন্যথায়, এই দল জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করা সব তরুণদের দল হয়ে উঠতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হবে যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য দুঃখজনক হবে।

সমঝোতার ব্যাপারে জানতে চাইলে নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ শীর্ষ চার অর্গানোগ্রাম পর্যায়ে কোনো বৈঠক হয়েছিল কি না সেটি আমার জানা নেই। দল গঠন নিয়ে ছোট ছোট পর্যায়ে নানা গ্রুপের সাথে চার চার আট অর্গানোগ্রাম সাধারণত অফিসিয়াল বা আনঅফিসিয়াল বসে থাকে। তাদের পর্যায়ে কোনো সমঝোতা হয়েছিল কি না সেটি আমার জানা নেই। আমরা আশা করি, দল গঠনের জন্য সামগ্রিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে।
এ দিকে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি দলের নাম। নাহিদ ইসলামের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগের গুঞ্জন থাকলেও কবে নাগাদ পদত্যাগ করতে পারেন সেটিও তিনি নিশ্চিত করে জানাননি। কিছুদিন আগে নাগরিক কমিটি ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইন চালু করে, যেখানে নতুন রাজনৈতিক দল সমন্ধে মতামত জানতে চাওয়া হয়। ওই ক্যাম্পেইনে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ তাদের মত দেন। সেই মতামতের ভিত্তিতেই রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

অনেকগুলো নাম নিয়ে আলোচনা হলেও প্রাথমিকভাবে ৯টি নাম বাছাই করা হয়েছে। ছাত্রনেতাদের দাবি, ১২০ থেকে ১৫০ সদস্যবিশিষ্ট নতুন দলের জন্য ইতোমধ্যে ৭০ জনকে বাছাইও করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও সেক্টর থেকে অনেকে এ কমিটিতে ভিড়তে চাচ্ছেন। কমিটির আকারের তুলনায় অধিক প্রার্থী হওয়ায় নেতা বাছাইয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতাদের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা দ্রুতই সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে একটি ইনক্লুসিভ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল দেশবাসীকে উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
মৌলভীবাজারে জঙ্গল থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার জাতীয় পতাকা নিয়ে হেঁটে দেশ ভ্রমণে দুই হাফেজ ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে জাতিসঙ্ঘ স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করুক’ সোনারগাঁওয়ে এসির কম্প্রেসার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে দুই শ্রমিক নিহত জার্মান নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করতে হবে : রফিকুল ইসলাম খান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে পৃথক অধিদফতর গঠনের সুপারিশ ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা কুষ্টিয়ার-দৌলতপুরে চরাঞ্চলের সাইফ বাহিনীর প্রধান আটক শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন ওবায়দুর রহমান কোনো চাপ বা কারো নির্দেশনায় কাজ করবে না নির্বাচন কমিশন : ইসি

সকল