২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`

ইসরাইলে রহস্যজনক বাস বিস্ফোরণের পর পশ্চিমতীরে অভিযানের নির্দেশ নেতানিয়াহুর

-


তেলআবিবের কাছে তিনটি খালি বাসে রহস্যজনক বিস্ফোরণের পর পশ্চিমতীরে অভিযান চালাতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন লিখেছে, ইসরাইলের অর্থনৈতিক কেন্দ্রের দক্ষিণে ব্যাট ইয়াম ও হোলন শহরে বৃহস্পতিবার খালি গাড়িতে লাগানো বিস্ফোরক ডিভাইস পরপর বিস্ফোরিত হয়। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি এবং তাৎক্ষণিকভাবে কেউ বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেনি।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যাট ইয়ামের একটি ডিপোতে পার্ক করা বাসে দু’টি বোমা বিস্ফোরিত হয়। আর হোলনে তৃতীয় একটি বাসে লাগানো বিস্ফোরক ডিভাইস থেকে আরেকটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ব্যাট ইয়ামের ছবিতে ডিপোতে থাকা দু’টি পুড়ে যাওয়া বাস এবং ঘটনাস্থলে ফরেনসিক কর্মীদের কাজ করতে দেখা গেছে। চতুর্থ একটি বাসে অবিস্ফোরিত একটি বিস্ফোরক ডিভাইস পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

সিএনএন আরো লিখেছে, বিস্ফোরণের পর নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি দেশজুড়ে বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘বাসে গণবোমা হামলার চেষ্টা’ বলে দাবি করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান এবং শীর্ষ নিরাপত্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের পর নেতানিয়াহু পশ্চিমতীরে ‘সন্ত্রাসী কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে নিবিড় অভিযান চালাতে আইডিএফকে নির্দেশ’ দিয়েছেন। ইসরাইলি শহরগুলোতে আরো হামলা ঠেকাতে প্রতিরোধমূলক তৎপরতা বাড়াতে পুলিশ ও ইসরাইলি নিরাপত্তা সংস্থাকে নেতানিয়াহু নির্দেশ দিয়েছেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। সিএনএন লিখেছে, হামাস গাজায় চার বন্দীর লাশ হস্তান্তর করার কয়েক ঘণ্টা পর এই বাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। গত মাসে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে লাশগুলো হস্তান্তর করা হয়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরাইল ও হামাস একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলায় চুক্তিটি নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইসরাইল অভিযোগ করেছে, কোনো বন্দীর সাথে মেলে না এমন এক দেহাবশেষ দিয়ে হামাস চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

ব্যাখ্যা দিয়েছে হামাস
ইসরাইলের কাছে চার বন্দীর লাশ হস্তান্তরের পর উত্থাপিত অভিযোগের জবাব দিয়েছে হামাস। ফেরত দেয়া চার কফিনে শিরি বাইবাস নামের এক নারীর বদলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ ছিল বলে যে অভিযোগ করেছে তেল আবিব, তার জবাবে গতকাল শুক্রবার হামাস জানিয়েছে, ইসরাইলি বিমান হামলায় একাধিক বন্দীর সাথে নিহত হয়েছিলেন শিরি। তার দেহাবশেষ অন্যদের সাথে মিশে গেছে। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরাইল এ খবর জানিয়েছে। শিরির মৃত্যু ও তার দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিতে অপারগতার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে হামাস কর্মকর্তা ইসমাইল আল-থাওয়াবতেহ বলেছেন, বন্দীদের যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল, সে ভবন ইসরাইলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। শিরিসহ একাধিক বন্দীর দেহাবশেষ টুকরো টুকরো হয়ে এমনভাবে মিশে গেছে, তাদের আর আলাদা করা সম্ভব নয়। গত বছর হামাস একাধিকবার জানিয়েছে যে, ইসরাইলি বিমান হামলায় দুই শিশু অ্যারিয়েল ও কেফিরসহ নিহত হয়েছেন তাদের মা শিরি বাইবাস।
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় প্রথমবারের মতো ইসরাইলি বন্দীদের লাশ হস্তান্তর করে হামাস। তাদের হাতে বন্দী থাকা দুই শিশু ও তাদের মাসহ চারজনের লাশ ইসরাইলের কাছে পাঠানো হয়। চার কফিনের প্রতিটিতেই নিহত ব্যক্তির ছবি সাঁটা ছিল। তবে কফিন বুঝে পাওয়ার পর ইসরাইল অভিযোগ করে, যে কফিনে শিরি বাইবাসের লাশ থাকার কথা, সেখানে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ রয়েছে। ইসরাইলের অভিযোগ, অ্যারিয়েল ও কেফিরের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে এবং আটককারীরাই তাদের হত্যা করেছে। শিরির ছবি সেঁটে দেয়া কফিনে হামাস অজ্ঞাত এক গাজান নারীর লাশ পাঠিয়েছে।

আজ মুক্তি পাবে আরো ৬ ইসরাইলি বন্দী
আজ শনিবার গাজায় মুক্তি পেতে যাওয়া আরো ছয়জন ইসরাইলি বন্দীর নাম প্রকাশ করেছে হামাস। তারা হলেন এলিয়া কোহেন, ওমর শেম-টোভ, ওমর ওয়েনকার্ট, তাল শোহাম, আভেরা মেঙ্গিস্তু এবং হিশাম আল-সাইদ। এর বিপরীতে ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স মিডিয়া অফিস (এএসআরএ) অনুসারে, ইসরাইল ৬০২ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার মধ্যে ৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীও রয়েছেন।

গাজা ইস্যুতে সৌদিতে সমবেত আরব নেতারা
গাজায় নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরব নেতারা সৌদিতে জড়ো হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট গাজা দখলের জন্য যে পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন তা ঠেকিয়ে দিতেই আরব নেতারা এক সাথে বসেছেন। গাজায় ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে আরব রাষ্ট্রগুলো। তবে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির শাসনক্ষমতা কাদের হাতে থাকবে তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।
কিংস কলেজ লন্ডনের বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেছেন, আমরা আরব-ইসরাইলি বা ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি সঙ্ঘাতের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে আছি। যেখানে ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্যভাবে এমন নতুন তথ্য তৈরি করতে পারে যা অপরিবর্তনীয়। সৌদি সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, আরব নেতারা গাজার জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে একটি পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন।

ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো ২২ লাশ উদ্ধার
গাজায় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরো ২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে গাজায় নিহতের মোট সংখ্যা ৪৮ হাজার ৩০০ ছাড়ালো। এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের বার্তাসংস্থা আনাদোলু। ১৫ মাসেরও বেশি সময় পর গত মাসেই গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। তাছাড়া ইসরাইলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা এক লাখ ১১ হাজার ৭৪৯ জনে পৌঁছৈছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। জাতিসঙ্ঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এ ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement