দুদকের জালে রাঘববোয়ালরা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৪২
- আতিউর, বারকাতসহ ২৩ জনের ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ
- বেনজীরের সাড়ে ১১ কোটি টাকা পাচার
- প্রিন্সের ৪২৫ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন
এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অপর দিকে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা ১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে আলোচিত সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এ ছাড়া ৪২৫ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন ও পাচারের অভিযোগে পাবনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুদক মহাপরিচালক মো: আক্তার হোসেন এক ব্রিফিংয়ে মামলাগুলোর বিষয় জানান।
এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আতিউর রহমান ও আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: নাজমুল হুসাইন বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, সাবেক সহকারী পরিচালক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত, সাবেক পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো: ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, ড. আর এম দেবনাথ, মো: আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ ও সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. নিতাই চন্দ্র নাথ।
এ ছাড়া জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক এজিএম অজয় কুমার ঘোষ, জনতা ভবন করপোরেট শাখার সাবেক ম্যানেজার (শিল্প ঋণ-১) মো: গোলাম আজম, ব্যাংকের নির্বাহী প্রকৌশলী (এসএমই ডিপার্টমেন্ট) মো: শাহজাহান, এসইও মো: এমদাদুল হক, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: আব্দুল জব্বার, সাবেক ডিএমডি মো: গোলাম ফারুক ও সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুককে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো আসামি করা হয়েছে- এননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মো: ইউনুছ বাদল, মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক মো: আবু তালহাকে।
এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা রেকর্ড তৈরি করে জনতা ভবন শাখা থেকে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল-জালিয়াতি ও মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
যদিও এর আগে ২০২২ সালে ঋণ অনিয়ম তদন্ত করে দুদক প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগের পরিসমাপ্তি হয়েছে বলে জানানো হয়।
স্ত্রী-দুই কন্যাসহ বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলা : ১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ চারজনের নামে মামলা দায়ের করেছে দুদক। গতকাল দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ উপ-পরিচালক মো: হাফিজুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বেনজীর ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জা, তার দুই মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বেনজীর আহমেদ তার অপরাধলব্ধ ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদে উত্তোলনের পর কোথাও বিনিয়োগ করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ওই অর্থ উত্তোলনের পরই বিদেশে নিয়ে চলে যান।
গত ১৫ ডিসেম্বর ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকার জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে চার মামলা দায়ের করা হয়।
২০২৪ সালের ৩১ মার্চ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে। এর পর ১৮ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের এক সভায় অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। পরে অনুসন্ধানে বেনজীর ও তার পরিবারের নামে ৬৯৭ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, ঢাকায় ১২টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি বিও হিসাব খুঁজে পেয়ে আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করে দুদক।
তবে বেনজীরের বিরুদ্ধে এপ্রিলে অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি দেশত্যাগ করেন। এরই মধ্যে ওই বছরের ২৮ মে তাদের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দফা তলব করলেও তারা দুদকে আসেননি। আর ২ জুলাই বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদবিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠিয়েছিল দুদক। এ নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে আগস্টের মাঝামাঝি আইনজীবীর মাধ্যমে পুলিশের সাবেক প্রধান ও তার পরিবারের চার সদস্যের সম্পদবিবরণী জমা দেন।
প্রিন্সের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা : পাবনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
দুদক জানায়, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের বিরুদ্ধে ৪২৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। প্রিন্স ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত-আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৯ কোটি ৯১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩৪ টাকার সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া তার নিজের নামে ৩৯টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৯৭ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করে দুর্নীতি দমন আইন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা