নির্বাচন দিতে চাপ বাড়াচ্ছে বিএনপি
৮ দিনে ৬৪ জেলায় সমাবেশ- মঈন উদ্দিন খান
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
দ্রুত নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বিএনপি। এতদিন বক্তৃতা-বিবৃতিতে নির্বাচনের এ দাবি সীমাবদ্ধ থাকলেও ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম দেশব্যাপী রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে দলটি। জানা গেছে, এই কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো। ৮ দিনে ৬৪ জেলার প্রতিটি কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে শীর্ষ নেতারা কেন দ্রুত নির্বাচন প্রয়োজন সেটিই তুলে ধরবেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে নির্বাচন নিয়ে যে লক্ষ্যের কথা জানানো হয়েছে, সেটি এখনো সুনির্দিষ্ট নয়। ফলে নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শঙ্কা এখনো কাটেনি। বরং নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার নানান লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। একই সাথে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিও বর্তমান সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সরকারকে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে না দিতে নিত্যনতুন ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে। এমন অবস্থায় একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই হতে পারে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।
দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী ৮ দিনের সভা-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে সারা দেশে জেলাগুলোতে পর্যায়ক্রমে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকাসহ দেশজুড়ে এসব সভা-সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবরা অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে অংশগ্রহণকারী নেতাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে এবং কেন্দ্র থেকে প্রতিটা কর্মসূচি ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে সর্বাত্মকভাবে সফলের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। রমজান শুরু হওয়ার আগে এই কর্মসূচি সমাপ্ত হবে।
জানা গেছে, আসন্ন রমজানে রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না বিএনপির। তবে ওই মাসে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়েও একই দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হবে। আর রমজানের পরে সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না হলে রাজপথে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি।
বিএনপি গত কয়েক মাস ধরে দলের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। দলের একটি প্রতিনিধি দল গত রোববার নির্বাচন ভবনে গিয়ে সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের সাথে বৈঠকও করেছে। সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সার্বিক বিষয় নিয়ে তারা ইসির সাথে মতবিনিময় করেছেন। বিএনপির তরফ থেকেও নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ইসিকে সার্বিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। একই সাথে নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়েও ইসির কাছে জানতে চায় দলটি। তখন নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে আগামী মে-জুন মাসের মধ্যেই ইসি পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হবে।
ইসির সাথে বৈঠকের পর গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠক করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। এ বৈঠকেও বিএনপি নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে দলটি বলেছে, এ বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। দলটি এ-ও বলেছে, শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ৫ আগস্টেও নির্বাচন হতে পারে। তবে বিএনপি জুলাই-আগস্টে নির্বাচনের দাবি জানালেও এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই নির্বাচনের যৌক্তিক সময় বলে মনে করে। দলটির অভিমত, এর বাইরে যদি নির্বাচনকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সেটা হবে অযৌক্তিক। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলাসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে পারে। বিএনপি মনে করে, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর অব্যাহত দাবির মুখে গত ডিসেম্বরে বিজয় দিবসে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে কিংবা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে সম্প্রতি একটি বিদেশী টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এ বছরের শেষদিকে বাংলাদেশে নির্বাচন হতে পারে।
বিএনপির অভ্যন্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিসেম্বরকে সামনে রেখে দলটি তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতিও শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে বিএনপির একটি ঘোষণা রয়েছে যে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলে তারা জাতীয় সরকার গঠন করবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির সাথে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা মিত্রদের কাকে কত আসন দেয়া যায়, দলের ভেতরে প্রাথমিকভাবে সে আলোচনা শুরু হয়েছে। একই সাথে সারা দেশের আসনগুলোতে বিএনপির প্রার্থিতা কেমন হতে পারে, কাদেরকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া যায়- সে ব্যাপারেও আলোচনা শুরু করেছে দলটি। মূলত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়টি দেখভাল করছেন। জানা গেছে, বিতর্কিত কোনো প্রার্থীকে দলটি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে ইচ্ছুক নয়। বিএনপির হাইকমান্ড স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থীদেরকেই এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেবে।
৮ দিনে ৬৪ জেলায় সমাবেশ : দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, পতিত ফ্যাসিবাদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলাসহ নানা দাবিতে ১২ ফেব্র্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট দিনে ৬৪ জেলায় সমাবেশের পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সমাবেশের দিনক্ষণ ও কেন্দ্রীয় নেতারা কোথায় বক্তব্য দেবেন তার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে
১২ ফেব্রুয়ারি : স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় লালমনিরহাট, নজরুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ফেনী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ খুলনা, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, আসাদুজ্জামান রিপন রাজবাড়ি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল পটুয়াখালী, আরিফুল হক চৌধুরী সুনামগঞ্জ ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন- নবী খান সোহেল জামালপুরে সমাবেশ করবেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি : মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যশোর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান টাঙ্গাইল, সেলিমা রহমান মাদারীপুর, আবদুল আউয়াল মিন্টু চাঁদপুর, শামসুজ্জামান দুদু ঠাকুরগাঁও, আবদুস সালাম বগুড়া, আরিফুল হক চৌধুরী মৌলভীবাজার ও জহির উদ্দিন স্বপন ভোলায় সমাবেশ করবেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি : স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু পাবনা, শামসুজ্জামান দুদু পঞ্চগড়, জয়নুল আবদিন ফারুক কুমিল্লা দক্ষিণ, আবুল খায়ের ভূঁইয়া ঝিনাইদহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানিকগঞ্জ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী হবিগঞ্জ এবং সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স নেত্রকোনার সমাবেশে অংশ নেবেন।
১৯ ফেব্রয়ারি : স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী নোয়াখালী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সিলেট, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফজলুর রহমান কিশোরগঞ্জ, মিজানুর রহমান মিনু কুষ্টিয়া, ফরহাদ হালিম ডোনার শরীয়তপুর, মজিবুর রহমান সারোয়ার পিরোজপুর ও রুহুল কবির রিজভী রাজশাহীতে যাবেন।
২০ ফেব্রুয়ারি : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী লক্ষ্মীপুর, সেলিমা রহমান বরিশাল দক্ষিণ, আবদুল আউয়াল মিন্টু ময়মনসিংহ দক্ষিণ, আসাদুজ্জামান রিপন ফরিদপুর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান চুয়াডাঙ্গা, মিজানুর রহমান মিনু নওগাঁ ও আবদুস সালাম কুড়িগ্রামের সমাবেশে অংশ নেবেন।
২২ ফেব্রয়ারি : জয়নাল আবেদীন ঝালকাঠি, আহমেদ আজম খান চট্টগ্রাম দক্ষিণ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ময়মনসিংহ উত্তর, হারুনুর রশীদ জয়পুরহাট, মাহবুব উদ্দিন খোকন কুমিল্লা উত্তর, আসলাম চৌধুরী বান্দরবান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া রংপুর ও যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ নরসিংদতে সমাবেশ করবেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি : স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন মুন্সীগঞ্জ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বরিশাল উত্তর, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী নড়াইল, আহমেদ আজম খান নাটোর, হারুনুর রশীদ গাইবান্ধা, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল রাঙ্গামাটি, আবদুস সালাম আজাদ মাগুরা ও সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সৈয়দপুর।
২৫ ফেব্রুয়ারি : স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নারায়ণগঞ্জ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গাজীপুর, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু চট্টগ্রাম উত্তর, বরকত উল্লাহ বুলু বাগেরহাট, নিতাই রায় চৌধুরী সাতক্ষীরা, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দিনাজপুর, আমান উল্লাহ আমান মেহেরপুর, জয়নুল আবদিন ফারুক নীলফামারী, মনিরুল হক চৌধুরী খাগড়াছড়ি ও আবদুস সালাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমাবেশে অংশ নেবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা