০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`

ইউএসএআইডি বন্ধে বাংলাদেশেরও ক্ষতি, সুযোগ নিতে পারে চীন

নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন
-

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশসহ পুরো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের উন্নয়ন সহযোগিতা পরিকল্পনাকে বড় অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এশীয় উন্নয়ন কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে চীনা সহায়তার বিকল্প তৈরির যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, তা এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
এশীয় উন্নয়ন সংস্থার একজন ওয়াশিংটন প্রতিনিধি নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, এটি এতটা আকস্মিক হয়েছে যে, আমরা হতবাক। বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির অন্যতম স্তম্ভ ছিল মিত্র ও অংশীদারদের সাথে উন্নয়ন নীতি সমন্বয় করা।
২০২৩ সালের ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে উন্নয়ন সহযোগিতা জোরদার এবং সমৃদ্ধি বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়। সে সময় এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, আমরা পরিচ্ছন্ন জ্বালানি রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে, উন্নত অবকাঠামো ও সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতাও থাকবে।
২০২৪ সালের এপ্রিলে তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ওয়াশিংটন সফরে গেলে তিনি এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কূটনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য একটি নতুন ‘কৌশলগত সংলাপ’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। কিন্তু সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ইউএসএআইডির সদর দফতরে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই পরিকল্পনাগুলো অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। কর্মীদের ই-মেইলে জানানো হয়েছে, আপনাদের অফিসে আসার দরকার নেই।
দক্ষিণ এশিয়ার ওপর প্রভাব : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউএসএআইডির কার্যক্রম স্থগিত হলে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতীয় থিংক ট্যাংক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো অনীত মুখার্জী বলেন, বাংলাদেশ এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, সেখানে অনেক প্রকল্প ইউএসএআইডির অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তিনি আরো বলেন, নতুন বাংলাদেশ সরকার ভারত থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখার পর চীন তাদের জন্য প্রথম পছন্দ হয়ে উঠতে পারে।
কংগ্রেসে সমালোচনা ও আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি : ইউএসএআইডির সদর দফতরের সামনে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন এবং এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। হাউজ কমিটি অন ওভারসাইট অ্যান্ড গভর্নমেন্ট রিফর্মের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি গেরি কনোলি অভিযোগ করেছেন, টেসলা সিইও ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ট্রাম্প প্রশাসনের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই) কর্মকর্তারা ছুটির দিনে ইউএসএআইডি সদর দফতরে ঢুকে গোপন নথিপত্র হাতানোর চেষ্টা করেছেন। কনোলি বলেন, আমরা আদালতে, জনমতে, কংগ্রেসের ভেতরে এবং ইউএসএআইডি দফতরেও লড়াই চালিয়ে যাব। আমরা এই অবিচার হতে দেবো না। কংগ্রেস ১৯৬১ সালের ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাক্টের মাধ্যমে এই সংস্থা তৈরি করেছিল আর এটিকে পরিবর্তন করতে চাইলে সেই আইন পরিবর্তন করতে হবে।
রুবিওর নেতৃত্বে নতুন পরিকল্পনা : সোমবার ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসএআইডির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে নিয়োগ দিয়েছে। এতে সংস্থাটিকে পররাষ্ট্র দফতরের সাথে একীভূত করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এল সালভাদরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রুবিও ইউএসএআইডিকে একটি ‘অকার্যকর সংস্থা’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, বিদেশে ব্যয় করা প্রতিটি ডলার যেন আমাদের জাতীয় স্বার্থরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয় তা আমরা নিশ্চিত করব।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউএসএআইডি বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং এই শূন্যস্থান চীন সহজেই পূরণ করতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement