২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮ মাঘ ১৪৩১, ২১ রজব ১৪৪৬
`

গাজায় ধ্বংসস্তূপে নিখোঁজদের সন্ধান : ৬৬ লাশ উদ্ধার

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিজেদের ঠিকানা খুঁজছেন এক ফিলিস্তিনি পরিবার : আলজাজিরা -

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘর ও ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৬৬টি লাশ উদ্ধার করেছে সিভিল ডিফেন্স। সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ৫৮টি লাশ দক্ষিণ গাজায় এবং আটটি উত্তরে পাওয়া গেছে। সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, ভারী বোমাবর্ষণের কারণে এই লাশগুলো ভবনের নিচে পড়েছিল। অনেক লাশ কয়েক মাস ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে ছিল। এসব লাশ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াকে অনেক জটিল মনে হচ্ছে। আলজাজিরা, রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস ও আরব নিউজ।
এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় ফিরে গেছেন বাসিন্দারা। প্রায় পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বহু মানুষের খোঁজ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে অনেকে। তাই ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিন সোমবার গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজার হাজার গাজাবাসীর সন্ধান শুরু করেছে।
ফিলিস্তিনি সিভিল ইমার্জেন্সি সার্ভিসেসের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘আমরা ১০ হাজার শহীদের সন্ধান করছি, যাদের লাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে। কমপক্ষে ২ হাজার ৮৪০টি লাশ গলে গেছে এবং তাদের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় ধাক্কা ছিল। মানুষ হতবাক বনে গেছে। তাদের ঘরবাড়ি একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। দেখলে মনে হবে এই এলাকায় বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসে সব মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে গেছে।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। রয়টার্স লিখেছে, রোববার শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্তে হামাস তিনজন বন্দীকে মুক্তি দেয় এবং ইসরাইল ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনে কয়েক দশক সময় লাগতে পারে এবং এ জন্য প্রয়োজন হবে কোটি কোটি ডলার। ধ্বংসস্তূপ সরাতে ২১ বছর এবং ১২০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে বেশির ভাগ এলাকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলেও রাফাহ এলাকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সোমবার সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে আটজন ইসরাইলি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আলোচনায় আগ্রহী হামাস : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার নতুন প্রশাসনের সাথে সংলাপে অংশ নিতে প্রস্তুত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মুসা আবু মারজুক এ তথ্য জানিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা আবু মারজুক বলেন, তাদের দল আমেরিকার সাথে সংলাপ বসতে এবং সবকিছু নিয়ে সমঝোতা করতে প্রস্তুত।
বর্তমানে কাতারে অবস্থান করা ৭৪ বছর বয়সী আবু মারজুক ভার্জিনিয়ার সাবেক বাসিন্দা। হোয়াইট হাউজে নতুন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের পরই তার এই বক্তব্য সামনে এলো। গাজা উপত্যকায় ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মাত্র একদিন পেরিয়েছে। তবে আবু মারজুকের কথাগুলো গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্যের প্রতিফলন ঘটায় কি না তা স্পষ্ট নয়। ১৯৯৭ সাল থেকে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
আবু মারজুক দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, গাজা উপত্যকায় ট্রাম্প প্রশাসনের একজন দূতকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছে হামাস। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দূত ফিলিস্তিনের জনগণের সাথে দেখা করে তাদের অনুভূতি এবং ইচ্ছা বোঝার চেষ্টা করতে পারেন, যাতে আমেরিকার অবস্থান শুধুমাত্র একটি পক্ষের নয়, সব পক্ষের স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে হতে পারে।
আবু মারজুক গাজায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করতে সাহায্য করার জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করেন এবং বলেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যাপক আগ্রহ ছিল এবং তিনি একজন প্রতিনিধি না পাঠালে এই চুক্তি আলোর মুখ দেখতো না।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথের পর কিছু নির্বাহী আদেশে সই করার সময় গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে রোববার শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি নিয়ে এখনো তিনি খুব একটা আত্মবিশ্বাসী নন। ট্রাম্প বলেন, ‘এটি আমাদের যুদ্ধ নয়, এটি তাদের (হামাস-ইসরাইলের) যুদ্ধ। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসী নই। তবে আমার মনে হয়, ওদের (হামাসের) শক্তি অনেক কমে গেছে।’ গাজার পুনর্গঠন নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা দারুণ জায়গা। তবে বর্তমানে এলাকাটি ধ্বংসস্তূপ হলেও এটিকে অন্যভাবে পুনর্গঠন করতে হবে।’
৯০০ ট্রাক ঢুকল গাজায় : যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর সোমবার দ্বিতীয় দিনে ৯ শতাধিক ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে গাজায়। এ নিয়ে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত দুই দিনে প্রবেশ করেছে ১ হাজার ৫৪৫ ট্রাক ত্রাণ। গত রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের সাথে সাথে গাজায় প্রবেশ করছে জরুরি ত্রাণবাহী অসংখ্য ট্রাক।
সোমবার যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে ৯০০টিরও বেশি মানবিক ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যা ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বর্ণিত দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে জাতিসঙ্ঘ। জাতিসঙ্ঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধে বেঁচে থাকা মানুষদের সহায়তা বৃদ্ধির জন্য উপত্যকায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্ততাকারীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সোমবার ৯১৫টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। গাজায় সংঘাত চলাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ এবং বিতরণে বাধা সৃষ্টির নিন্দা করেছে জাতিসঙ্ঘ। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরই রোববার ৬৩০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছিল।
১৫ মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলে। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় গাজায় একটি তিন ধাপের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরাইল।


আরো সংবাদ



premium cement