১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৬
`
রাজশাহীতে জামায়াতের আমির

ইনসাফ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবেই

-


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, যতক্ষণ না দেশ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত হবে ততক্ষণ বাংলার জমিনে ইনসাফ কায়েমের লড়াই চলবেই। গতকাল দুপুরে রাজশাহী নগরীর আলিয়া মাদরাসা ময়দানে আয়োজিত বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
ডা: শফিক বলেন, কুরআনের শাসন দিয়ে আমরা বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, ন্যায়-ইনসাফের মাধ্যমেই বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা ত্যাগ অনেক করেছি। আরো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। জীবন খুব ছোট, কাজ অনেক বড়। বিশ্রামের কোনো সময় নেই।

তিনি বলেন, বিনয়ের সাথে অনুরোধ করি যারা চাঁদাবাজি, দখলদারি এবং মামলা বাণিজ্য করছেন; দয়া করে এ কাজটা করবেন না। আমাদের শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে। মানবতা অপমানিত হবে, লাঞ্ছিত হবে। অফিস আদালতে যারা ঘুষ বাণিজ্য করেন, তাদের আন্তরিক অনুরোধ, ভাই এ কাজগুলো আর করবেন না। যদি আমাদের বিনয়ী অনুরোধ না মানেন, তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত, যুদ্ধ আমাদের শেষ হয়নি।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, যারা রক্ত দিয়ে আজকের এই পরিবেশ দিয়ে গেছে, আমরা তাদের প্রতি ঋণী এবং কৃতজ্ঞ। এই ঋণের দায় আমাদের আজীবন শোধ করতে হবে। কতজন আদম সন্তানকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে, সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারবে না।
জামায়াত আমির বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা প্রশ্ন করেন, ‘আপনাদের দলের কতজন শহীদ হয়েছে।’ আমরা বলেছি, যারা শহীদ হয়েছে আমরা তাদের দলের মানুষ। তাদের কোনো দলীয় পরিচয়ে আমরা তাদের সংকীর্ণ স্থানে নামাতে চাই না। তারা জাতীয় সম্পদ। এমন সাহসী মানুষ থাকলে এই জাতির ওপর কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হবে না।’

ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে ডা: শফিক বলেন, তারা (আ’লীগ) মনে করেছিল নিজেরাই সার্বভৌম। সার্বভৌম মানে সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনি প্রশ্ন রাখেন এত ক্ষমতার মালিক তো দেশ ছেড়ে পালালেন কেন? আপনাদের পরাজয় এবং পলায়ন প্রমাণ করেছে, সর্বময় ক্ষমতার মালিক আল্লাহ।
তিনি বলেন, মুমিনরা দুনিয়ায় কারো কাছে মাথানত করে না। করেনি বলেই গত সাড়ে ১৫টি বছর বিশেষ করে আলেম-ওলামাদের ওপর বিগত সরকার তাণ্ডব চালিয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামীর দুইজন আমির, একজন সেক্রেটারি জেনারেল, তিনজন নায়েবে আমির, দুইজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল এবং একজন নির্বাহী পরিষদ সদস্যসহ ১১ জন দায়িত্বশীল নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ যারা করেছে, শত শত সহকর্মীকে তারা খুন করেছে। অসংখ্য ভাইবোনকে গুম করেছে। পঙ্গু করেছে, আহত করেছে। তাদের চাকরি কেড়ে নিয়েছে। ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে। কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী মহানগরী আমির মাওলানা ড. কেরামত আলী। মহানগর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল ও সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ শাহাদত হোসাইন এবং জেলা সেক্রেটারি গোলাম মুর্তজার যৌথ পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, রাজশাহাী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো: সাহাবুদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল।

কর্মী সম্মেলন শুরুর আগেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মাদরাসা ময়দানের চারিদিক পূর্ণ হয়ে যায়। সম্মেলনস্থল ছাড়াও পাশর্^বর্তী সিপাইপাড়া, ফায়ার সার্ভিস মোড়, ঘোষপাড়া, সিএন্ডবি মোড়, সাহেববাজার মনিচত্বর ও লক্ষ্মীপুর এলাকাসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। বিপুল লোক সমাগম হলেও কর্মসূচি ছিল খুবই সুশৃঙ্খল, যা অনেকের নজর কাড়ে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, রাজশাহীতে এসে জানতে পারলাম কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা আলু সংরক্ষণের খরচ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, দেশের মানুষ আর কোনো জুলুমকারীকে সহ্য করবে না। এক জুলুমবাজ পালিয়েছে। নতুন কোনো জালেম সামনে এলে তাদেরও তাড়িয়ে দেবো। তিনি আরো বলেন, দেশ থেকে জালেম পালিয়েছে, জুলুম পালায়নি। জুলুম থেকে বাঁচতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ফ্যাসিবাদীরা কাউকে কথা বলতে দেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে কেউ বললেই খুন গুম করেছে, আস্তে করে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। তারা বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সব কিছু ধ্বংস করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। প্রতিশোধ নিয়ে পালিয়েছে। এখন আমরা জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে চাই। এজন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে। নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমরা বাতিলের কাছে কখনো মাথানত করব না। এ দেশের তরুণ সমাজ যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য রক্ত দিয়েছে সেই স্বপ্ন জামায়াতে ইসলামী দেখে। আমরা ন্যায় বিচারের বাংলাদেশ চাই। এই বাংলাদেশ নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। তিনি আগামী দিনে ইসলামের দাওয়াত প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। এমনকি রাজশাহী থেকে ইসলামের বিজয় শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।
কর্মী সম্মেলন শেষে জামায়াত আমির রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডা: কাইছার রহমান চৌধুরী অডিটরিয়ামে চিকিৎসক ও পেশাজীবী সমাবেশ, নাইস কনভেনশন হলে মহিলা ও ছাত্রী সদস্য সমাবেশ, রাজশাহী চেম্বার মিলনায়তনে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement