আগস্টের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন সম্ভব : মির্জা ফখরুল

চলতি বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহ্বান জানান।
গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি যে, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি যে, এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এই কারণে আমরা সরকারকে আহ্বান জানাতে চাচ্ছি, নির্বাচন কমিশনকেও আহ্বান জানাচ্ছি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই বছরের মাঝামাঝি সময়েই মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার যে বক্তব্য ছিল, এই বছরের শেষের দিকে অথবা পরবর্তী বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হতে পারে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে গতকাল দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি যে, এত বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি যে, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে এবং মোটামুটি একটা স্থিতিশীলতা এসেছে। এই মাসে সংস্কার কমিশনের রিপোর্টও এসে যাবে। সুতরাং মনে হয় না, আরো বিলম্বিত করার কোনো কারণ আছে। যত বিলম্ব হচ্ছে ততই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই ওঠে না। আগে সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, তিনটা জাতীয় নির্বাচন হতে পারেনি, মানুষ সে জন্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সেটিকে তারা পূরণ করতে চায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের জন্য কতগুলো আনুষ্ঠানিকতা আছে। এর মধ্যে ভোটার তালিকা তৈরি অন্যতম। এটি এক মাসের মধ্যেই হালনাগাদ করতে চায় সেটি করতে পারবে। এরপরে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজ এক-দুই মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সবই তো তৈরি। নির্বাচন কমিশন বলেছে যে, সংসদ নির্বাচন করার জন্য তারা প্রস্তুত। তারা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে যে, দুইটা নির্বাচন একসাথে সম্ভব নয়।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিকালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া অন্য নির্বাচন করার চিন্তা আসে কোত্থেকে? নির্বাচন পেছানোর চিন্তাই আসে কোথা থেকে? কারণ এটা তো আপনার প্রথম কাজ। আপনি দেশকে যদি একটা রেললাইনের উপরে তুলতে চান তাহলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে পতিত ফ্যাসিস্টদের বিচার করবে। তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলাম আওয়ামী লীগ সরকার দ্বারা সবেচেয় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাহলে ফ্যাসিস্টদের বিচার বিএনপি করবে না তো কে করবে? যে বিচার শুরু হয়েছে সেখান থেকে সরে যাওয়ার কারো কোনো উপায় নেই। অবশ্যই বিচার হবে। আবার বিচার তড়িঘড়িও করা যাবে না। তড়িঘড়ি করলে কিন্তু এই বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। বিচার একটা প্রক্রিয়া, এটা চলবে।

বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত সব দল দ্রুত নির্বান চায়। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। জামায়াতে ইসলামীর সাথেও নির্বাচনের বিষয়ে খুব বেশি পার্থক্য নেই।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছ থেকে ঘোষণাপত্রের খসড়া পেয়েছেন তারা। বিষয়টা এত বেশি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ যে এক দিনের নোটিশে মতামত দেয়া সম্ভব নয়। অন্যগুলো, সংবিধান বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদের সাথেও কথা বলতে হবে। কারণ এই ঘোষণাপত্রের মধ্যে সংবিধানের ব্যাপারেও বহু কথা আছে। তিনি বলেন, বিএনপি একটা দায়িত্বশীল দল। এর জন্ম সংস্কারের মধ্য দিয়ে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন যা সবচেয়ে বড় সংস্কার।
লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগের চেয়ে ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান উপস্থিত ছিলেন।