গাজায় যেকোনো সময় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০২
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও দখলদার ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশ জোরালো হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের কাছ থেকে যে কোনো সময় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে যেসব মতানৈক্য ছিল সেগুলোতে সব পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এখন চূড়ান্ত ঘোষণার বিস্তারিত প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম আরো বলেছে, কাতারের পক্ষ থেকে খুব দ্রুতই এ ব্যাপারে ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিবিসি ও আলজাজিরা।
কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস ও ইসরাইলের আলোচকরা একই ভবনে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা হচ্ছে। যার অর্থ যুদ্ধবিরতি যে কোনো মুহূর্তে হবে। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমে যুদ্ধবিরতির চুক্তিটির খসড়া ফাঁস হয়েছে। এতে দেখা গেছে এটি তিনটি ধাপে কার্যকর হবে। প্রথম ধাপে ৩৩ ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দেবে হামাস। যার মধ্যে নারী ইসরাইলি সেনাও থাকবে। একেকজন নারী সেনার জন্য ইসরাইল ৫০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে। আর একেকজন বেসামরিকের বদলে ৩০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে দখলদার ইসরাইল।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমে আরো বলা হয়েছে, গাজার ফিলাডেলফি করিডর (গাজা ও মিসর সীমান্ত) থেকে ইসরাইলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিয়ে যাওয়া হবে। এটি কার্যকর হবে চুক্তির প্রথম ধাপের শেষ দিকে। দ্বিতীয় ধাপটি শুরু হবে চুক্তি কার্যকরের ১৬তম দিনে। ওই সময়টায় গাজায় বন্দী থাকা বাকি ইসরাইলি সেনা ও পুরুষদের মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা হবে। তৃতীয় ধাপে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। যার মধ্যে থাকবে গাজায় হামাসের বিকল্প একটি প্রশাসন তৈরি করা এবং গাজাকে পুনর্গঠন করা।
এ ছাড়া চুক্তির অন্যান্য জায়গায় নিরাপত্তার বিষয়টির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইলি সেনারা উত্তর গাজায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে নিজ বাড়িতে ফিরতে দেবে। তবে হামাস বা অন্যান্য কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী যেন অস্ত্র নিয়ে সেখানে যেতে না পারে সেটি নিশ্চিত করবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল। দোহায় কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় এই আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী ও নতুন প্রশাসন এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তিচুক্তি নিয়ে আজ মঙ্গলবার আবারও আলোচনায় বসেন মধ্যস্থতাকারীরা। এর আগে সোমবার মধ্যরাতে কাতারের রাজধানী দোহায় একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই আলোচনায় জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’জনেরই প্রতিনিধি ছিলেন। মধ্যস্থতাকারীদের দাবি, সোমবারের আলোচনা অনেকটাই সফল হয়েছে।
সোমবার নিজের পররাষ্ট্র নীতির সাফল্য নিয়ে বলতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চুক্তির ফলে বন্দীরা মুক্তি পাবেন। যুদ্ধ থামবে, ইসরাইলকে নিরাপত্তা দেয়া হবে এবং ফিলিস্তিনে মানবিক সাহায্যের পরিমাণ অনেকটাই বাড়বে। এ সময় তিনি আরো বলেছেন, হামাস যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, তার ফলে যারা ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা মানবিক সাহায্য পাবেন। বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শদাতা সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, এই চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার মুখে রয়েছে।
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছে। বেশ কিছু দিন হলো, দুই পক্ষই বন্দিবিনিময় নিয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু হামাসের দাবি, স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। ইসরাইলের সেনাদের গাজা থেকে চলে যেতে হবে। আর ইসরাইল দাবি করেছে, হামাসকে ভেঙে দিতে হবে। তা না করা হলে তারা যুদ্ধ থামাবে না।
হামাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা চুক্তির পক্ষে। বেশ কিছু মূল প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সেই আলোচনা থেকে চূড়ান্ত ফল পাওয়া যেতে পারে। ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিডিয়ন সার সাংবাদিকদের বলেছেন, আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। এটা আগের আলোচনার ক্ষেত্রে হয়নি। আমার মনে হয়, বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির জন্য প্রচুর পরিশ্রম করছে। বন্দীরা যাতে মুক্তি পায়, তারা তার চেষ্টা করছে।
এ দিকে আগামী ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার নেবেন। এটাকেই যুদ্ধবিরতি চুক্তির চরমসীমা হিসাবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব নেয়ার আগে যদি হামাস বন্দীদের মুক্তি না দেয়, তাহলে তাদের ভয়ঙ্কর মূল্য দিতে হবে। ব্লিনকেন জানিয়েছেন, আলোচনাকারীরা এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন, ট্রাম্প এই চুক্তি মেনে নেবেন। তাই মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকর আলোচনায় ছিলেন। বাইডেনের দূত ব্রেট ম্যাকগার্কও ছিলেন।
গাজা পুনর্গঠন ও শাসনের পরিকল্পনা দেবেন ব্লিনকেন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গাজার পুনর্গঠন ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন। দেশটির সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন মার্কিন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে স্টেট ডিপার্টমেন্টে এটিই ব্লিনকেনের শেষ সপ্তাহ। তার পরও তিনি আশা করছেন, তার প্রস্তাব গাজার জন্য ভবিষ্যতের যেকোনো পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের জন্যও। খবরে বলা হয়েছে, ব্লিনকেন আজ মঙ্গলবার সকালে মার্কিন থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলে দেয়া বক্তৃতায় তার পরিকল্পনা তুলে ধরবেন।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার রাতে জানিয়েছেন, ইসরাইল ও হামাস একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে, তাদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে এবং তারা এটি সম্পন্ন করতে যাচ্ছে, সম্ভবত সপ্তাহের শেষ নাগাদ।’ ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও কাতারের রাজধানী দোহায় এ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।
হামাস-পরবর্তী গাজায় শাসনব্যবস্থা গঠনের পরিকল্পনা এই চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধের সমাপ্তি নিশ্চিত করবে। ব্লিনকেন গাজায় নিরাপত্তা, প্রশাসন ও পুনর্গঠনের পরিকল্পনা মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন এরই মধ্যে। এই পরিকল্পনা যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর বাস্তবায়িত হবে।
ব্লিনকেনের বক্তৃতায় তিনি সেই নীতিমালা পুনর্ব্যক্ত করবেন, যা তিনি যুদ্ধের শুরুতে টোকিওতে বলেছিলেন। এর মধ্যে গাজায় ইসরাইলি স্থায়ী দখলদারিত্ব, অঞ্চল সঙ্কুচিত করা বা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ব্লিনকেন এই যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে চান এবং বক্তৃতায় তিনি পরিষ্কার করবেন, কীভাবে ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে কৌশলগত সাফল্য অর্জন করতে পারে।’
২০৪ সাংবাদিক নিহত : এ দিকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় মোহাম্মদ আলতালমাস নামে আরো এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তিনি সোমবার গুরুতর আহত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন। গাজা সিটিতে ইসরাইলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে আহত হন তিনি। সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় ২০৪ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আলতালমাস বার্তা সংস্থা সাফার সাংবাদিক ছিলেন। তিনি গাজা সিটিতে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট, ফেডারেশন অব আরব জার্নালিস্ট এবং বিশ্বের সব দেশের সব সাংবাদিক সংস্থাকে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। একদিকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে অপরদিকে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার বাহিনী। বেশ কিছু মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে, গত সোমবার ভোর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার ১২ জন প্রাণ হারিয়েছে। ইসরাইলি বাহিনীর উত্তর গাজা অবরোধ করার শততম দিন পার হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা বাড়ছে : এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টা গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৬১ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ২৮১ জন আহত হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য বলছে যে গাজায় গত ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালের পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৬৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া কমপক্ষে ১ লাখ ১০ হাজার ১২ জন আহত হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা