২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো সাবেক এমপি ও ৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা

-

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় লাশ পোড়ানো ঘটনায় করা মামলায় ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও সেখানে কর্মরত চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আশুলিয়ায় আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যা করা ছাত্র-জনতার লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আলাদা একটি মামলা (বিবিধ মামলা) নথিভুক্ত হয়। এ নিয়ে এই ট্রাইব্যুনালে মোট আটটি মামলা হলো।
আদেশের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আজ (মঙ্গলবার) ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন দাখিল করা হয়েছিল। সাভারের আশুলিয়া এলাকায় গত ৫ আগস্ট ছয় ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রথমে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের হত্যা করার পর চ্যাংদোলা করে একটি রিকশা ভ্যানের মধ্যে ওঠানো হয়। ওখানে কিছুক্ষণ ফেলে রাখার পর পুলিশের একটি ভ্যান নিয়ে এসে সেখানে ওঠানো হয়। ভ্যানটা সেখান থেকে সরিয়ে থানার কাছে একটি দোকানের সামনে রেখে পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল মানুষ যাতে করে বুঝতে না পারে, তাদের কে হত্যা করেছে। পুলিশ হত্যা করে পুলিশের গাড়িতে রেখে আগুন দিলে মানুষ মনে করতে পারে, হয়তো এই হত্যাকাণ্ড ছাত্র-জনতা করেছেন। এভাবে দায় এড়ানোর জন্য তারা পুলিশের গাড়িতে রেখে আগুন দেয়।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত করেছে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, তাতে দেখা যায়, সে সময় পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগকে নিয়ে তৎকালীন ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম নিজ হাতে অস্ত্র নিয়ে গুলি করেছেন। পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগকে নিয়ে তিনি গুলি করেছেন। এই লাশ পোড়ানোর ঘটনার সাথে তিনিসহ সে সময় কর্মরত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। আজ এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছিল। তা মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য বলা হয়েছে। গ্রেফতার করামাত্র তাদের ট্রাইব্যুনালের কাছে সোপর্দ করতে হবে। আগামী ২৬ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন যা পাওয়া যাবে, তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ব্যাপারে যাতে কোনো অনাস্থা তৈরি না হয়, আমরা ব্যাপকহারে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করছি না। কারণ গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যাপকভাবে জারি না করে আমরা তদন্ত করে যাদের বিরুদ্ধে অ্যাভিডেন্স পাচ্ছি সেগুলো নিয়ে আসছি। তবে কোনো অপরাধীই ছাড় পাবে না। তিনি বলেন, ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে এই অপরাধ হয়েছে। তাই গ্রাউন্ড লেভেল পর্যন্ত যেতে আমাদের সময় লাগবে। যারা অপরাধের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন, টপে যারা আছেন তাদেরগুলো আমরা আগে নিয়ে আসছি। ক্রমান্বয়ে আমরা নিচের দিকে যাবো। যাদের বিরুদ্ধে কনক্রিট অ্যাভিডেন্স পাবো তাদের বিরুদ্ধে আমরা গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইব।

এই চার পুলিশ কর্মকর্তা এ ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন বলেও জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি আরো বলেন, নাম বললে পালিয়ে যেতে পারেন, তাই এই চার কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন মহল, যারা গ্রেফতার নিশ্চিত করে, তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে পালিয়ে যাওয়ার আগে সুষ্ঠুভাবে গ্রেফতার করতে পারে।
পুলিশের এই চার কর্মকর্তা বিভিন্ন জায়গায় পদায়নরত অবস্থায় আছেন জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, কিন্তু তারা কর্মস্থলে আছেন কি না, তা তিনি জানেন না। তাদের এখনো চাকরিচ্যুত করা হয়নি। তিনি আশা করছেন, দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সাথে যারা বিশেষভাবে জড়িত, তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার পরেই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন করা হচ্ছে বলেও জানান তাজুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালে শুনানির সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ, এস এম মইনুল করিম, শাইখ মাহদী প্রমুখ।

শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে পারলে বিচারটা ভালোভাবে করা সম্ভব হবে : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরকার যদি ফেরত আনতে পারে তাহলে বিচারটাভালোভাবে করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা প্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে নোট ভার্বাল জানিয়েছেন সরকার এটাকে আপনি চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন এখানে আমার মূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্র রাষ্ট্রের কাজ করছেন, আমিও রাষ্ট্রের হয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাজ করছি। আমাদের অনুরোধের ভিত্তিতে রাষ্ট্র এ পদক্ষেপ নিয়ে নোট ভার্বাল দিয়েছে। কূটনৈতিক চ্যানেলেও তাকে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এটা তাদের ধারাবাহিক কাজের অংশ। এখানে আমার মন্তব্য করার কিছু নেই। সরকার এই কাজের মাধ্যমে সফল হয়ে তাকে যদি আমাদের কাছে আনতে পারেন তাহলে বিচার আরো ভালোভাবে করা সম্ভব হবে। নির্দিষ্টভাবে এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও ট্রাইব্যুনাল আলাদা নয় বরং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যা করা হয়েছে তা আমাদের অনুরোধের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। এ ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে সুষ্ঠু বিচার করা সম্পন্ন হবে বলে আমরা মনে করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement