২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হাসিনা এত পাপ করেছে যে পালানো ছাড়া পথ ছিল না : ফখরুল

শিবগঞ্জের জনসভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল : নয়া দিগন্ত -


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে শুধু ঠাকুরগাঁও সদরে সাত হাজার নেতাকর্মীকে মামলার আসামি করা হয়েছিল। এক শ’র উপরে মামলা করেছিল তারা। আর সারা দেশে কয়েক লাখ মামলা দিয়েছে, যার আসামি অন্তত ৬০ লাখ। ৭০০ মানুষকে গুম করেছে। তারা আয়নাঘর তৈরি করে মানুষকে ধরে ধরে নিয়ে সেখানে অত্যাচার করেছে বছরের পর বছর। কাজগুলো করত শেখ হাসিনা। আজকে উনি এমনি এমনি পালিয়ে যাননি। এত অন্যায় করেছেন, পাপ করেছেন যে তার পালানো ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। এ দেশের মানুষ যখন জেগে উঠেছে, আন্দোলন করেছে, বুকের মধ্যে বুলেট খেয়েছে তখন তার পালানো ছাড়া গতি ছিল না। গতকাল সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে সদর উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, ২৪ এর আন্দোলনে ঠাকুরগাঁওয়েরও চার ছেলে শহীদ হয়েছেন। পরে মোট ১৩ জন শহীদ হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, এখনো যাদের চিকিৎসা চলছে। আমার ছেলের গুলি লাগলে আমি বাবা হয়ে কী স্থির থাকতে পারি। বিএনপি ১৫ বছর লড়াই করেছে বলে আজকে ছাত্ররা পেরেছে। ১৫ বছর অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে আমরা একটি পরিবেশ তৈরি করেছি। এ কারণে সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আমরা তো বাড়াবাড়ি করতে চাইনি। কিন্তু শেখ হাসিনা ভারতে বসে আবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে। বিভিন্ন দেশে থাকা বাঙালিদের আবার বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটি স্বাধীন দেশ পাবো বলে। পাকিস্তানিরা আর আমাদের ওপর অত্যচার করতে পারবে না। তাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম যুদ্ধ করে। রক্ত দিয়েছিলাম; লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিল। পরে আমরা যখন স্বাধীন হলাম যুদ্ধ করে, একটা দেশ পেলাম বাংলাদেশ। আমরা ধারণা করেছিলাম বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে এসে আমাদের সুন্দর একটি দেশ দেবেন। যেখানে আমরা পরস্পর পরস্পরের সাথে ভাই ভাইয়ের মতো বাস করব। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা সেটিই পাই নাই। এই স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই কিন্তু শুরু হয়ে গেছে এ দেশে হানাহানি, কাটাকাটি, খুন, জখম, হিংসা। যে নেতাকে মানুষ ভালোবাসত, যে দলটাকে মানুষ ভালোবাসত সে দলটাই এ দেশের মানুষের ওপরে চেপে বসল। ওই সময় আসম আব্দুর রউফের একটা দল ছিল জাসদ, সেটা আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে আসে। কারণ তারা মনে করেছিল আওয়ামী লীগ ভালোমতো দেশ চালাতে পারছে না। তারা চুরি করছে, ডাকাতি করছে, মানুষকে খুন, জখম, গুম করে দিচ্ছে তখন জাসদ সেখান থেকে বের হয়ে আসে। ওই সময় জাসদের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে তারা হত্যা করেছে।

স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যুদ্ধ করে যে একটা বাংলাদেশ পেয়েছিলাম ওই সময় স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটি কি আপনারা জানেন কে দিয়েছিল। এ ঘোষণা কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল দেয়নি। কোনো ব্যক্তি দেয়নি। ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এ জন্য আমরা বলি যে স্বাধীনতার ঘোষণা জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন। সেই জিয়াউর রহমান যখন দায়িত্ব নিলেন তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। তার আগে শেখ মুজিব কিন্তু সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। একনায়কতন্ত্র বাকশাল গঠন করেছিল। তখন সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে মানুষের কথা বলার যে স্বাধীনতা সেই স্বাধীনতাকে তারা নষ্ট করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আমরা যখন স্বাধীনতা পেলাম তখন এরশাদ ৮১ সালে জোর করে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলেন। আমাদের ইতিহাস, অতীত জানা দরকার, রাতারাতি কিছু হয়ে যায়নি। দীর্ঘ দিন ধরে আমরা লড়াই করছি সংগ্রাম করছি। এ দেশ শান্তির, ভালোবাসার, উন্নয়নের দেশ। এই আওয়ামী লীগ যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলো ২০০৯ সালে আবারো দেশের মানুষের ওপর শুরু হলো অত্যাচার-নির্যাতন। তবে এবারে কায়দাটা ছিল ভিন্ন। এবার তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালুর জন্য কাজ করেছে। বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। ভোটের সময় একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। এটিতে আমরা তিনবার নির্বাচন করেছি খুব ভালো ফলাফল পেয়েছি। কিন্তু দুঃখের কথা আওয়ামী লীগ সরকার ২০১২ সালে সময় তারা এটিকে বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করল; অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকবে আর নির্বাচন হবে। ফলে আওয়ামী লীগ একাই ভোট দিয়েছে অন্য কাউকে ভোট দিতে দেয়নি। ফলে আমরা তিন তিনবার ভোট দিতে পারিনি। আওয়ামী লীগের সময়ে সাংবাদিকরা তাদের বিরুদ্ধে কিছু প্রকাশ করতে পারেনি।

অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, আজকে সুযোগ এসেছে। আমরা আগের অবস্থাকে পরিবর্তন করব। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছয় বছর জেলে ছিলেন। উনাকে যেখানে রেখেছিলেন সেখানে মানুষ থাকার মতো পরিবেশ ছিল না। তাকে ধীরে ধীরে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। আর আমাদের নেতা তারেক রহমান তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তার বিরুদ্ধে হত্যা হামলার মামলার আসামি করে দেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্স হয়। জুডিসিয়াল কমিশনের কথা বলা হয়েছিল। তখন আমাদের নেতা তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছিলেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের সাথে মিলে দিয়েছিলেন। আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের যে ভাইবোনেরা আছেন আমাদের সাথে তাদের কোনো পার্থক্য নেই। যদি কখনো সুযোগ পাই জনগনের ভোটের মাধ্যমে, যদি আমরা কখনো রাষ্ট্রের দায়িত্বে যেতে পারি তাহলে আমরা সব ধর্মের সব অধিকারকে নিশ্চিত করা হবে। আমরা নিশ্চিত করব কৃষকরা যাতে ফসলের ন্যায্যমূল্য পান। আর বিনা কারণে গায়েবি মামলা যাতে করে না হয়, সেটি যেন না হয়। বিনা কারণে খুন আর যাতে করে না হতে হয়। যারা দায়িত্বশীল জায়গায় আছেন তারা বিভ্রান্তমূলক কথা বলবেন না। আমরা শান্তি চাই। শান্তিপূর্ণ একটা নির্বাচন করতে চাই। সে নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাদের যাকে পছন্দ তাকে নির্বাচিত করতে চাই। তারা আমাদের সরকারব্যবস্থার পরিবর্তন আনবে। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করবে, গুণ্ডাবাজি বন্ধ করবে, দখলবাজি বদ্ধ করবে। আমরা সবাইকে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো: আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, সহসভাপতি আল মামুন আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিম, ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, সুলতানুল ফেরদৌস নম্র চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি মো: শরিফুল ইসলাম শরিফ, জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মাহেবুল্লাহ আবু নুর প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন।

 


আরো সংবাদ



premium cement