২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
মিরপুরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময়ে ডা: শফিক

আমরা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত বা সংখ্যালঘু কনসেপ্টে বিশ্বাসী নই

রাজধানীর মিরপুরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা : নয়া দিগন্ত -

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য সাধারণ দেশ; ফুলের বাগান। মাঝে মাঝে কিছু হুতুমপেঁচা আমাদের ফুলের বাগানে ঢুকে সবকিছু এলোমেলো করে দেয়ার অপচেষ্টা করে। এরা কোনো ধর্মের নয় বরং অপশক্তি। তাই এদের সম্পর্কে ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত বা সংখ্যালঘু কনসেপ্টের বিশ্বাসী নই। তিনি আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি রায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
তিনি গতকাল রাতে রাজধানীর মিরপুর সেনপাড়া খ্রিষ্টান চার্চে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াত আয়োজিত খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথা বলেন। মিরপুর ব্যাপটিস্ট চার্চের জেস্ট পালক-রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, মিরপুর ব্যাপটিস্ট চার্চের সাধারণ সম্পাদক বাবুল কুমার সাহা, মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পালক রেভারেন্ড প্রিন্স কিরণ বাইন, সহ-সম্পাদক মনোজ বাড়ৈ, কোষাধ্য অসিত মিত্র, ব্যাপ্টিস্ট চার্চ মহিলা কমিটির সভানেত্রী প্রভাতি ফলিয়া, সম্পাদক অনিমা বাড়ৈ। মতবিনিময় সভায় জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, শাহ আলম তুহিন, শূরা সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম, আব্দুল মতিন খান ও মাওলানা আতিক হাসান রায়হান প্রমুখ।
বক্তব্য রাখেন চার্চের সহ-কোষাধ্য ডেভিড হালদার, টমাস সিংহ, ঢাকা এবিসিএস জন সরকার চার্চের সহ-পালক, পরিচালক জেমস প্রদীপ বিশ্বাস, সমীর বাড়ৈ, ডেভিড বিশ্বাস, দিলীপ সিং, আদরী বাড়ৈ সুশ্রী অধিকারী ও সুতপ সিংহ তমা জুয়েল বালা জয় প্রমুখ।
ডা: শফিকুর রহমান মতবিনিময়কালে বলেন, আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ:) এবং আদি মাতা হজরত হাওয়া (আ:)। ইসলামে সব নবী- রাসূলকে যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এটা আমাদের ঈমান বা বিশ্বাসের অংশ। তারা সবাই আল্লাহর প্রফেট; মেসেঞ্জার। তারা আল্লাহর বিধানের বার্তা বাহক হিসাবে দুনিয়াতে প্রেরীত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে হজরত ইসা (আ:)ই ব্যতিক্রম। তিনি দুনিয়াতের দ্বিতীয়বার প্রেরীত হয়ে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবেন। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে বিভাজিত করি না। জামায়াত ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, মত, পথ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়েই দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জামায়াতের এই সংগ্রামে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ সব ধর্মের মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছোট একটি রাষ্ট্র। এ দেশে ১৮ কোটি মানুষের বসবাস। দেশে নানা ধর্ম ও গোত্রের মানুষের বসবাস হলেও মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান প্রধানতম ধর্ম। সবার সাথে মিলেমিশে চলা আমাদের ঐতিহ্য। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত বা সংখ্যালঘু কনসেপ্টে বিশ্বাসী নই বরং আমরা সবাই বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। জামায়াতের লোকেরা চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, দুর্নীতি, লুটপাটসহ কোনো ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত নন। তার পরও আমরা মানুষ। আমাদের কোনো মানবীয় ভুল ধরিয়ে দিলে আমরা তা সংশোধনের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই হীনম্মন্য নই। আমরা দেশের সব নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সব সময়ই আপসহীন। তিনি একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সব শ্রেণীর মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
আমিরে জামায়াত বলেন, শ্রষ্টাও এক ও অদ্বিতীয়। আকাশ থেকে বৃষ্টি হলে সব ধর্ম ও শ্রেণীর মানুষ সমানভাবে উপকৃত হোন। আবার কোনো বিপর্যয় হলেও সবাইকেই তা ভোগ করতে হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘু আখ্যা দিয়ে শ্রেণী বিশেষ মানুষের ওপর জুলুম করার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী এ ধরনের সঙ্কীর্ণতার সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বে।
মৌলভীবাজারের কর্মী সম্মেলন
সিলেট ব্যুরো ও মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, আগামীর বাংলাদেশকে তরুণদের তুলে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, সাড়ে ১৫ বছর দফায় দফায় আমরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কিন্তু সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি আমরা ঘটাতে পারিনি। স্বৈরাচারকে আমরা তাড়াতে পারিনি, বিদায় করতে পারিনি। আমি গর্বিত আমাদের সন্তানেরা সেই কাজটি করেছে। আমি আমাদের সন্তানদেরকে ভালবাসা উপহার দিচ্ছি। শ্রদ্ধ জ্ঞাপন করছি, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জাতির পক্ষ থেকে তাদেরকে স্যালুট জানাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে তারা অসাধ্য সাধন করেছে। এরকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। ইনশা আল্লাহ আগামীর বাংলাদেশ আমরা তাদের হাতেই তুলে দেবে।
গতকাল সকালে মৌলভীবাজার জেলা শাখার আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা সরকারি হাইস্কুল মাঠে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন জেলা আমির মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার মো: শাহেদ আলী। অনুষ্ঠান যৌথভাবে পরিচালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইয়ামির আলী ও সহকারী সেক্রেটারি হারুনুর রশিদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাড. এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো: ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হবিগঞ্জ জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মুতলিম ও মো : আবদুল মান্নান, মৌলভীবাজার বিএনপি জেলা শাখার আহবায়ক ফয়জুল কবির ময়ুন, হেফাজতে ইসলামের জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা আবদুস সবুর, ‘মৌলভীবাজার জেলার নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শরিফ মাহমুদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমির শাহীন আহমদ খান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার শহর শাখার সভাপতি তারেক আজিজ, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি হাফেজ আলম হোসাইন, বড়লেখা উপজেলার সাবেক আমির মো: কমর উদ্দিন, মৌলভীবাজার পৌর শাখার আমির ও জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা আমির মো: ফখরুল ইসলাম, বড়লেখা উপজেলার আমির মো: এমদাদুল ইসলাম, রাজনগর উপজেলার আমির আবুর রাইয়ান শাহীন, কুলাউড়া উপজেলার আমির অধ্যাপক আব্দুল মুনতাজিম, জুড়ী উপজেলার আমির আব্দুল হাই হেলাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলার আমির মাও. ইসমাঈল হোসেন, কমলগঞ্জ উপজেলা আমির মো: মাসুক মিয়া।
এর আগে মাওলানা শেখ আব্দুল হকের অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মী সম্মেলন শুরু হয়। এ সময়টায় তারা জাতির ঘাড়ে বসে সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল।
ডা: শফিকুর রহমান আরো বলেন, আওয়ামী লীগ দেশটাকে শ্মশান কিংবা গোরস্তানে পরিণত করেছিল। তাদের প্রথম লক্ষ্যবস্তু করলো জামায়াতে ইসলামীকে; যারা পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক। তারা তাদের সততায় দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছিল। দক্ষতার সাক্ষর রেখেছিলেন। দায়িত্বের পরতে পরতে সেই সব নেতৃবৃন্দকে ঠাণ্ডা মাথায়, মিথ্যা অভিযোগ সাজানো কোর্ট, পাতানো সাক্ষী এবং ব্রাসেলস থেকে রায় এনে সেই সব নেতৃবৃন্দকে খুন করা হলো। ফাঁসি দেয়া হলো। কাউকে কাউকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হলো, জেলের ভেতর মৃত্যু করলেন।
আমরা তখন আমাদের বন্ধু সব রাজনৈতিক সংগঠনকে বলেছিলাম, এটি জামায়াতের ওপর আঘাত নয়। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের এই বিশাল দেয়াল ভেঙে দিলে বাকিরা সবাই ভেসে যাবেন, কেউ টিকতে পারবেন না। আমাদের পাশে দাঁড়ান। ফ্যাসিজমকে সম্মিলিতভাবে আমরা মোকাবেলা করি। আমরা কথাগুলো বুঝাইতে পারিনি। সবাই মিলে একসাথে সেই যুদ্ধটা করতে পারলাম না। তার পরের ইতিহাস আপনাদের সামনে পরিষ্কার। তারা আর কাউকে ছাড়লো না। এক এক করে সবাইকে ধরলো।বিএনপিকে ধরলো, হেফাজতকে ধরলো, আলেম ওলামাকে ধরলো, অন্যান্য দলকে ধরলো। কাউকে তারা ছাড় দিলো না। এমনকি সাংবাদিক বন্ধুরা আজকে এসেছেন নিউজ কাভার করতে; তাদেরকেও ধরলো। তাদেরকে খুন করলো, তাদেরকে আমাদের সাথে গুম করলো। তাদের আয়না ঘরে পাঠালো। কাউকে কাউকে ভারতের ওপাড়ে বর্ডারে নিয়ে ফেলে দিলো। এভাবে তারা সারাটা দেশকে নরকে পরিণত করেছিল।
ঐক্যবদ্ধভাবে জুলুম নির্যাতনকারীদের প্রতিরোধ করতে হবে : অধ্যাপক মুজিবুর
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিদায় হয়েছে। আর এই নতুন বাংলাদেশে কেউ যদি আবারো জুলুম নির্যাতন করতে চায় তাহলে তাদের চিহ্নিত করে জনগণকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া বাজারে উপজেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ করে রেখেছিল পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। আল্লাহর অনুগ্রহে ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতি স্বৈরাচারের জাঁতাকল থেকে মুক্তি পেয়েছে।
তানোর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আক্কাশ আলীর পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির রাজশাহী জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক, সাবেক জেলা আমির মাওলানা আমিনুল ইসলাম, জেলা শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি ড. ওবায়দুল্লাহ, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য জালাল উদ্দিন ও সিরাজুল ইসলাম, শিবিরের রাজশাহী পশ্চিম জেলা সভাপতি রমজান আলীসহ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা।


আরো সংবাদ



premium cement