দ্রুত নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত
বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অভিমত- ইকবাল মজুমদার তৌহিদ
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪
দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরে পেতে চায় ক্রিয়াশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এই দলগুলোর নেতারা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধির কাছে রাষ্ট্রের ক্ষমতা বুঝিয়ে দেয়া। আর বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দ্রুত জাতীয় নির্বাচন না হলে দেশে আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এমনকি বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা হারাতে পারে বলেও মনে করেন তারা।
গতকাল দেশের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সাথে কথা হলে এ প্রতিবেদকের কাছে তারা এমন মতামত প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার নয়া দিগন্তকে জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন কেবল সেদিকেই মনোযোগ দেয়া উচিত অন্তর্র্বর্তী সরকারের।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর জনগণ ভোট দিতে পারেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্বাচনী রূপরেখা দিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে সরকার চাইলে আরো দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। সরকারের উচিত জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য ও প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমাদের আমিরে জামায়াত সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, সংস্কারের রোডম্যাপ ও নির্বাচনের রোডম্যাপ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। আমরা মনে করি, মোটাদাগে সংবিধান সংস্কার করা এই সরকারের কাজ না। শুধুমাত্র নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো দ্রুত সময়ে শেষ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সরকার উপহার দিবে বলে আমরা মনে করি।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্ন্া বলেন, একটি গুণগত গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে যেসব সংস্কার প্রয়োজন দ্রুত সময়ের মধ্যে সেসব শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। আমরা দ্রুত সময়ে নির্বাচন চাই। তবে যেমন-তেমন নির্বাচন না। তাই এসব সংস্কারের জন্য ন্যূনতম যে সময়টুকু প্রয়োজন, আমরা সরকারকে সেই যৌক্তিক সময়টুকুতে সহযোগিতা করব।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করি। জাতি হিসেবে তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তবে কেউ যদি মনে করেন, এই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার পতন আন্দোলনের কৃতিত্ব কোনো একক গোষ্ঠীর, তবে সেটা ভুল। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর, দিনের পর দিন মানুষ ভোটের অধিকারের জন্য আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে তৎকালীন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে সংগ্রাম করেছে। যার সফলতা এসেছে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। এই গণ-অভ্যুত্থানে দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। দেশের মানুষ চেয়েছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুঃনপ্রতিষ্ঠার জন্য। তাই সরকারের উচিত দ্রুত সময় নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা। নির্বাচন বিলম্বিত হলে সরকারের প্রতি জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, যেকোনো অগণতান্ত্রিক সরকার দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্রে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি হয়। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত দ্রুত সময় সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, দীর্ঘ সময় জনগণ ভোটের জন্য আন্দোলন করেছে। ভোটের অধিকার ফিরে পেলে অতীতে সৃষ্ট রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধানের পথ তৈরি হবে। তাই সম্মান ও আস্থা ধরে রাখতে বর্তমান সরকারের দ্রুত সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা জরুরি বলে আমি মনে করি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয় এটা সঠিক। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে বর্তমান সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো কেউ তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করছে না। এতে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। সরকারের উচিত একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ ও তা প্রকাশ করা। আর রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তারা কী কী সংস্কার চায় তা স্পষ্টভাবে বলা। ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের সাথে আলোচনা করে তারা বলুক আমরা এই এই সংস্কার চাই। তা নাহলে সঙ্কট তৈরি হতে পারে। যে বিপ্লব হয়েছে সে বিপ্লবের সুফল অর্জন নাও হতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে এখনকার পরিস্থিতিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র চলছে। তাই সবার অবস্থান ও চাওয়া স্পষ্ট করার বিকল্প নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা