২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হোয়াইটওয়াশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়া ও কর্মকর্তারা : নয়া দিগন্ত -


দারুণ এক সাফল্য নিয়েই দীর্ঘ সফর শেষে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টেস্ট সিরিজ ড্র করে কৃতিত্ব কুড়ানোর পর ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয় অনেকটা নড়বড়ে ক্রিকেট দলের সদস্যরা। কিন্তু টি-২০তে এমনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশ তা ছিল ধারণারও বাইরে। লিটন দাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল নতুন এক ইতিহাস গড়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করা জবাব দিলো। টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিরুদ্ধে টি-২০ ম্যাচে ৮০ রানের জয় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বড় ব্যবধানে জয়। ২০১৮ সালে মিরপুরে ৩৬ রানের জয়টি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয়। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ২০২১ সালে ৮৪ রানের জয়টি বাংলাদেশের এই ফরম্যাটে সবচেয়ে বড় জয়।

টি-২০তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বরাবরই অনেক শক্তিশালী। নিজ দেশে হলে তো কথাই নেই। ক্যারিবীয় কোচ ফিল সিমন্সের অধীনে সেই দলটিকেই মাটিতে নামিয়ে আনল টাইগাররা। টি-২০ বিশ্বকাপে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে ক্রিকেটের ক্ষুদ্র এ সংস্করণে ক্যারিবীয়দের বর্তমান অবস্থান ৪ নম্বরে আর বাংলাদেশ নবম। কাগজে-কলমে ফারাকটা পরিষ্কার। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে চিত্রটা সম্পূর্ণই উল্টো। কোনো মতে সিরিজের প্রথমটিতে জয় পাওয়ার পর দ্বিতীয়টি বাংলাদেশ একটু সহজেই জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেছিল। এরপর কিংসটাউনে গতকাল আরো পরাক্রমশালী হয়ে ওঠা টাইগারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে স্বাগতিকরা। ব্যাটে বলে স্পষ্ট ব্যবধানেই এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তিনটি ম্যাচেই আগে ব্যাট করে জয় ছিনিয়ে আনে বাংলাদেশ।

মাঠের লড়াইয়ে বিশ্লেষকদের সব সমীকরণ বদলে দিয়েছে টাইগাররা। ৮০ রানের বিশাল জয়ে তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজে স্বাগতিকদের ধবলধোলাই করে ছাড়ল লিটন-তাসকিন-জাকেররা। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে জাকের আলির বিধ্বংসী ইনিংসে ভর করে ১৮৯ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ, যা এই মাঠের সর্বোচ্চ স্কোর। এরপর বোলারদের আরেকটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ১০৯ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুটিয়ে দেয়। সিরিজের প্রথম টি-২০তে ৭ রান ও দ্বিতীয়টিতে ২৭ রানের জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। বাকি ছিল হোয়াইটওয়াশ মিশন। সেটিও সেরে উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো বড় জয়ে বছর শেষ করল বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচের সিরিজে গত বছর দেশের মাঠে ইংল্যান্ডকে আর ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডকে তাদেরই মাঠে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে গিয়ে প্রথম টেস্টে হারের পর দ্বিতীয়টি জিতে সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করেছিল নাজমুর হোসেন শান্তর দল। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে লিটন-মাহমুদুল্লাহ-মিরাজরা হোয়াইটওয়াশ হয় ক্যারিবীয়দের কাছে। অবশ্য এই দলে ছিলেন না নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ দুই ক্রিকেটার তৌহিদ হৃদয় ও মোস্তাফিজুর রহমান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলাটি বৃহস্পতিবার রাতে হলেও বাংলাদেশ সময়ে শুরু হয় গতকাল সকাল ৬টায়। সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক লিটন দাস। পারভেজ হোসাইন ইমনকে নিয়ে ইনিংসের শুরুটাও ভালো করেন লিটন। ৪.৪ ওভারে ৪৪ রান আসে এই জুটিতে। এরপর বিদায় নেন আগের দুই ম্যাচে যথাক্রমে ০ ও ৩ রানে আউট হওয়া লিটন। এবার অবশ্য দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করে ১৩ বলে ১৪ রান করে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন তিনি। পরের ওভারে আলজারি জোসেফের বলে ফ্লিক শটে সীমানায় ধরা পড়েন পারভেজ। চারটি চার ও দুই ছক্কায় ২০ বলে ৩৯ রানে ফেরেন ইমন। তিনে নেমে তানজিদ হাসান ৯ রান করে মটির বলে নিকোলাস পুরানের তালুবন্দী হন।

দলীয় ৬৫ রানে তৃতীয় উইকেট হারালে রানের গতি সচল রাখার চেষ্টা করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু তার ইনিংস থেমে যায় ২২ বলে ২৯ করে। এর কিছুক্ষণ পর শুরু হয় ‘জাকের শো’। একটা পর্যায়ে তার রান ছিল ১৩ বলে ১০। চতুর্দশ ওভারে মটিকে স্লগ সুইপে ছক্কা মেরে তার গতি বদলের শুরু। পরের ওভারে রান আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান তিনি। ২ রানের বেশি করতে পারেননি আগের দুই ম্যাচের নায়ক শামীম হোসেন পাটোয়ারী। এক বল পর রান আউট হয়ে ফিরেন শেখ মাহেদীও। ১৫ ওভারে ৬ উইকেটে ১১৪ রান তখন বাংলাদেশের। দলকে সর্বোচ্চ রানের চূড়ায় নিতে এরপর শুরু হয় জাকের ম্যাজিক। শেষ পাঁচ ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে পাঁচটি ছক্কা ও দু’টি চার। সপ্তম উইকেটে তানজিম হাসানের সাথে তার ৫০ রানের জুটি গড়েন ২৭ বলে। ১৭ রান করে ফেরেন তানজিম। শেষ ওভারে জোসেফের বলে বাউন্ডারিতে ৫০ পূর্ণ করে ওভারের শেষ চার বলের তিনটিই ছক্কায় রূপ দেন জাকের আলী। ৪১ বলে ৬ ছক্কা ও ৩টি চারে ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন জাকের। ২২টি আন্তর্জাতিক টি-২০ খেলা জাকেরের এটি ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস আর দ্বিতীয় ফিফটি। আর অন্য প্রান্তে কোনো বল মোকাবেলা না করে ০ রানে ছিলেন রিশাদ হোসেন।

রেকর্ড রান তাড়ায় শুরু থেকেই পিছু হটতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাসকিন আহমেদের করা ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট ব্র্যান্ডন কিং। পরের ওভারে শেখ মাহেদীর শিকার অভিষিক্ত জাস্টিন গ্রেভস। এরপর জনসন চার্লস ও নিকোলাস পুরান পরের তিন ওভারে করেন ৩৪ রান। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি সিরিজে মাহেদীর বলে তৃতীয়বারের মতো আউট হওয়া পুরান (১৫)। রানের খাতা না খুলেই হাসান মাহমুদের শিকার রোস্টন চেস। ২৩ রান করার পর চার্লসকে রান আউট করেন রিশাদ হোসেন। একটু পর বল হাতে বিদায় করেন অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েলকেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর তখন ৬ উইকেটে ৬০। রোমারিও শেফার্ডের ব্যাট থেকে ৩৩ রানের ইনিংসে আসলে এক শ’ ছাড়ায় উইন্ডিজ। ২১ রানে ৩ উইকেট নেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। তার এই স্পিন বিষই শেষ করে দেয় ক্যারিবীয়দের লড়াই। ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ম্যাচসেরা হন জাকের। আর সিরিজসেরা শেখ মাহেদী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ১৮৯/৭ (২০ ওভার) লিটন ১৪, পারভেজ ৩৯, তানজিদ ৯, মিরাজ ২৯, জাকের ৭২*, শামীম ২, শেখ মাহেদী ০, তানজিম ১৭, রিশাদ ০*; শেফার্ড ২/৩০, জোসেফ ১/৫৯, চেস ১/১৫, মতি ১/৩০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১০৯/১০ (১৬.৪ ওভার) কিং ০, চার্লস ২৩, গ্রেভস ৬, পুরান ১৫, চেস ০, পাওয়েল ২, শেফার্ড ৩৩, আকিল ৩১, মতি ১২, জোসেফ ১, ম্যাককয় ৫, সিলস ৪*; তাসকিন ২/৩০, মাহেদী ২/১৩, তানজিম ১/৩১, হাসান ১/৯, রিশাদ ৩/২১।
ফল : বাংলাদেশ ৮০ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০তে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : জাকের আলি।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : শেখ মাহেদী হাসান।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে কারাভোগ শেষে ফিরল ১৫ বাংলাদেশী নারী-শিশু ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বিভ্রান্তিকর : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং কত টাকা বেতন পান সুনীতা উইলিয়ামস? জার্মানির ক্রিসমাস বাজারে গাড়ির তাণ্ডবে নিহত ২, আহত ৬৮ গাজায় কী করবেন ট্রাম্প? সিরিয়ার নতুন নেতার গ্রেফতারে কোটি ডলার পুরস্কার প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রের ইউনূসসহ ২০ জন উপদেষ্টার উপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবর ভুয়া এটিজেএফবি’র সভাপতি তানজিম, সাধারণ সম্পাদক বাতেন নির্বাচন ইস্যুতে সরকারকে চাপে রাখতে চায় বিএনপি আল আজহার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান প্রফেসর ইউনূসের উপদেষ্টা হাসান আরিফ আর নেই

সকল