প্রতিবেশী দেশে বসে ইজতেমায় নাশকতার পরিকল্পনা!
- এস এম মিন্টু
- ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪০
তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে সাদপন্থী অনুসারী ও মাওলানা জুবায়েরপন্থীদের দ্বন্দ্ব রূপ নিয়েছে সঙ্ঘাত-সহিংসতায়। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গতকাল মাওলানা জুবায়েরপন্থী অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন শতাধিক। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে বড় ধরনের সঙ্ঘাতের পরিকল্পনায় তৃতীয় শক্তি সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। ওই সূত্র মতে, মুসল্লিদের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে বিশ্ব ইজতেমা বানচালের পাশাপাশি দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে দেশী বিদেশী চক্র। এই সঙ্ঘাত-সহিংসতা টার্গেট কিলিংয়ে রূপ নেয়ারও পরিকল্পনা করছে চক্রটি। গতকাল গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে তারা এসব তথ্য দেন। তাদের মতে, এই পরিকল্পনার ছক তৈরি করা হচ্ছে ইসরাইল ও প্রতিবেশী দেশে বসে।
চলমান সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে দুই পক্ষের কাউকেই বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের অনুমতি না দিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি বৈঠকের জন্য ডাকা হলে সাদপন্থীরা মঙ্গলবার রাতেই হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। গতকালই ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের অন্তত তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশী মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবারের দুই পর্বের ইজতেমা স্থগিত চেয়ে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০১৪ সাল থেকেই চক্রটি বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে পরিকল্পনা করে আসছে। তাবলিগ জামাতের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করে তাদের সঙ্ঘাতের মুখোমুখি করা হয়। আর এই চক্রের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী ও চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও নায়ক অনন্ত এম এ জলিল ও মুফতি ওসামা। এর সাথে সবুজ নামেও একজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দারা। ওই সূত্র জানায়, মুফতি ওসামা ও সবুজের সাথে ইসরাইলের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধানের সম্পর্ক রয়েছে। তারা একাধিকবার দেখাও করেছেন বলে ওই সূত্র জানায়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৬ সালে অনন্ত এম এ জলিল এবং মুফতি ওসামা ইসরাইল সফর করেন। তারা দেশে আসার পর ওই সময় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিকবার তাদের গ্রেফতার করতে চাইলেও পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার বাধায় তা সম্ভব হয়নি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে সাদপন্থীদের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসিফুল ইসলাম আঁতাত করেন। গোয়েন্দা তথ্যে ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পরও আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতাকর্মী ও গোয়েন্দা এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের গ্রেফতার করতে দেয়নি। এরপরও এই অনন্ত জলিল ও মুফতি ওসামা একাধিকবার ইসরাইলে গিয়ে নাশকতার ছক তৈরি করেন বলেও জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। বর্তমানে যে সঙ্ঘাত-সহিংসতা এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তা ইসরাইল ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রে বসেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
গোয়েন্দাদের সূত্র জানায়, চলমান সঙ্কটের আগেই তারা জানতে পারেন দেশ-বিদেশী আলেমরা এক টেবিলে বসে সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। তারা এই বিষয় নিয়ে এক টেবিলে বসবেনও না। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আগের মতো বিশ্ব ইজতেমা করবেন। গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছিলেন যে, এখানে উভয়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। গোয়েন্দাদের এ রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলেও ‘দুর্বল’ নিরাপত্তার কারণে গতকাল সাদপন্থী মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করে। জোবায়েরপন্থীদের দাবি সাদপন্থীরা তাদের অনুসারীদের দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এবং বাঁশ দিয়ে বেধম পিটিয়ে চারজনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে গেছেন শতাধিক মুসল্লি। হাসপাতালে গিয়েও সাদপন্থীরা হামলা করে। এমন একাধিক ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে।
নিহত এবং আহতরা সবাই মাওলানা জোবায়েরপন্থী বলে দাবি করেছেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের শূরায়ে নেজামের (মিডিয়া) সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ সাথি।
এদিকে তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্বের সাথে অনন্ত জলিলের জড়িত থাকার ব্যাপারে নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি নয়া দিগন্ত প্রতিবেদকের ফোন কল রিসিভ করেননি এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে খুদে বার্তা দিয়ে রাখলেও কোনো উত্তর দেননি।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দর হাবিবুর রহমান বলেন, মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে ময়দান ত্যাগ করছেন। ইজতেমা ময়দান এখন থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো পক্ষ ময়দানে প্রবেশ করতে পারবে না।
সমঝোতা না হলে কোনো ইজতেমা নয় : টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন নিয়ে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা প্রাণহানি সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম পর্ব এবং ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত ৩ ডিসেম্বর শূরায়ে নেজামের (জুবায়েরপন্থী) আয়োজনে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রস্তুতি হিসেবে পাঁচ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা শেষ হয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর সাদপন্থীদের জোড় ইজতেমা করার কথা ছিল। তবে জুবায়েরপন্থীরা করতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেয়ায় বিরোধ চরমে পৌঁছে।
এই পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার দুই পক্ষের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিদের নিয়ে পৃথক বৈঠক করার কথা ছিল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সাথে।
জানা গেছে, বেলা ১১টায় দুই পক্ষকে একসাথে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা একসাথে বসতে রাজি হয়নি। এ অবস্থায় ঝামেলা এড়াতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাদপন্থীদের বেলা ১১টায় এবং আলমে শূরার সাথিদের দুপুর ১২টায় বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা