দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০৯ নদ-নদীই নাব্যতা সঙ্কটে
- মো: আনোয়ার হোসেন আকুঞ্জী ডুমুরিয়া (খুলনা)
- ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮
নদীমাতৃক দেশে নাব্যতা সঙ্কটে ভুগছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০৯টি নদ-নদী। নদীবক্ষে পলি জমা হওয়ার কারণে এগুলো নিষ্কাশন ক্ষমতা হারিয়ে দ্রুত মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। অস্তিত্বে সঙ্কটে পড়া অধিকাংশ নদী এখন নালায় পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলের নদীগুলো বিল ও জনবসতির চেয়ে উঁচু হওয়ার কারণে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা এখন সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়েছে।
খুলনা যশোর সাতক্ষীরা বঙ্গোপসাগরের উপকূল ভাগ। গঙ্গাবাহিত পলি জমে সাগরের এ উপকূল ভাগে ভূমি গঠিত হয়। সৃষ্টি হয় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। সুন্দরবনের প্রায় ৩০ ভাগ এলাকাই নদ-নদী। এলাকাটি শিরা উপশিরার মতো অগণিত নদ-নদী দ্বারা বেষ্টিত ছিল। নদী পথেই ছিল সব যোগাযোগ ব্যবস্থা। নদীর তীরে জনবসতি, শহর-বন্দর ও প্রশাসনিক কেন্দ্র গড়ে ওঠে। এলাকার উৎপাদন ব্যবস্থা সভ্যতা সংস্কৃতি পরিবেশ সবকিছু সৃষ্টি হয় নদীকে কেন্দ্র করে। ১৯৬০-এর দশকে উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্পের আওতায় পোল্ডার নির্মাণের মাধ্যমে এলাকার অধিকাংশ নদীগুলোকে পোল্ডারের মধ্যে অবরুদ্ধ করা হয়। এতে সাময়িকভাবে উপকার পেলেও পরিণামে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ৮০ দশক থেকে এ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সমস্যা অব্যাহত আছে এবং তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পলি দ্বারা নদী ভরাট ও খাল দিয়ে পানি সরতে না পারায় খুলনা যশোর ও সাতক্ষীরা জেলায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এবার অতিবৃষ্টির কারণে তীব্রতা বেড়েছে। পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার একর জমির ঘেরের মাছ ও ফসল। নদী উঁচু হয়ে যাওয়ার কারণে পানি সরতে পারেনি। পোল্ডার পদ্ধতি চালুর পর নদীর নাব্যতা হারাতে শুরু করে। খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার সদর, দেবহাটা, কলারোয়া, আশাশুনি, তালা যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে পড়েছে। ১৯৬০ সালে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটায় ১ নম্বর পোল্ডার নির্মিত হয়। এই পোল্ডারে আটটি নদী অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ২ নম্বর পোল্ডারে পাঁচটি, ৬-৮ পোল্ডারে ২২টি, ৯ নম্বর পোল্ডারে দু’টি, ১৬ নম্বর পোল্ডারে ১১টি, ১৭ নম্বর পোল্ডারে ৮টি, ১৮-১৯ নম্বর পোল্ডারে তিনটি, ২৩ নম্বর পোল্ডারে পাঁচটি ২৪ নম্বর পোল্ডারে ২৫টি, ২৫ নম্বর পোল্ডারে ১২টি, ২৭ নম্বর পোল্ডারে ৮টি ছোট বড় নদী মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১৩টি পোল্ডারের মধ্যে ১০৯টি নদ-নদী অবরুদ্ধ হয়ে অকালে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। ২৫ ও ২৭ নং সীমানা ডুমুরিয়ার ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ হামকুড়া নদী। এটি এখন বিলুপ্ত। ২৭ ও ২৮ পোল্ডারের সীমানায় শৈলমারী নদী। বারবার পলি জমে ভরে যায় আবার তা স্কেভেটর দিয়ে পলি অপসারণ করা হয়। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল ডাকাতিয়ার পানি সরানোর পথ এটি। আপার সালতা, মরা ভাদ্রা, ঘ্যাংরাইল, আমতলী, গুয়াচাপা নদী, বুড়ি ভদ্রা, প্রাণসায়ের নদী, হরি নদী, শ্রী নদী, হরিহর নদী, বুড়ি ভদ্রা নদী, জয়খালি নদী, বাদুরগাছা নদী, হাড়িয়া নদী, শিবসা নদী, সাহেবখালি নদী, মরিচ্ছাপ নদী, বেতনা নদী এখন মৃত্যুমুখে।
দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চলের পোল্ডারগুলোর ২৪ নম্বর পোল্ডারটি সবচেয়ে বড়। ভবদহে অবস্থিত ২১ ভেল্টের সøুইস গেট। অভয়নগর মনিরামপুর এবং ডুমুরিয়ার সীমানায় হরি ও টেকা মুক্তেশ্বরী নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত। হরি নদী ভরাট হয়ে মাঝখান দিয়ে ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। নদীর দু’পাশ দখল করে নিয়েছে স্থানীয়রা।
গবেষণায় বলা হয়েছে, পোল্ডার নির্মাণের পর পানি নিষ্কাশনের জন্য যেসব নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা হয় সেগুলো একের পর এক মৃত্যুমুখে পতিত হয়। পোল্ডার পূর্বে জোয়ারে আগত পলি বিলে বা প্লাবন ভূমিতে অবক্ষেপিত হতো। এখন তা অবক্ষেপিত হয় নদীর মধ্যে। পোল্ডারের আগে এই এলাকার জনগণের পরিচালিত দশের বাঁধ-বন্দী ব্যবস্থাপনার মধ্যে পলি ব্যবস্থাপনা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু পোল্ডার নির্মাণ করার সময় সে বিবেচনায় আনা হয়নি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
বিশিষ্ট পানি গবেষক ও উত্তরণ পরিচালক মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, উপকূল অঞ্চলের নদী রক্ষার জন্য উত্তরণ ও পানি কমিটি ৩৫ বছর ধরে কাজ করছে। এলাকার জীবিত নদীগুলোকে রক্ষা করা এবং ভরাট নদীগুলো পুনঃজীবিত করা ছাড়া আর কোনো পথ আমাদের সামনে নেই। বর্তমানে জলাবদ্ধতার সাথে যুক্ত হয়েছে জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত অভিঘাত জলচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের চাপ। এখন দুর্যোগকবলিত এলাকায় পরিণত হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা