পাকিস্তান বাহিনী পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৫
তিন দিকে ভারতবেষ্টিত বাংলাদেশে অবরুদ্ধ পাকিস্তান বাহিনীকে উপর্যুপরি বিমান হামলা চালিয়ে পর্যুদস্ত করে ফেলা হয়। সব বিমানঘাঁটিতে এমনভাবে বিমান হামলা চালানো হয় যে, পাকিস্তান বাহিনী পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে। অন্য দিকে মুক্তি বাহিনীর সহায়তায় ভারতীয় স্থলবাহিনী দ্রুত ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এজন্য তারা ভিন্ন একটি কৌশল অবলম্বন করে। পাকিস্তানি বড় কোনো ঘাঁটিতে আক্রমণ করে আটকে পড়ার চেয়ে তারা সব ঘাঁটি পাশ কাটিয়ে ভিন্ন পথে রাজধানীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে ঢাকা দখলের লক্ষ্যে।
বাংলাদেশে পাকিস্তান নৌবাহিনীকেও দুর্বল করে দেয়া হয়। বিশাখাপত্তমে পাকিস্তান সাবমেরিন গাজী ডুবিয়ে দেয়া হয় আজকের এই দিনে। জাহাজে ৯০ জনেরও বেশি পাকিস্তান নৌবাহিনী অফিসার ছিলেন। তারা সবাই মারা যান। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, চালনা, চাঁদপুর, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জসহ সব নৌবন্দরে পাকিস্তানি জাহাজ ভেড়া অসম্ভব করে তোলা হয়। পাকিস্তানও ১৯৭১ সালের আজকের দিনে ভারতের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে।
৩ ডিসেম্বর রাতেই ভারতীয় বিমানবাহিনী আক্রমণে যুক্ত হওয়ার পর ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় স্থলবাহিনীও বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। নভেম্বর মাস থেকে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ ভূখণ্ডে পাকিস্তান বাহিনীর ওপর আক্রমণ পরিচালনা করে এলেও আজকের দিন থেকেই মূলত তাদের স্থলবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে সব দিক দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
আট মাস ধরে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণ মানুষের সহায়তায় জীবন বাজি রেখে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র লড়াই করে আসছিল তা একটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে। অন্য দিকে ভারত ও পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারণ এক দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে এবং সোভিয়েত রাশিয়া ভারতের পক্ষে। ফলে বাংলাদেশকে নিয়ে গোটা উপমহাদেশে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তখন। পরিস্থিতি সামাল দিতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক ডাকে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতকে দায়ী করা হয়। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। ইতালি, জাপান, বেলজিয়াম যুদ্ধবিরতির খসড়া উপস্থাপন করে। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যাপক পরিসরে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করা হয়। তবে যুদ্ধ আর ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ বা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারেনি। এর কারণ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা আজকের বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান পাকিস্তানের পরাজয়কে দ্রুত ও অনিবার্য করে তোলে।
১৯৭১ সালের আজকের দিনে মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকিস্তান বাহিনীর প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলে হিলি, বেনাপোল, খুলনা ফরিদপুরসহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে। মিত্রবাহিনী জীবননগর, দর্শনা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ঠাকুরগাঁও, চরখাই, গাজীপুর, শমসেরনগর, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় পাকিস্তান বাহিনীর সাথে লড়াই করে এবং একে একে এসব অঞ্চল দখলে নেয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা