গাজার উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের গভীরে ইসরাইলি ট্যাংক, নিহত ৪২
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৩
- গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন : জাতিসঙ্ঘ
- হিজবুল্লাহর সাথে হামাসের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় আছে
গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৪২ জন নিহত হয়েছেন। ওই অঞ্চলে চিকিৎসা কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আলজাজিরা আরবিকে এ তথ্য জানিয়েছে। মধ্যাঞ্চলীয় এলাকাগুলোয় ইসরাইলি বাহিনী তাদের বোমা হামলা জোরদার করার পর এমন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ইসরাইলের ট্যাংকগুলোও গাজা উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোর আরো গভীরে ঢুকে পড়েছে।
গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় বেইত লাহিয়া শহরে কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে একটি বাড়িতে দু’টি বিমান হামলায় ছয় ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনুস এলাকায় একটি মোটরসাইকেলে ইসরাইলি হামলায় আরো চারজন নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করে বৃহস্পতিবার রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে। পরে পূর্বাঞ্চলীয় খান ইউনুস এলাকায় একটি আশ্রয়শিবিরের কাছে ইসরাইলের বিমান হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো ওই শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল।
নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান থেকে কয়েকটি হামলা চালানো হয়েছে। শিবিরের আল আওদা হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এতে একটি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিভিন্ন মসজিদের বাইরের সড়কগুলোয় হামলা হয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, আশ্রয়শিবিরের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা থেকে ইসরাইলি ট্যাংকগুলো অগ্রসর হওয়ায় বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের বাড়িতে আটকা পড়েছে। ট্যাংক থেকে অনবরত গোলা ছোড়ার কারণে অ্যাম্বুলেন্স সেখানে পৌঁছতে পারছে না।
এ দিকে অব্যাহত ইসরাইলি হামলার মধ্যে জাতিসঙ্ঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজা উপত্যকায় আটকে পড়া মানুষেরা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে আছেন। জাতিসঙ্ঘ বলেছে, ‘খাবার-দাবার দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এবং দুর্ভিক্ষ আসন্ন। গাজার পানি সরবরাহের বেশির ভাগটাই পানের জন্য অনিরাপদ। কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় পরিবারগুলো পরিত্যক্ত বাড়িতে বা খোলা জায়গায় বসবাস করছে। গাজার মধ্যাঞ্চল থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজুম বলেন, পরিবারগুলো শুধু পানি পান করে ও খেজুর খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকেরাও বলেছেন, ইসরাইলি বিমান ও গোলা হামলায় বিধ্বস্ত হওয়া বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষের নিচে তাদের পরিবারের সদস্যরা চাপা পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করা যাচ্ছে না।’
গত মঙ্গলবার লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি এখন গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন করে তৎপর হবেন। বৃহস্পতিবার রাতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ফোরটিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সম্ভাব্য চুক্তির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি মনে করি, অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।’ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। তখন থেকে গাজায় কমপক্ষে ৪৪ হাজার ৩৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
‘লেবাননে যুদ্ধবিরতি চুক্তি গাজায় যুদ্ধবিরতির পথ দেখাতে পারে’
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, লেবাননের হিজবুল্লাহ আন্দোলন ও হামাস নেতাদের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রয়েছে। লেবাননের যুদ্ধবিরতি গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ দেখাতে পারে। বৃহস্পতিবার ইরানের আরবি ভাষার স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আলআলমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন হামাস নেতা সামি আবু জুহরি। সূত্র পার্সটুডে।
তিনি বলেন, লেবাননের জনগণকে রক্ষা এবং ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য আমরা লেবাননের জনগণ ও হিজবুল্লাহ আন্দোলনের চুক্তির অধিকারকে স্বীকার করি। একই সাথে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে যে বিরাট আত্মত্যাগ করেছে তার প্রতিও হামাস কৃতজ্ঞতা জানায়। সামি আবু জুহরি আরো বলেন, গত ১৪ মাস ধরে ইসরাইল আগ্রাসন চালালেও গাজা ও লেবাননে তাদের ঘোষিত কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ইহুদিবাদীরা বরং বেসামরিক ফিলিস্তিনি ও লেবাননের নাগরিকদের হত্যা করে এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে বিজয় দাবি করছে।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সামি আবু জুহরি বলেন, সেখানে যা কিছু হচ্ছে তা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলতে হবে যে সাম্প্রতিক শতাব্দীগুলোতে কোথাও এই ধরনের ভয়াবহ অমানবিক ঘটনা ঘটেনি। গাজার হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরাইল ধ্বংস করেছে। হামাসের এই নেতা জানান, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে একমাত্র কামাল আদওয়ান হাসপাতাল টিকে আছে, এ ছাড়া সেখানে কোনো হাসপাতাল ও চিকিৎসা উপকরণ নেই, যা দিয়ে গাজার লোকজনকে চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব। তিনি বলেন, এখনো প্রতিদিন ইসরাইল বর্বর আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং প্রতিদিন বহু ফিলিস্তিনি হতাহত হচ্ছেন। একইসাথে ইহুদিবাদী সেনারা এসব অসহায় মানুষকে হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে দিচ্ছে না এবং ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বের করা আহত ব্যক্তিদের সেবার জন্য ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেয় না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা