২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ডেঙ্গুতে ১ দিনে সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু

২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ১০৭৯
-


চলতি বছরে ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত মারা যাওয়া ১১ জনের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকটি হাসপাতালে ৯ জন এবং খুলনা বিভাগের হাসপাতালে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে মোট এক হাজার ৭৯ নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ভর্তি রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল ঢাকা বিভাগে ৫৮৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে ৩১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে ঢাকা বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ২৭২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এছাড়া গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে ১৩৩ জন, খুলনা বিভাগের ১৪৩ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৫ জন, রংপুর বিভাগে ১৭ জন এবং সিলেট বিভাগে ৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
গতকাল রোববার পর্যন্ত নভেম্বরের এই ক’দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে ২৯ হাজার ৯৭৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ সময় ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৪৪ জনের। অক্টোবরে ৩০ হাজার ৮৭৯ জন এবং গত সেপ্টেম্বরের ৩০ দিনে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৮ হাজার ৯৭ জন।
চলতি বছর কেবল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতেই ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং উত্তর সিটিতে মৃত্যু হয়েছে ৮২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, চলতি বছর দেশে সব মিলিয়ে ৪৩৬ জন ডেঙ্গুর রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে ২৪ দিনে চিকিৎসা নিয়ে ২ হাজার ৩২৯ ডেঙ্গু রোগী
কামাল উদ্দিন সুমন নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জে বেড়েছে প্রকোপ। প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। নগরীর প্রায় প্রতিটি ঘরেই এখন জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। জ্বর নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেই আগে রক্ত পরীক্ষা করতে দেন চিকিৎসক। যত রোগীকে চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা দিচ্ছেন, তার বেশিরভাগ রোগীরই ডেঙ্গু পজিটিভ আসছে। জানা গেছে, সরকারি হিসাবে গত ২৪ দিনে হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৩২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। তবে বেসরকারিভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে জানা গেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে ডেঙ্গুর ৩৯টি হট স্পট চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়া আগামী সাত দিনের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সিভিল সার্জনের কার্যালয় ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। নারায়ণগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পহেলা নভেম্বর থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৩২৯ জন। শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জে মহানগরীতে নতুন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ৫০ জন।

জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, সদর জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল, আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ জেলায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে ৯৬ জন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ডেঙ্গু প্রতিরোধে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। নিয়মিত মশার ওষুধ দেয়া হয় না বলে একাধিক ওয়ার্ডবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। শীতকাল শুরুর এ সময়ে মশার উপদ্রব অত্যন্ত বেশি। কিন্তু নিয়মিত মশকনিধন ওষুধ না দেয়ার কারণে মশার যন্ত্রণাও বাড়ছে।
১৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলম চান জানান, গত দুই সপ্তাহে মাত্র দুই দিন মশার ওষুধ দিতে এসেছে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। আগে কাউন্সিলর ছিল। তখন তার কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নিতেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সিটি করপোরেশনের সব জনপ্রতিনিধি অপসারণের পর থেকে আমরা নাগরিকরা অভিযোগও জানাতে পারছি না।

গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ব্যর্থ। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার দরকার ছিল, সেখানে তারা দায়িত্বশীল আচরণ করেনি। তারা কেবল ৩৯টি হট স্পট নির্ধারণ করে বসে আছে কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ছড়িয়ে এখন ঘরে ঘরে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিভিল সার্জন তার দায় এড়াতে পারেন না।
নিয়ামুর রশীদ বিপ্লব বলেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এডিস মশার প্রজনন কাল হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এডিস মশার প্রজনন রোধে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যার কারণে এখন ঘরে ঘরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে যদি ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তবে আমরা সিভিল সার্জনের কার্যালয় ঘেরাও করব।

এদিকে ডেঙ্গুর এ প্রকোপ ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। সেই ধারাবাহিকতায় ডেঙ্গু মশার জন্ম ও ভাইরাস ছড়ায় এমন ৩৯টি স্থান চিহ্নিত করেছে সিটি করপোরেশন। এ স্থানগুলোকে ডেঙ্গুর ‘হট স্পট’ বলে আখ্যা দিয়েছে তারা।
তালিকা অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের সেই ৩৯টি হট স্পট হলো ৪ নং ওয়ার্ডে আটিগ্রামের ভাঙ্গাপ্রেস এলাকার ডোবা, মাঠবাড়ি পুকুরপাড় ও তার আশেপাশের ডোবা, ৬ নং ওয়ার্ডে সুমিলপাড়া রেললাইনে পাশের ডোবা, ৮ নং ওয়ার্ডে ডিএন্ডডি এর খাল, আইলপাড়া এলাকায় বদ্ধডোবা, ১১ নং ওয়ার্ডে তল্লা নতুন রোড রেললাইন পুকুর, তল্লা কিল্লারপুর পুকুর, ১৬ নং ওয়ার্ডে বাবুরাইল লেকের দক্ষিণের ডোবা, দেওভোগ বড় মসজিদ পাক্কা রোড পুকুর, নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালের পূর্বসাইডে পুকুরের সাথে ময়লা ফেলার জায়গা, এলএন রোডের ডোবা, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র-৩ আবর্জনাযুক্ত পুকুর, বায়তুন নূর জামে মসজিদের পশ্চিমে ডোবা, ১৬ নং ওয়ার্ডে ডা: ফাতেমা শিরীনের বাড়ির পিছনে ডোবা, ১৮ নং ওয়ার্ডে নইল্লাপাড়া ডোবা, আলামিন নগর এলাকার ডাম্পিং স্পট, ১৫ নং ওয়ার্ডে ডাইলপট্টি পরিত্যক্ত প্লট, ১৪ নং ওয়ার্ডে বাজনাপাড়ার পিছনে পুকুর, ১২ নং ওয়ার্ডে উত্তর চাষাড়া রামবাবুর পুকুরপাড়ের পূর্বদিকে পুকুর, ১৭ নং ওয়ার্ডে নয়াপাড়া আবর্জনাযুক্ত পুকুর, ১৮ নং ওয়ার্ডে ডিয়ারা সরদারগলি আবর্জনাযুক্ত পুকুর, ৯ নং ওয়ার্ডে সস্স্তাপুর খাল, ৭ নং ওয়ার্ডে ফকিরাপুল খাল, ১২ নং ওয়ার্ডে বার একাডেমি আবর্জনা, ২২ নং ওয়ার্ডে বি, এম, স্কুল ঘাট আবর্জনা, ১৭ নং ওয়ার্ডে ভূঁইয়াপাড়া ডোবা ও আবর্জনা, ১৩ নং ওয়ার্ডে শ্মশানের পিছনে ডোবা, ১৪ নং ওয়ার্ডে দাতা সড়ক, মাদরাসা গলি ডোবা, ১২ নং ওয়ার্ডে বউবাজার ডোবা, ১৬ নং ওয়ার্ডে কাজীর দেওয়ানের বাড়ি আবর্জনা, ১৮ নং ওয়ার্ডে কৃষিপাড়া আবর্জনা নিম্নভূমি আবর্জনা, ২ নং ওয়ার্ডে হিরাঝিল খাল, ৩ নং ওয়ার্ডে ডেমরা রোড ৪টি ডোবা, ১৪ নং ওয়ার্ডে জিউস পুকুর আবর্জনাযুক্ত পুকুর, ১৭ নং ওয়ার্ডে আমেনা মঞ্জিল পাইকপাড়া আবর্জনা, ১৬ নং ওয়ার্ডে এল. এন. রোড বদুর বাড়ি ডোবা, ১১ নং ওয়ার্ডে তল্লা বড় মসজিদ ডোবা, ১০ নং ওয়ার্ডে চিত্তরঞ্জন খাল ও ১৪ নং ওয়ার্ডে পানির ট্যাংকি শাহপাড়া খাল।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করছি। সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায়ই মশা নিধন গ্যাস দিচ্ছি। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। রোগীদের অবস্থান ও এলাকা পর্যালোচনা করে আমরা সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৯টির মতো স্থান বা স্পট চিহ্নিত করেছি যেখানে ডেঙ্গু মশার জন্ম হচ্ছে এবং সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এ স্পটগুলোতে আমাদের বিশেষ টিম যাবে। দৈনিক মশক নিধন কাজের পাশাপাশি এ হটস্পটগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ, এডিস মশা জন্ম নেয় এমন অঞ্চলে আমরা কাজ করব। নোংরা জায়গা পরিষ্কার করে এডিস মশার বাসস্থান দূর করব। ডেঙ্গুর সংক্রমণ রোধ করতে হলে মশার উৎপত্তি স্থলেও আমাদের কাজ করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদের কথা ব্যক্তিগত : প্রেস উইং সালাহর জোড়া গোলে জিতল লিভারপুল ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা মেনে নেয়ার আহবান হাসিনা-কন্যা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত বুটেক্স-পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন তেজগাঁওয়ে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেলজিয়ামের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

সকল