হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল
- যশোর অফিস
- ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৯
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থান একদিনের বিষয় না। শেখ মুজিব বাকশাল করেছিলেন। আর তার মেয়ে হাসিনা দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার মূলমন্ত্রের উল্টোটা করেছে। এ কারণে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এসেও আবার গণতন্ত্রের কথা বলতে হচ্ছে।
ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত করেছে। এ কারণে তাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। রংপুরে আবু সাঈদের মৃত্যু আর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণার কারণে শেখ হাসিনা দ্রুত পালিয়ে গেছে। রক্তের অনেক শক্তি। যার প্রমাণ অতীতে দেখা গেছে। শহীদ আসাদের জীবনের বিনিময়ে দ্রুত দেশ স্বাধীন হয়েছিল। পতন হয়েছিল আইয়ুব শাহির। শহীদ ডাক্তার মিলনের রক্তের বিনিময়ে পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল স্বৈরাচার এরশাদের। সর্বশেষ, শহীদ আবু সাঈদের রক্তের বিনিময়ে দেশ নতুন করে স্বৈরাচার হাসিনামুক্ত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক গণমাধ্যমকে নানা কালাকানুন দিয়ে তার গোলাম বানিয়ে রেখেছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন যেসব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তা বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। ৪২টি রাজনৈতিক দলের সাথে বসে এই ৩১ দফা তৈরি করা হয়েছে। এই দেশকে গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের দেশ গড়তে ঐক্য দরকার। বিএনপি নির্যাতিত সব দলকে নিয়ে ঐকমত্যের সরকার গঠন করতে চায়, যাতে করে দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেয়া যায়।
তিনি বলেন, দেশে যতদ্রুত নির্বাচন হবে ততদ্রুত স্থিতিশীলতা আসবে। এই সরকার সংস্কারকার্যক্রম যেখানে শেষ করবে বিএনপি সরকারে গেলে সেখান থেকেই সংস্কারকার্যক্রম এগিয়ে নেবে।
যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত ফ্যাসিবাদ বিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন : আজকের প্রেক্ষিত শীর্ষক নাগরিক ভাবনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু প্রমুখ। স্বাগত বক্তৃতা করেন সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হতে হবে বিপ্লবী গতিশীল : রিজভী
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা তো হবেন বিপ্লবী। তাদের চেতনা থাকবে অত্যন্ত গতিশীল। গণবিচ্ছিন্ন মানুষ কোনো দিনই জনগণের উপকারে কাজে লাগে না, গণবিচ্ছিন্ন মানুষ কখনোই কল্যাণকর এবং বিপ্লবী কোনো কাজ করতে পারে না।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টনে গণ-অভ্যুত্থানে রিকশাচালকদের হত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উদ্দেশে বলতে চাই ব্যাংক বীমায় নির্বাচন করে শ্রমিক কর্মচারীরা, অথচ গতকাল গণমাধ্যমে দেখলাম অফিসার কল্যাণ সমিতি নাকি নির্বাচন করেছে। সেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থিত লোকেরা বিজয়ী হয়েছে। এইটা কী করে সম্ভব? বিগত ১৫ বছরে হয়তো ছাত্রলীগ-যুবলীগ দেখে দেখে অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে, সবকিছু নিয়োগ করা হয়েছে। আবার তারা ইউনিভার্সিটির মতো সাদা দল, নীল দল নামে বিভিন্ন সংগঠন করছে। আমিও ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম, আমি কখনোই ব্যাংকের অফিসারদের এমন সংগঠন দেখি নাই। কিন্তু সেখানে নীল দল, সাদা দল নামে কোনো রাজনৈতিক দলের সংগঠন থাকে আমরা জানি না। এইটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সাহেব! আপনি মাঝে মাঝে দেখি আন্দোলনের যে স্পিরিট সেই স্পিরিট অনুযায়ী কথা বলেন; সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু আপনার ওখানে কী হচ্ছে, কারা এরা, এই নির্বাচন করছে? আবার তারা ফলাও করে বলছে যে তারা নাকি আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দল সেখানে জিতেছে। ঘাপটি মেরে ব্যাংকের টাকাগুলো পাচারের ক্ষেত্রে এই লোকগুলোই জড়িত। এদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৫-১৬ বছর আগে। তারা এখনো ভেতরে ষড়যন্ত্র করছে। আপনি তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? এর কারণ জাতি চানতে চায়।
রিজভী বলেন, আজকে সালমান এফ রহমান, আজিজ খান একের পর এক যারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, তারা সবাই অনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য দিয়েই হয়েছেন। শেখ হাসিনা যাদেরকে আনুকূল্য দিয়েছেন তারাই লুটেপুটে, চেটে টাকা পাচার করে আজকে বিদেশে অবস্থান করছেন। এই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিনি সুযোগ দিয়েছিলেন তোমরা মারো ধরো, লুট-পাট করো কিন্তু আমাকে তোমরা ক্ষমতায় রাখো।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখনো যদি আলুর কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা থাকে তাহলে আপনাদের প্রতি মানুষের আস্থা বিশ্বাস তো কমতে থাকবে। আজকে ডিম, তেল, চিনি ইত্যাদির দাম এখনো কয়েকটি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। সে কোম্পানিগুলোকে আপনারা ধরছেন না কেন? কেন ডিমের দাম এখনো আকাশচুম্বী থাকবে? এই যে নি¤œ আয়ের মানুষ কৃষক, সিএনজি চালক আগে যেমন ছিল এখনো তাই থাকছে কেন? এখন মানুষ একটু সুখের মুখ যদি না দেখে তবে গণতান্ত্রিক চেতনা, আত্মত্যাগ, রক্তপাত আর অকাতরে জীবন দেয়া তো সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হবে। আর আপনারা; সুখে থাকা উপদেষ্টারা এসে বড় বড় কথা বলবেন আর নিজের মতো করে যা ইচ্ছা তাই করবেন, এটা তো চলতে দেয়া যায় না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি ছাত্রজীবনে হয়তো ছাত্রদল করেছে কিন্তু সে তো মেধার জোরে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসেছে। গত ১৫-১৬ বছরে তাদের কোনো পদোন্নতি দেয়া হয়নি। এখন তো তাদের একটি জায়গায় থাকার কথা। কিন্তু চুপচাপ ঘাপটি মেরে থাকা আন্দোলন সংগ্রামের কোনো স্পিরিটের সাথে যাদের কোনো সম্পর্ক নাই, তাদেরকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। এই গুণীজন উপদেষ্টারা তো চাকরিজীবীর মতো কাজ করছে।
আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে জানিয়ে রিজভী আরো বলেন, আমি এবং বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গত ৪-৫ দিন আগে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম, দেখলাম এখনো অনেকেই হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন; কারো পিঠের চামড়া খুলে গেছে, কারো পা নেই, কেউ কেউ অন্ধ হয়ে গেছেন। এদের দায়িত্ব কি রাষ্ট্র নিবে না?
সাধারণ রিকশাচালকদের আয়োজনে এ সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা