২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ

প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে হাজারের বেশি
-


শীত শুরু হচ্ছে, তবু কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। এখনো প্রতিদিন এক হাজারের বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী গত ২১ নভেম্বর সারা দেশে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্তদের মধ্যে সেদিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ২১৪ জন। সাধারণত বৃষ্টি না থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যায়। দেশে অনেক দিন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বংশবিস্তার করার মতো পরিবেশ না থাকায় প্রকোপ কমে আসার কথা। কিন্তু দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ পিক সিজনের মতোই। গতকাল সকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১২৩ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৩ হাজার ৯ জন। নভেম্বরে এতো মানুষের মৃত্যু ও আক্রান্তের তথ্যে মানুষ বেশ আতঙ্কিত। এমনিতেই ডেঙ্গু সারা বছরের রোগ হয়ে গেছে। সারা বছরই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুও হচ্ছে। স্থানীয় সরকারের অধীন সংস্থাগুলো মশা ধ্বংসে কীটনাশকও স্প্রে করা হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গু জীবাণুুবাহী এডিস মশা বংশবিস্তার কমানো যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে মশা বিশেষজ্ঞ জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান প্রধান অধ্যাপক ড. মো: গোলাম ছারোয়ার বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে যেভাবে মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে তা আর কাজ করবে না। বাস্তবতাকে সামনে রেখে নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু জীবাণুুবাহী এডিস মশা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে শীত এলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে সময় লাগবে। অধ্যাপক গোলাম ছারোয়ার বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের প্রকৃত ঠিকানা বের করে সেখানে এডিস মশা নির্মূলে ক্রাস প্রোগ্রাম চালাতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের বসবাসের এলাকায় গিয়ে চারপাশে কীটনাশক স্প্রে করে উড়ন্ত মশা, পানিতে বেড়ে ওঠা মশার লার্ভা এবং মশা যে যে স্থানে ডিম ছাড়তে পারে সে স্থানগুলো চিহ্নিত করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে। এর বাইরে প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় কীটনাশক ছিটালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
অধ্যাপক গোলাম ছারোয়ার বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নিতে হলে সবাইকে নিয়েই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে একটি সংস্থাকে দিয়ে মশা নির্মূল করা যাবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সাথে অবশ্যই স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তারাই জানে মশা কিভাবে এবং কোথায় বংশবিস্তারের সুযোগ পাচ্ছে।

তা ছাড়া একটি কেন্দ্রীয় অ্যাপ তৈরি করে অথবা ওয়েবসাইট তৈরি করে এডিস মশা বিস্তারের ম্যাপিং করে মশার সব তথ্য দিয়ে দিতে হবে। এটা সবাইকে দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর প্রকৃত বসবাসের তথ্য নিয়ে তা অ্যাপে অথবা ওয়েবসাইটে দিয়ে দিতে হবে। অ্যাপ অথবা ওয়েবসাইট থেকে সংশ্লিষ্টরা সেই তথ্য দেখে ডেঙ্গু রোগীর বসবাসের আশপাশে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে যেন সেই এলাকায় আর কোনো ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা না থাকতে পারে। অধ্যাপক গোলাম ছারোয়ার আরো বলেন, এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে না পারলে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল সারা দেশে দুইজন ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্তদের মধ্যে ৪৫৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার থাকায় তালিকাভুক্ত সব হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গুর তথ্য পাওয়া যায়নি বলে আগের দিনের (বৃহস্পতিবার) গতকাল আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম ছিল। মৃত দুইজনের একজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একজন এবং খুলনা বিভাগের একজন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালে গতকাল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ১১৪ জন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তা ছাড়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাসপাতালে ৬৭ জন, এই দুই সিটি করপোরেশনের বাইরে ঢাকা বিভাগের অন্যান্য হাসপাতালে ৫৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৬২ জন, খুলনা বিভাগের ৬৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৭ জন, বরিশাল বিভাগে ২০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন, রংপুর বিভাগে দুইজন এবং সিলেট বিভাগের একজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement