২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নির্বাচন বিলম্বিত করার শঙ্কা বাড়ছে বিএনপিতে

-

অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্র প্ল্যাটফর্ম থেকে সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন ইস্যুতে যে ধরনের বক্তব্য আসছে, তাতে বিএনপিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার শঙ্কা আরো বেড়েছে। সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে নির্বাচনী রোডম্যাপের ব্যাপারে খুব স্পষ্টভাবে কোনো বার্তা না থাকায় আশাহত হয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া সম্প্রতি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারেও নির্বাচনী রোডম্যাপ বা পথ-নকশার বিষয়টি স্পষ্ট করেননি ড. ইউনূস। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করছে, এ সরকারের প্রধান লক্ষ্য যে নির্বাচন, সেটি থেকে তারা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে কিনা কিংবা ঠিক কত দিন তারা ক্ষমতায় থাকতে চান, সেটি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি দেড় বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে, তাহলে এ সরকারকে ব্যর্থ করতে ‘পতিত’ আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসররা সর্বোচ্চ মাত্রায় তৎপর রয়েছে। দেশের বাইরে থেকে তারা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে গোপন যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে। তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে, যখন প্রয়োজন হবে, তখনই মাঠে নামতে হবে। বিএনপি এ-ও মনে করছে, যত দিন দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হবে, তত দিন আওয়ামী লীগও এই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তাদের অপতৎরতা অব্যাহত রাখবে; দেশী-বিদেশী বন্ধুদের অব্যাহতভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে যাবে।

বিএনপি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিগত কয়েক মাস ধরে এ দাবিতে নানা প্ল্যাটফর্ম থেকে সোচ্চার তারা। দলটির নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তারা দেশে একটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। শুধু বিএনপি নয়, তাদের জোটও দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে।

নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ইস্যুতে বিএনপির অব্যাহত দাবির মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে গত রোববার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। সেখানে তিনি বলেন, ‘আপনারা সুযোগ দিলে প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারকাজ শেষ করেই আমরা আপনাদের কাক্সিক্ষত নির্বাচন আয়োজন করব। তত দিন পর্যন্ত আপনাদের ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করব। নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে দ্রুত আপনারা নির্বাচনের রোডম্যাপও পেয়ে যাবেন।’ আলজাজিরাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মানুষ নতুন কিছু চায়। সেখানে সব ক্ষেত্রে সংস্কার হবে। এমনকি সংবিধানও সংস্কার হচ্ছে। তবে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সব সংস্কার একসাথে চলছে। নতুন বাংলাদেশ শুধু নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আগামী নির্বাচনের সঠিক সময় কখন হবে- সে বিষয়ে ড. ইউনূসের কোনো ভাবনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘না, আমার মাথায় এমন কিছু নেই।’

জানা গেছে, বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ড. ইউনূসের এই ভাষণ এবং সাক্ষাৎকার নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি কার্যত বিএনপিকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। সরকারের বর্তমান অবস্থান ‘নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার অবস্থান’ বলে দলটির ভেতরে বিবেচিত হচ্ছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই-তিনজন নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রমে বিএনপির কোনো বিরোধিতা নেই। তারা সরকারকে সহযোগিতা করছে। তবে এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য যেহেতু নির্বাচন, তাই যে সংস্কারগুলো একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত- রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে সেগুলোতে সরকারের অগ্রাধিকার দেয়া দরকার। কারণ, গত দেড় দশক ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষ এখন ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে। তাই সরকারের উচিত নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ ক্ষেত্রে সংস্কারের পাশাপাশি একইসাথে নির্বাচনী প্রস্তুতিও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকার যদিও বলছে, নির্বাচনের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে রোডম্যাপ না দেয়ায় এটি সরকারের ‘রাজনৈতিক’ বক্তব্য হিসেবে মনে করছে দলটি।

বিএনপি এই মুহূর্তে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ৩১ দফাকে সারা দেশে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করার মধ্যে রয়েছে। এ লক্ষ্যে গতকাল ঢাকা বিভাগের মধ্য দিয়ে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে কর্মশালার কার্যক্রম শুরু করেছে দলটি। এই ৩১ দফা বিএনপির একটি নির্বাচনী ইশতিহার। জানা গেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে এই কর্মশালার কার্যক্রম শেষ হলে নির্বাচন দাবিতে সোচ্চার হবে দলটি। তখন বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের চিন্তা রয়েছে বিএনপির।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জাতি নির্বাচনী রোডম্যাপ সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়ার আশা করেছিল। সেটি পরিষ্কার না হওয়ায় জনগণের মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে এখনো মনে করি যে, নির্বাচনী রোডম্যাপের ব্যাপারে উনি একটি স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারেন। নির্বাচন সম্পর্কিত রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা উনার কাছ থেকে আমরা এখনো আশা করি। রোডম্যাপ দেয়া হলে এখন যে বাজার পরিস্থিতি, সরবরাহ পরিস্থিতি এগুলোর একটু উন্নতি হতে পারত। কারণ অনিশ্চিত পথযাত্রায় অনেক সময় বিনিয়োগ-সরবরাহ বিঘিœত হয়, যেটা আমাদের জন্য এখন জরুরি।

তিনি আরো বলেন, সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একইসাথে চলতে পারে। যদি এ ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা দেয়া না হয়, তাহলে জনমনে এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতে থাকবে। যার কারণে অনেকে অনেক সময় অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ নিতে পারে। যারা কথিত স্বৈরাচারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে দেশে নানা অস্থিরতার সুযোগ সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছে। সেটি রুখতে প্রধান উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ দিবেন বলে দেশবাসীর প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement