২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

খুঁড়িয়ে চললেও কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না : অর্থ উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন : পিআইডি -


কিছু ব্যাংক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললেও কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু ব্যাংক ভালো অবস্থায় ফিরে আসছে এবং কিছু ব্যাংক খুঁড়িযে চলবে, তবে কোনোটিই বন্ধ হবে না। ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, ঋণখেলাপিদের ঘটিবাটি বিক্রি করেও যেন অর্থ আদায় করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। অর্থসচিব ড. মো: খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো: শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহমান খানকে সঙ্গে নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কিছু ব্যাংক ফিরে আসছে। ইসলামী ব্যাংক বিগেস্ট ব্যাংক। এটা ভালোর দিকে যাচ্ছে। তবে কিছু ব্যাংক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধ করবো না। অর্থনীতি এখন একটি খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেটের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে সরকারি কর্মকর্তা যারা আছেন তাদের বেতন-ভাতা আটকাবে না। এডিপিতে কোন কোন প্রকল্প অপ্রয়োজনীয় এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে আদালত আরও সত্রিনা করা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। হাইকোর্টে হওয়া রিট মামলা করার পদক্ষেপ নেয়া জানিয়েছেন তিনি। তবে অর্থঋণ হবে বলে একই সঙ্গে দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে খেলাপি ঋণ আদ্যয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হবে না। গভর্নরকে খেলাপি ঋণ আদায়ে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে গভর্নরকে হবে কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, খেলাপি ঋণ আদ্যয়ে অর্থঋণ আদালত আরও সত্রিনয় করা হবে। তবে গভর্নরকে ক্ষমতা দেয়া ঠিক। হবে না না। হাইকোর্টের রিট মামলা জন্য দুটি বেঞ্চ রয়েছে। এ জেনারেল ও গভর্নরের বিচারিক তিনি বলেন, নিষ্পত্তি করার বিষয়ে অ্যাটর্নি সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে, যাতে এই বেঞ্চগুলো আগামী তিন মাস শুধু রিট মামলাগুলো পরিচালনা করে। তিনি বলেন, ভালো ব্যবসায়ীদের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যারা ঋণ নিয়ে ঠিকমতো এবং ঠিকমতো কর দেন, ফেরত দেন তাদের কোনো সমস্যা হবে না। তারই ভীতু হয়ে আছে যারা বিগত সরকারের সময়ে নানাভাবে অনেক কিছু করেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান সচিব নাজমা মোবারক এ বিভাগের প্রসঙ্গে বলেন, যেসব দুর্বল ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, আমানতকারীদের টাকা তারা যাতে ফেরত দিতে পারে সে জন্য খুব দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে। দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি নিয়ে নিজের খারাপ লাগার কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা মানুষকে ধৈর্য ধরতে বলি। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে ধৈর্য ধরা কঠিন। এক হাজার টাকা নিয়ে বাজারে গেলে অল্প কিছু বাজার করা যায়। আমিও সেটা টের পাই, আপনারা সবাই টের পান। আমিও তো বাজারে যাই, আমারও দুঃখ লাগে। সাধারণ মানুষের জ্বালা আছে, তারা সেটা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেন। বীমা কোম্পানির বিষয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেকগুলো বীমা কোম্পানি আছে গ্রাহককে প্রিমিয়ামের টাকা দেয় না, টাকা আত্মসাৎ করে। জীবন বীমা, সাধারণ বীমার সমস্যা আছে। এগুলো আমরা জানি। কিন্তু সমস্যাগুলো এত ব্যাপক, চট করে সমাধান করা যাবে না। তিনি বলেন,মূল্যস্ফীতি আমাদের পীড়া দেয়। আরেকটা সমস্যা জ্বালানির দাম। আপনারাও জানেন আদানির (ভারতীয় কোম্পানি) একটা দাবি ছিল ৭০০ মিলিয়নের। আদানিকে ২০০ মিলিয়ন দেয়া হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের পাওনা বকেয়া ছিল, ওরা বলেছে সার দেয়া বন্ধ করে দেবে। বকেয়া পরিশোধ করার পর এখন সার দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ছিলবকেয়া পাওনা। এটিকে কমিয়ে এনেছি। এখন ৪০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পাওনা আছে। এক টাকাও রিজার্ভ থেকে খরচ। করা হয়নি। আগে রিজার্ভ ছিল ৪২ বিলিয়ন ডলার, হুট করে ১২ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। আর্টিফিসিয়ালি রিজার্ভ দেখানোর চেষ্টা করা হয়। এগুলো অকল্পনীয় বিষয়। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি একদিনে হয়নি। মূল্যস্ফীতি কমপ্লেক্স ফ্যাক্টর (জটিল বিষয়)। আগে ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়েছেন। তার পর পাবলিক সেক্টরে বড় বড় প্রজেক্টে খরচ করেছেন, ওটার আউটপুট তো আসে না। পদ্মা সেতুর যাত্রা শুরু হয়েছে, এটির সুফল দক্ষিণবঙ্গ পাঁচ বছর পর পাবে।

তিনি বলেন, আমাদের সাপ্লাই চেইনটা এখন ঠিক রাখতে হবে। আমরা এনবিআর থেকে পেঁয়াজের শুল্ক কমিয়ে দিয়েছি। আলুর শুল্ক কম। চিনির শুল্ক কমানো হয়েছে। কয়েক দিন আগে চালের শুল্কও কমানো হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা সার, চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, রোজার খেজুরের নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করেছি। এসবের জন্য এলসি মার্জিন জিরো (শূন্য) করে দিয়েছি। আমাদের সাফল্যের সূর্য উদয় হয়েছে এবং অর্জনও খুব একটা খারাপ নয়- দাবি করে সালেহউদ্দিন আরও বলেন, আমরা একটি পায়ের ছাপ রেখে যাব। আমরা এমন জায়গাগুলো দিয়ে হাঁটব যেখানে রাস্তা তৈরির দিকনির্দেশ করবে। আমরা কিছু সংস্কার করে যাব। পরে যারা আসবেন তারা বুঝবেন যে এখান থেকে রাস্তা তৈরি করতে হবে। ।

একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক এবং এডিবি আমাদের গ্যাস সেক্টরে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। ইতঃপূর্বে এমন আশ্বাস বা সহযোগিতার প্রতিশ্রতি বাংলাদেশ পায়নি। সুতরাং এটা সরকারের অন্যতম একটি সফলতা। এ দিকে, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কী পরিমাণ ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে অর্থ উপদেষ্টাকে এমন প্রশ্ন করা হলে তার উত্তর দেন অর্থ সচিব ড. মো: খায়েরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার যেসব পলিসিগুলো নিচ্ছে, এগুলোর ব্যাপারে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক ব্যাপক সমাধান দিয়েছে। আমাদের প্রকৃত যে প্ল্যান ছিল তার থেকে অনেক বেশি টাকা আমরা পাচ্ছি। অর্থসচিব বলেন, এরই মধ্যে এডিবির সঙ্গে ৬০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের নেগোসিয়েশন হয়ে গেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এই অর্থ আমরা পাব। বিশ্বব্যাংকের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ নেগোসিয়েশন হয়ে গেছে। এটিও ডিসেম্বরের মধ্যে পাব আমরা। তিনি বলেন, এই দুটি ঋণের প্রকৃত অঙ্ক ছিল ৩০০ ও ২৫০ মিলিয়ন ডলার। তার মানে দুটিই আমরা ডাবল করে পাচ্ছি। আমাদের অন্তর্র্বতীকালীন সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য আইএমএফরে কাছে অতিরিক্ত সহায়তা চেয়েছি। এর মধ্যে এই বছরে আমরা অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার চেয়েছি। আগামী ৪ ডিসেম্বরে আইএমএফ আসবে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত হবে। যে প্রগ্রেস দেখছি, আমরা আশাবাদী এটা আমরা পাব।


আরো সংবাদ



premium cement