অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ৪ বছরের কম হওয়া উচিত
আলজাজিরাকে ড. ইউনূস- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘হাসিনা নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ভাবতে পারেন; কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তিনি নিজেকে অনেক কিছু বলতে পারেন; কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এমনকি ভারতও তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছে। সুতরাং আশ্রয়দাতাও তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কিছু বলছে না।’
সম্প্রতি আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনের ফাঁকে আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। এ সাক্ষাৎকারটি নেন আলজাজিরার উপস্থাপক নিক ক্লার্ক। গত ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের সাক্ষাৎকারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে সৃষ্ট সঙ্কট, অন্তর্বর্তী সরকার, চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া, আগামী নির্বাচন, সংখ্যালঘু পরিস্থিতি, ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক কেমন হতে পারে এমন অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ড. ইউনূস।
ভারতে থেকে হাসিনার বিক্ষোভের ডাক প্রসঙ্গে ড. ইউনূস আরো বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন। এগুলো বাংলাদেশের জন্য উপকারী নয়। তাই ভারতের কাছে এসব বিষয়ে বলা হয়েছে। ভারত তাকে আশ্রয় দিচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু এমনটা হতে থাকলে ভারতের কাছে আবার অভিযোগ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ভারতের কাছে তার (হাসিনার) প্রত্যাবর্তন চাওয়া হবে।
আগামী নির্বাচনের সঠিক সময় কখন হবে এ বিষয়ে ড. ইউনূসের কোনো ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘না। আমার মাথায় এমন কিছু নেই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা : অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। স্থায়ী সরকার নই। নিয়মিত সরকার পাঁচ বছরের হয়। নতুন সংবিধানে সরকারের মেয়াদ সম্ভবত চার বছর হতে পারে। কারণ, মানুষ সরকারের মেয়াদ কম চায়। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হওয়া উচিত, এটা নিশ্চিত। এটা আরো কম হতে পারে। পুরোটা নির্ভর করছে মানুষ কী চায়, রাজনৈতিক দলগুলো কী চায় তার ওপরে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক দলগুলো চায় এটা (সংস্কার) ভুলে যাও, নির্বাচন দাও। তাহলে সেটি করা হবে।’ তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে চার বছর থাকছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি তা বলিনি যে চার বছর। আমি বলেছি, এটা সর্বোচ্চ মেয়াদ হতে পারে। তবে আমাদের উদ্দেশ্য তা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা।’
চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পুরো সরকারব্যবস্থার সংস্কার হবে। মানুষ নতুন কিছু চায়। সেখানে সব ক্ষেত্রে সংস্কার হবে। এমনকি সংবিধানও সংস্কার হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দুটো প্রক্রিয়া একসাথে চলছে- নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সব সংস্কার শেষ করার প্রস্তুতি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্প প্রসঙ্গ : আলজাজিরার উপস্থাপক নিক ক্লার্ক প্রশ্ন করেন, ‘শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল। বাইডেন প্রশাসন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?’
উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি বাংলাদেশে অবস্থান করলে এমনটা ভাবতে আপনাকে পাগলাটে হতে হবে। শিক্ষার্থীরা রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। যখন মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সবদিক থেকে তার (শেখ হাসিনা) বাসার দিকে যাচ্ছিল, তখন তার পরিবারই তাকে পালাতে বলেছে। কারণ, অন্যথায়, মব পুরো বাড়ি দখল করবে। এই পরিস্থিতিতে দেশ থেকে বের হতে সহায়তার জন্য তিনি সেনাবাহিনীকে ডেকেছিলেন। আর সেনাবাহিনী তাকে দেশ থেকে বের হতে, ভারতে চলে যেতে সহায়তা করেছিল। এভাবেই বিষয়টি ঘটেছিল। এটা ছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আর তাতে দেশের সব মানুষ যোগ দিয়েছিল।’
উপস্থাপক বলেন, ‘ঘটনা যখন ঘটল, তা কি আপনাকে অবাক করেছিল? কিংবা আপনি কি ধারণা করতে পেরেছিলেন যে, এমন কিছু ঘটবে?’
এ প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘প্রথমত আমি তখন দেশে ছিলাম না। তাই ঘণ্টায় ঘণ্টায় কী ঘটছিল, তা আমি জানতে পারছিলাম না। গণমাধ্যমে যা আসছিল, আমি শুধু তা-ই জানতে পারছিলাম। আমি চূড়ান্ত ফলাফল জানতে পেয়েছিলাম। কারণ আমাকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমাকে ফোন করে বলা হয়েছিল, আমরা আপনাকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানাই। এই পরিস্থিতিতে দেশে তিন দিন সরকার ছিল না। কারণ, আমি দেশে ছিলাম না। দেশে আসার পর আমি শপথ গ্রহণ করি। এভাবে সরকার গঠিত হয়। সুতরাং তখন এই অনিশ্চয়তা, অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন ঘটনা ঘটছিল। এ সবকিছু ঘটানোর জন্য কেউ কোথাও থেকে পরিকল্পনা করেনি। এ রকম কিছু ঘটেনি।’ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অতীতে কখনো কথা হয়নি। তাই ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের সাথে তার কোনো সমস্যা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মতো রিপাবলিকান পার্টিতে তার বন্ধু আছে।
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনার প্রশাসন সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়টি যেভাবে সামলাচ্ছে, তা নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আপনি কিভাবে বিষয়টি সামাল দেয়ার পরিকল্পনা করছেন?
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ের ওপর বারবার পূর্ণ মনোযোগ রাখছি। এ কারণে আমরা অব্যাহতভাবে মনে করিয়ে দিই যে দেখুন, আপনারা এ দেশের নাগরিক। সংবিধান আপনাকে আপনার অধিকার দিয়েছে, স্বাধীনতা দিয়েছে, নিজেকে প্রকাশ করার অধিকার দিয়েছে, নিজের ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। এগুলো সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো সংবিধানে যেসব অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, সেগুলো যাতে নাগরিকরা ভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা।’ প্রধান উপদেষ্টাকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর সহিংসতা বেড়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘সহিংসতা বাড়েনি। আমি বলব, সহিংসতা কমেছে। বিপ্লবের সময় সহিংসতা শুরু হয়েছিল। হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে তাদের ওপর সহিংসতা হয়নি। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের লোক ছিল। সুতরাং সহিংসতা হয়েছিল আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। তারা (গণ-অভ্যুত্থানকারীরা) আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। আর এসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল।’
তাহলে আপনি কিভাবে এ বিভক্তির সুরাহা করতে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘না, আমরা একে-অপরের বিরুদ্ধে বিভক্তি দেখতে পাই না। আমরা বলেছি, আমরা সবাই মিলে একটি পরিবার। আমাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে; কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আমরা একে-অপরের শত্রু। আমাদের আইন আছে, অধিকার আছে। আমাদের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের সব অধিকার নিশ্চিত করা।’ সাক্ষাৎকারের এই পর্যায়ে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রসঙ্গ আসে। সাক্ষাৎকারের উপস্থাপক বলেন, ‘আপনি নিশ্চয় জানেন, মার্কিন নির্বাচনের আগে ট্রাম্প তার মতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে, তার নিন্দা জানিয়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, এটা বেশির ভাগই অপপ্রচার (প্রোপাগান্ডা)। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অপপ্রচার। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এই অপপ্রচারের বেশির ভাগই ভারতীয় দিক থেকে আসা। সম্ভবত এই উত্তেজনা জিইয়ে রাখার জন্য এটা করা হয়ে থাকতে পারে; কিন্তু বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। হিন্দুদের সবচেয়ে বড় পূজা হাজার হাজার স্থানে উৎসবমুখর পরিবেশে কোনো অঘটন ছাড়াই উদযাপিত হয়েছে।
ট্রাম্পের সাথে উত্তেজনা থাকা ও তা মোকাবেলা করা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ট্রাম্পের সাথে অতীতে কখনো আমার আলাপ-আলোচনা হয়নি। তাই ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে আমার কোনো সমস্যা নেই। আর আপনি যদি রিপাবলিকান পার্টির কথা বলেন, তাহলে বলব, আমার ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে বন্ধু আছে, রিপাবলিকান পার্টিতে বন্ধু রয়েছে। আমাকে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল দিতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ (হাউজ) ভোট দিয়েছিল। এ বিষয়ে উভয় পার্টির সদস্যরা শতভাগ একমত হয়েছিলেন।
আমাকে এ মেডেল দেয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। রিপাবলিকান পার্টি উদ্বিগ্ন বা ডেমোক্র্যাটিক পার্টি উদ্বিগ্ন বা ট্রাম্প উদ্বিগ্ন এই হিসেবে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে হঠাৎ করে কোনো নেতিবাচক কিছুর উদ্ভব হবে এমন শঙ্কা আমি দেখছি না। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি এমন নয়, যা প্রেসিডেন্ট কে, তার ওপর নির্ভর করে। দেশটির এই নীতির একটি স্থিতিশীল অংশ আছে।’
ড. ইউনূসের এমন জবাবে তাকে আবার প্রশ্ন করা হয়, ‘তাহলে আপনি কি মনে করেন না যে, তিনি (ট্রাম্প) এই অঞ্চলের ব্যাপারে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারেন?’
উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি তেমনটা মনে করি না। একেবারেই না।’
হাসিনার আমলে দুর্নীতি প্রসঙ্গ : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে বাংলাদেশ বিভিন্ন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগও ছিল। তখনকার সমস্যাগুলো যেন এখন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অব্যবস্থাপনা, অপশাসন, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুক্ষিগত করা এবং আরো নানান অপকর্মে ভরে উঠেছিল বাংলাদেশের বিগত ১৬টি বছর। এই পরিস্থিতি থেকে দেশের উত্তরণে আমাদের বিশাল কাজ রয়েছে। প্রতিটি খাত ধরে ধরে আমাদের তা স্বচ্ছ করতে হচ্ছে। তবে এটা সাময়িক সময়ের জন্য করলে হবে না। পুরনো নীতিতে চলা প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে কাজ করছে তাতে জনগণ সরকারি কার্যালয়ে যেতে ভয় পায়, কেননা সেখানের কেউ টাকা চেয়ে আপনাকে নির্যাতন করতে পারে। যদিও এ বিষয়টি লজ্জার তবুও আমি এখানে তা উল্লেখ করলাম। সরকারকে জনগণের সহায়ক হতে হবে। এখন নাগরিকরা সরকারি অফিসগুলোকে নির্যাতনের চেম্বার হিসেবে দেখে। আপনি একবার সেখানে প্রবেশ করলে তাদের কেউ আপনার কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য আপনাকে চেপে ধরবে। গোটা ব্যবস্থাপনাতেই দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
জলবায়ু প্রসঙ্গ : নিক ক্লার্ক ড. ইউনূসের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে, আপনি বাকুতে বিশ্বের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে শীর্ষ কপ-২৯-এ যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশের নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে আপনি এই সম্মেলন থেকে কী আশা করছেন? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, প্রথমত জলবায়ুর নেতিবাচক দিক সম্পর্কে দেশের মানুষকে সচেতন করা। বিশ্বের অনেক দেশই এ বিষয়ে অসচেতন। জলবায়ুসঙ্কট একটি দেশের অস্তিত্বের সমস্য। বিশেষ করে দ্বীপ দেশগুলোর জন্য এই সঙ্কট মোকাবেলা আরো গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে চাই। জলবায়ুসঙ্কট নিয়ে সরব হওয়ার ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগতভাবে একটি প্রশ্ন উত্থাপনের চেষ্টা করি। তা হচ্ছে- জলবায়ুসঙ্কট মোকাবেলায় বিক্ষিপ্ত কোনো পরিকল্পনা কার্যকর হবে না। যেহেতু এটা বৈশ্বিক সমস্যা। সুতরাং আমি মনে করি, বিক্ষিপ্তভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ না করে এই সঙ্কট বৈশ্বিকভাবেই মোকাবলা করা উচিত। তবে প্রকল্পের গুরুত্বও আমি অস্বীকার করছি না। অবশ্যই এই সমস্যা মোকাবেলা বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের অব্যবস্থাপনা এড়িয়ে চলতে হবে। আপনি এক দিকে পরিবেশের ক্ষতি করছেন আবার অন্য দিকে সে ক্ষতি সাধনের জন কাজ করছেন; কিন্তু আপনি পরিবেশ ক্ষতির যে ধারা গঠিত হয়েছে তা বন্ধ করছেন না, তাহলে তো হবে না। এ জন্যই আমি বললাম, যখন গোটা পদ্ধতিই ক্ষতির কারণ তখন কেন আপনি কিছু কিছু করে সমাধান করতে থাকেন। সুতরাং আমি নিজে নিজে একটি প্রস্তাবনা কল্পনা করেছি। তা হচ্ছে- জলবায়ুসঙ্কট মোকাবেলার মৌলিক উপায় প্রকল্পের পরিবর্তে প্রকল্প দাঁড় করানো নয়। জলবায়ু আমাদের জীবনের সাথে জড়িত তাই আমি এ বিষয়টিকে এত গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই আমার কথা হচ্ছে- আমাদের জীবনযাত্রার অভ্যাসের পরিবর্তন না হলে পরিবেশের মৌলিক সমস্যাটি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
জলবায়ুর পরিস্থিতি এবং অতি বন্যায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান কমিয়ে আনতে সতর্কতা হিসেবে বাংলাদেশের আগাম ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, এটি মোকাবেলা করার জন্য সঙ্কট তৈরিতে সহায়ক সব বিষয় বন্ধ করতে হবে। নইলে এ সমস্য ক্রমাগতভাবে হতেই থাকবে। আমরা এসব সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি বলছি, পরিকল্পনা গ্রহণ সাময়িক বিষয়ের জন্য ঠিক আছে। তবে মৌলিক নীতির দিক থেকে সাময়িক সমাধান এটি ভুল জিনিস কেননা আপনাকে চূড়ান্ত সমাধানের জন্য সমস্যাযুক্ত গোটা পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমি বারবার আমাদের মূলে ফিরে যাওয়ার কথা বলছি। কেননা আমরা এই সমস্যার কোনো ইতি টানতে পারছি না, যা বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ববাসীর জন্যই খারাপ হবে।
ইউনূস বলেন, পানিসঙ্কট বাংলাদেশের পক্ষে একা সমাধান করা সম্ভব নয়। ভারত, নেপালের সহযোগিতা প্রয়োজন। উজানের দেশ ভারত থেকে এসব নদী বয়ে এসে পড়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ এসব নদীর শেষ প্রান্তে অবস্থান করছে। ভারতকে এ অঞ্চলে পানিসঙ্কটে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলে সব দেশই এ অঞ্চলে পানিসম্পদ ব্যবহার করে লাভবান হতে পারবে।
জলবায়ুসঙ্কট মোকাবেলা পুরোটাই হাজার হাজার কোটি টাকার বিষয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিপুল পরিমাণ এই অর্থের তহবিল কিভাবে সংগ্রহ করা হবে, তা জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, আমরা যা করতে চাই তার সাথে তহবিলের সম্পর্ক খুব সামান্য। আমাদের জন্য একটি উপায় হচ্ছে- সরকারি সার্ভিসের ক্ষেত্রে জনগণকে যেন সরকারি অফিসগুলোতে সশরীরে উপস্থিত হতে না হয়। এ ক্ষেত্রে সৌভাগ্যবশত ডিজিটালাইজেশন আমাদের সাহায্য করতে পারে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা সম্ভব। আর্থিক সেবাসহ অন্য আরো সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেয়া সম্ভব। তাই আমরা করব্যবস্থার মতো সিস্টেমকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করার চেষ্টা করছি। অন্য কোনো পদ্ধতিতে হয়তো কাউকে আপনাকে অর্থপ্রদানে বাধ্য করা হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা